রাজধানী ঢাকার যানজট কতটা দুর্ভোগের কারণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এছাড়া, যানজট সংক্রান্ত নানা ধরনের উদ্বেগ বিভিন্ন সময়েই আলোচনায় এসেছে। সম্প্রতি জানা যাচ্ছে, রাজধানীতে যানজটের কারণে কর্মক্ষম মানুষকে দিনে ৪-৫ ঘণ্টা সময় সড়কে থাকতে হচ্ছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। একইসঙ্গে এই পরিস্থিতি উত্তরণে বাসের জন্য আলাদা লেন দাবি করেছে সংগঠনটি। তথ্য মতে, রোববার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান সমিতির মহাসচিব। তিনি বলেছেন, ঢাকা মহানগরীতে সিটি সার্ভিসের বাস পরিষেবা উন্নত করে বাস রুট রেশনালাইজেশন পদ্ধতিকে প্রাধিকার লেনের ব্যবস্থা করে নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক থেকে রিকশা, ইজিবাইকসহ ছোট ছোট যানবাহন তুলে দিয়ে বৈজ্ঞানিক পন্থায় ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ঢাকার যানজট সমস্যা দ্রম্নত সমাধান করা সম্ভব।
আমরা বলতে চাই, সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার যানজট পরিস্থিতি আমলে নিয়ে এই সংকট নিরসনে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। একইসঙ্গে যাত্রী কল্যাণ সমিতি আলাদা লেন দাবি করাসহ যে বিষয়গুলো তুলে ধরেছে তা আমলে নিতে হবে এবং পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ সমীচীন বলেই প্রতীয়মান হয়।
উলেস্নখ্য, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করায় ভয়াবহ যানজটে নাকাল রাজধানীবাসী এমন আলোচনাও আসছে। নগরীর এক প্রান্ত থেকে যে কোনো গন্তব্যে যেতে ৪-৫ ঘণ্টার বেশি সময় পেরিয়ে যাচ্ছে। ঢাকার যানজটে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে কর্মক্ষম মানুষের ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা। এছাড়া বুয়েটের তথ্য বলছে, প্রতি বছর এই যানজটে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকা। ফলে, আমরা মনে করি, সৃষ্ট পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই। একদিকে নগরজীবনে দুর্ভোগ, অন্যদিকে, ঠিক সময়ে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে যেতে না পারায় আর্থিক ক্ষতিসহ নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি হয়। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি।
ঢাকার গণপরিবহণ ব্যবস্থা অনেক আগেই ভেঙে পড়েছে এমন আলোচনা যেমন সামনে আসছে তেমনি, নগরীতে চলাচলকারী বাস-মিনিবাস রংচটা, বিবর্ণ, লক্কড়ঝক্কড়, পেছনের লাইট-ইন্ডিকেটর আর সামনের লুকিং গস্নাস নেই। গরমের দিনে ঘামে ভিজে এবং বর্ষাকালে বাসের ভেতর বৃষ্টিতে ভিজে যবুথবু অবস্থার বিষয়গুলোও সামনে আসছে। এছাড়া, বাসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই। ময়লা-আর্বজনা, ছারপোকা, তেলাপোকায় ভরপুর, মুড়ির টিনের মতো বাসে ওঠানামার ভয়াবহ যন্ত্রণা সহ্য করেও সঠিক সময়ে বাস পাওয়া যায় না। আরও উদ্বেগের বিষয় উঠে এসেছে তা হলো- নারী, শিশু, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক, অসুস্থদের জন্য এসব বাসে ওঠানামা এবং ভেতরে গাদাগাদি করে যাতায়াত করা চরম এক নারকীয় অবস্থা। তার ওপর অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য, চালক-শ্রমিকদের দুর্ব্যবহার তো রয়েছেই- এমন মন্তব্যও উঠে এসেছে। ফলে, আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে যত দ্রম্নত সম্ভব কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা অপরিহার্য। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব বলেছেন, ৪ লাখ প্যাডেলচালিত রিকশা, ৬ লাখ ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ইজিবাইক, ১ লাখ ৩৪ হাজার রাইডশেয়ারিংয়ের ছোট ছোট যানবাহন, ৩০ হাজার সিএনজিচালিত অটোরিকশার অবাধ যাতায়াতের কারণে নগরীর যানজট ও জনজট চরমভাবে বেড়ে চলেছে। সঙ্গত কারণেই এই বিষয়গুলো আমলে নেওয়া জরুরি বলেই আমরা মনে করি।
সর্বোপরি বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে রাজধানী ঢাকার যানজট পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই। ঢাকার যানজট সমস্যা সমাধানের জন্য ১২টি সুপারিশ তুলে ধরেছেন সমিতির মহাসচিব। যার মধ্যে, উন্নত সিটিবাসের ব্যবস্থা করা, বাস রুট রেশনালাইজেশনের মাধ্যমে বাসের জন্য প্রাধিকার লেইনের ব্যবস্থা করা; মোটর সাইকেলসহ ছোট ছোট যানবাহন নিবন্ধন জরুরিভিত্তিতে বন্ধ করা; প্রধান প্রধান সড়ক থেকে প্যাডেলচালিত রিকশা, ইজিবাইকসহ ধীরগতির যানবাহন চলাচল বন্ধ করাসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, সুপারিশগুলো বিবেচনায় নিতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। একইসঙ্গে সার্বিকভাবে রাজধানী ঢাকার যানজট মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। যানজটের দুর্ভোগ থেকে নগরবাসী মুক্তি পাবে- এই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।