বাড়ছে ঢাকামুখী মানুষ সরকারের সদিচ্ছা জরুরি

প্রকাশ | ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যতই দিন যাচ্ছে বাড়ছে ঢাকামুখী মানুষের সংখ্যা। এর ফলে, এই নগরে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে। নাগরিক জীবন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, ১৯৭৪ সালে প্রথম আদমশুমারি অনুযায়ী ঢাকার জনসংখ্যা ছিল মাত্র ১৬ লাখ। ৫০ বছর পর এখন তা প্রায় দুই-আড়াই কোটিতে পরিণত হয়েছে। একদিকে, উন্নত জীবনের আশা, অন্যদিকে, নদীভাঙন, খরা, মঙ্গাসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রভাবে বসতি হারিয়ে প্রতিনিয়ত গ্রামীণ এলাকার মানুষ ঢাকা শহরে অভিবাসী হচ্ছে। ফলে, তৈরি হচ্ছে ঘিঞ্জি দালানকোঠা। ঢাকামুখী মানুষ মনে করেন, সুন্দর ও নিশ্চিত জীবনের হাতছানি রয়েছে এই নগরে। এই নগরের বৈরী পরিবেশ দেখে গ্রাম থেকে আসার মানুষের স্বপ্নভঙ্গ হয়। এ কথা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই, নগরে বাড়ছে ভিড়, শব্দদূষণ, যানজট, বায়ুদূষণ, মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণসহ নানাবিধ সমস্যা। বাসযোগ্য ও নিরাপদ আবাসস্থলের নিশ্চয়তার ব্যবস্থা সরকারের থাকলেও বিভিন্ন সময় সরকার সাধারণ মানুষের জন্য সাশ্রয়ী আবাসনের ব্যবস্থা যেমন করতে পারেনি; একইভাবে বস্তিবাসীর জন্যও দিতে পারেনি বসতির নিশ্চয়তা। এমন অবস্থায় গত সোমবার দেশে পালিত হয়েছে বিশ্ব বসতি দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ছিল 'তরুণদের সম্পৃক্ত করি, উন্নত নগর গড়ি'। বাসযোগ্য ও নিরাপদ আবাসস্থলের বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘ 'বিশ্ব বসতি দিবস' পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। পরে ১৯৮৬ সাল থেকে সারা বিশ্বে অক্টোবর মাসের প্রথম সোমবার বিশ্ব বসতি দিবস পালিত হয়ে আসছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঢাকার জনঘনত্বকে উপযুক্ত উপায়ে কাজে লাগিয়ে টেকসই ও বাসযোগ্য নগর গড়া সম্ভব- যার মাধ্যমে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত দিক দিয়ে লাভবান হতে পারে পুরো জাতি। নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আদিল মোহাম্মদ খানের মতে, 'মানুষ হরেক রকম চিন্তা থেকে রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে ঢুকছে। কেউ শিক্ষা অর্জনের জন্য একবার রাজধানীতে প্রবেশ করলে তিনি কিন্তু আর শহর ছেড়ে যাচ্ছেন না, গেলেও সেটি একেবারেই কম। আবার কাজের খোঁজে আসা ব্যক্তিরাও ধীরে ধীরে কর্মের সন্ধান মিললে পরিবার নিয়ে আসছেন। এভাবেই তারা নগরের সঙ্গে অভিযোজিত হতে চান এবং নগরে জনসংখ্যা বাড়ছে এভাবেই। তবে সে অনুযায়ী আমাদের শহরের ধারণ ক্ষমতা তো বাড়ছে না। তবে জনঘনত্বকে উপযুক্ত উপায়ে কাজে লাগিয়ে টেকসই ও বাসযোগ্য নগর গড়া সম্ভব। \হদেশের সবচেয়ে ব্যস্ত শহর ঢাকা; বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম শহর। এখানে দুই কোটি ৩২ লাখ মানুষ বাস করে। বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোর মধ্যে ঢাকা অন্যতম। ২০১৮ সালেও ঢাকা ছিল এই তালিকার ৭ নম্বরে। ছয় বছরের ব্যবধানে এখন ৪ নম্বরে চলে এসেছে। বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে, ঢাকায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ৩ শতাংশেরও বেশি। ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ঢাকামুখী হয়েছে। জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকার অবস্থান হবে বিশ্বের তৃতীয়। নগরায়ণ পরিকল্পনায় কেবল ঢাকাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সাশ্রয়ী আবাসন এখন সময়ের দাবি। এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে এগিয়ে আসতে হবে সরকারকে। সরকারের সদিচ্ছাই পারে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আবাসন সমস্যা সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে।