পণ্যমূল্যের দাম অসহনীয় বা ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে না থাকলে তা কতটা উদ্বেগজনক বলার অপেক্ষা রাখে না। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়ে। এছাড়া, এ কথাও বলা দরকার, বিভিন্ন সময়েই কারসাজি, বাজার সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যসহ বিভিন্ন কারণে নিত্যপণ্যের মূল্য অসহনীয় পর্যায়ে চলে যাওয়ার অভিযোগ আছে। ফলে, এই বিষয়গুলো এড়ানো যাবে না। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির জন্য সারাদেশে জেলাগুলোয় বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। সোমবার সারাদেশে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। যে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর বাজার পরিস্থিতি ও সরবরাহ চেইন তদারকি ও পর্যালোচনার জন্য জেলা পর্যায়ে একটি 'বিশেষ টাস্কফোর্স' গঠন করা হলো। আমরা মনে করি, এটি অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক- যা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্ম তৎপরতা অব্যাহত রাখতে হবে, যেন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি নিশ্চিত হয়।
আমলে নেওয়া দরকার, এমন বিষয়ও জানা যাচ্ছে- বাঁধা আয়ের অনেক গৃহকর্তাই এখন একাধিক কাজ করে পণ্যমূল্যের ধাক্কা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছেন। শুধু তাই নয়, পরিবারের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া সন্তান, এমনকি গৃহবধূরাও কেউ কেউ ছোটখাটো ব্যবসা কিংবা কোনো কাজ করে সংসারের বাড়তি চাপ কাঁধে তুলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। ফলে, নিত্যপণ্যমূল্য সহনীয় রাখতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। স্মর্তব্য, বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হলে, স্বল্প আয়ের মানুষের দুর্ভোগ চরমে ওঠে এবং বিপর্যস্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। যার ফলে, পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে পণ্যের মূল্য নির্ধারণে সচেষ্ট হতে হবে। বাজারসংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নিত্যপণ্যের বাজারে প্রায় সব পণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ফলে, নাভিশ্বাস অবস্থা ক্রেতাদের। নাগালে নেই মাছ-মাংস, ডিম ও সবজি কোনোকিছুই। দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে বাজার চলছে- দামের এ ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এমনটিও আলোচনায় আসছে। এতে নাজেহাল অবস্থা সাধারণ মানুষের। বিশেষ করে যারা বাঁধা আয়ের মানুষ। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য।
উলেস্নখ্য, অনেক পণ্যই দামে রেকর্ড- সম্প্রতি এমন খবরও সামনে এসেছে। দেশে কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে কাঁচাবাজারে। সপ্তাহখানেক আগেও রাজধানীর বাজারে ১৮০-২২০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি হতো। সেখানে সোমবার খুচরা বাজারে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে মরিচ। এরকম নানা পণ্যের দাম বাড়ছে। সবজিসহ সব নিত্যপণ্য সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে বলেও খবরে উঠে এসেছে। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ব্যবসায়ীরা কখনো বন্যার কথা বলেন, কখনো খরার কথা বলেন, কখনো ডলারের কথা বলে বিভিন্ন অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। পণ্যের দাম কিছুটা বাড়তে পারে- তবে, যেভাবে বাড়ছে এভাবে বাড়তে পারে না। দাম এত বাড়ার পেছনে কোনো যৌক্তিক কারণ নেই বলেও তিনি মত দেন।
আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে যত দ্রম্নত সম্ভব বাজার সহনীয় করতে উদ্যোগ নিতে হবে। জানা যাচ্ছে, টাস্কফোর্স নিয়মিত বিভিন্ন বাজার, বৃহৎ আড়াত/ গোডাউন/কোল্ডস্টোরেজ ও সাপস্নাই চেইনের অন্য স্থানগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করবে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য যৌক্তিক পর্যায়ে রাখার বিষয়টি তদারকি করবে। এছাড়া, টাস্কফোর্স উৎপাদন, পাইকারি ও ভোক্তাপর্যায়ের মধ্যে যাতে দামের পার্থক্য নূ্যনতম থাকে তা নিশ্চিত করবে ও সংশ্লিষ্ট সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করবে। আমরা মনে করি, এই বিষয়গুলোর যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। কোনো চক্র বা অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন ইচ্ছামতো মূল্য বাড়াতে না পারে, ক্রেতাদের জিম্মি করতে না পারে- এ জন্য প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ ও তদারকির জন্য সারাদেশে জেলাগুলোয় বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে- ফলে, এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ হোক এমনটি কাম্য।