উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল আর টানা ভারী বর্ষণে নালিতাবাড়ীসহ শেরপুরের কয়েকটি উপজেলা ও ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া-হালুয়াঘাটসহ কিছু এলাকা ব্যাপকভাবে পস্নাবিত হয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে, শেরপুরে পানিতে ডুবে অন্তত ৫ জন মারা গেছেন। এছাড়া, বন্যার পানিতে ভেসে এসেছে এক অজ্ঞাত লাশ। তলিয়ে গেছে উঠতি আমন ফসল ও সবজি ক্ষেত। ভেসে গেছে মাছের খামার। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো, দুই জেলায় পানিবন্দি হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ।
আমরা বলতে চাই, সাম্প্রতিক সময়ে নোয়াখালীসহ দেশের ১১ জেলার বন্যা পরিস্থিতির ভয়াবহতা দেশবাসী দেখেছে। আবার যখন নালিতাবাড়ীসহ শেরপুরের কয়েকটি উপজেলা ও ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া-হালুয়াঘাটসহ কিছু এলাকা ব্যাপকভাবে পস্নাবিত হয়ে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে; তখন সামগ্রিক বিষয় পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে দ্রম্নত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এক্ষেত্রে বলা দরকার, পানিবন্দি পরিস্থিতিতে মানুষ কতটা অসহায় হয় সেই দিকটি সামনে রেখে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে হবে। ক্ষয়ক্ষতি কমাতে চেষ্টা করতে হবে। পর্যাপ্ত ত্রাণ, বিশুদ্ধপানিসহ প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ও সামগ্রিক বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।
জানা যাচ্ছে, একদিকে দুই জেলায় পানিবন্দি হয়েছে প্রায় আড়াই লাখ মানুষ, অন্যদিকে, রান্না বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন পানিবন্দিরা। স্থানীয়রা বলছেন, ৮৮ সালের বন্যার চেয়েও এবারের পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। এছাড়া আরও আশঙ্কাজনক বিষয় হলো, আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপের প্রভাবে সারাদেশে ভারী বর্ষণ অব্যাহত আছে। এ পরিস্থিতি এক সপ্তাহ অব্যাহত থাকতে পারে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, টানা বর্ষণে দেশের বিভিন্ন নদনদীর পানি বাড়ছে। লঘুচাপের কারণে উত্তাল রয়েছে সাগর। জানা গেছে, চাঁদপুরে এক দিনে দেশের সর্বোচ্চ ও জেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এতে তলিয়ে গেছে জেলা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা।
আমরা বলতে চাই, সৃষ্ট পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী ও শ্রীবরদী উপজেলার কমপক্ষে ১৮টি ইউনিয়নের অধিকাংশ রাস্তাঘাট, বিস্তীর্ণ এলাকার ফসলের মাঠ তলিয়ে গেছে। অসংখ্য বাড়িঘর পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। শনিবার সকাল থেকে থেমে থেমে ফের বৃষ্টি হওয়ায় বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জানিয়েছেন অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যায় জেলার রোপা আমনের ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যেই ৭ হাজার ৬৯৬ হেক্টর জমির রোপা আমন ধান সম্পূর্ণ নিমজ্জিত, ৯ হাজার ৬৯৩ হেক্টর জমির রোপা আমন আংশিক নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া লক্ষণীয়, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, প্রতি বছরই অতি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে আকস্মিক বন্যা হলেও তা বেশি স্থায়ী হয়নি। কিন্তু এবারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। এবার পানির পরিমাণ আগের চেয়ে বেশি এবং তা বেশি স্থায়ী হওয়ায় মানুষের দুর্ভোগ বেশি হচ্ছে এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আগের তুলনায় অনেক বেশি। অন্যদিকে, ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট এবং ধোবাউড়া উপজেলায় ৮০টি গ্রাম পস্নাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন দেড় লাখ মানুষ। তলিয়ে গেছে মাছের খামার, কয়েক হাজার একর জমির ফসল। ধোবাউড়ায় নেতাই নদীর বাঁধ ভেঙে রাস্তাঘাট ডুবে গিয়ে বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, যে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি হয়েছে শেরপুর-ময়মনসিংহে, তা যথাযথভাবে আমলে নিতে হবে। যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়কে তৎপর হতে হবে। এ ছাড়া সমাজে যারা ধনাঢ্য তাদের এগিয়ে আসতে হবে। দলমতনির্বিশেষে সবাইকে বানভাসিদের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহসহ মানবিক তৎপরতা চালাতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সব ধরনের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।