বজ্রপাতে প্রাণহানি পরিকল্পিত উদ্যোগ জরুরি
প্রকাশ | ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
বজ্রপাতে প্রাণহানির ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। অতীতে যেসব অঞ্চলে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটেনি ওইসব অঞ্চলেও বজ্রপাত হচ্ছে এবং মানুষ মারা যাচ্ছে। দেশে চলতি বছরের প্রথম আট মাসে বজ্রপাতে ২৯৭ জনের মৃতু্য হয়েছে বলে জানিয়েছে সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম। এর মধ্যে নিড়ানি, ধান ও ঘাস কাটার মতো কাজে গিয়ে কৃষি ক্ষেতে মারা গেছে ১৫২ জন- যা মোট মৃতু্যর ৪৮ দশমিক ৮২ শতাংশ। এর বাইরে গরু আনতে গিয়ে ১৮ জন, মাছ ধরার সময় ৫২ জন, ঘরে থাকাকালীন ২৭ জন, ফাঁকা রাস্তায় চলাচলের সময় ১৫ জন, বাড়ির উঠানে খেলার সময় ১৪ জন শিশু-কিশোর, আম কুড়ানোর সময় ১১ জন, পাথর তোলার সময় ৩ জন এবং গাড়িতে থাকার সময় একজনের মৃতু্য হয়েছে। বজ্রপাত বিষয়ক সচেতনতামূলক সংগঠনটি শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, মৃতদের মধ্যে ২৪২ জন পুরুষ, ১১ জন শিশু আর ৫৫ জন নারী আছে। নারীদের মধ্যে ৬ জন কিশোরী আর পুরুষের মধ্যে ১৭ জন কিশোর রয়েছে। মাসওয়ারি হিসেবে ফেব্রম্নয়ারি মাসে মৃতু্য হয়েছে ১ জনের, মার্চে ৯ জন, এপ্রিলে ৩১ জন, মে মাসে ৯৬ জন, জুনে ৭৭ জন, জুলাইয়ে ১৯ জন, অগাস্টে ১৭ জন ও সেপ্টেম্বর মাসে ৪৭ জনের মৃতু্য হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৩ জন করে মারা গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ ও জয়পুরহাটে; ফেনীতে এই সংখ্যা ১২। আর কক্সবাজার ও গাইবান্ধায় মারা গেছে ১০ জন করে।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, বজ্রপাতের সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন ও উষ্ণায়নের সম্পর্ক রয়েছে। সাধারণত এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এ সময় অসহনীয় গরমে বজ্রপাতের আশঙ্কা ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। তাপমাত্রা বৃদ্ধি, বাতাসে সিসার পরিমাণ বাড়া, অধিক ধাতব পদার্থের ব্যবহার, মোবাইল ফোনের অতি ব্যবহার, মোবাইল ফোনের টাওয়ারের সংখ্যার আধিক্য, বনভূমি বা গ্রামাঞ্চলে উঁচু গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া, জলাভূমি ভরাট ও নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে বজ্রপাতের সংখ্যা বাড়ছে। দেখা যাচ্ছে, এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্তই কেবল নয়, অন্য মাসেও বজ্রপাতে মানুষ মারা যাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই সার্বিক এ পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি।
উলেস্নখ্য, জাপানের জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সিস্টেমের তথ্যানুযায়ী, বজ্রপাতে বেশি মানুষ মারা যায় বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, লালমনিরহাট, বগুড়া, ফরিদপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায়। মাঠে ফসলের ক্ষেতে কাজ করা বা মাছ ধরার সময় বেশি মানুষ মারা যাচ্ছে বজ্রপাতে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এর প্রভাব পড়ছে সর্বত্র। ফলে, দেশে বজ্রপাত বেড়েছে।
দেশে প্রতি বছর গড়ে ২ হাজার ৪০০ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। আগে তালগাছ বজ্রপাত ঠেকাত। এখন তালগাছ ও উঁচু গাছ নেই বললেই চলে। বিশ্বে বছরে বজ্রপাতে যত মানুষ মারা যাচ্ছে, তার অর্ধেকই বাংলাদেশে- এই তথ্য অত্যন্ত আশঙ্কাজনক।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্যই বাড়ছে বজ্রপাত। বাংলাদেশে বজ্রপাতকে জাতীয় দুর্যোগ ঘোষণা করা হয়েছে। বজ্রপাতপ্রবণ এলাকায় এক কোটি তালগাছ লাগিয়ে ঠেকানোর পরিকল্পনা নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। আমাদের মনে রাখতে হবে, দুর্যোগকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু যথাযথ উদ্যোগ নিলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। বজ্রপাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগ জরুরি।