পাঠক মত
মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষার ভূমিকা
প্রকাশ | ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
মুহাম্মাদ রিয়াদ উদ্দিন
মানবসম্পদ উন্নয়ন বলতে বোঝায়, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি শিশু বেড়ে ওঠে; তার সমাজ, দেশ, বিশ্বের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে নিজেকে গড়ে তোলে এবং এসবের কল্যাণে সে অবদান রাখতে পারে। মানবসম্পদ উন্নয়নের প্রসঙ্গে ২০১৬ সালে প্রকাশিত জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন রিপোর্টের ফরওয়ার্ডিং লিখতে গিয়ে ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন কর্মসূচির পরিচালক হেলেন ক্লার্ক বলেন : ঐঁসধহ ফবাবষড়ঢ়সবহঃ রং ধষষ ধনড়ঁঃ যঁসধহ ভৎববফড়স; ভৎববফড়স :ড় ৎবধষরুব :যব ভঁষষ ঢ়ড়ঃবহঃরধষ ড়ভ বাবৎু যঁসধহ ষরভব, হড়ৎ লঁংঃ ভড়ৎ ধ ভব,ি হড়ৎ ড়ভ সড়ংঃ, নঁঃ ধষষ ড়ভ ষরাবং রহ বাবৎু পড়ৎহবৎ ড়ভ :যব ড়িৎষফ- হড়ি ধহফ রহ ভঁঃঁৎব. পাকিস্তানের বিখ্যাত অর্থনীতিবিদ মাহবুল উল হকও এ মানবসম্পদ উন্নয়নের সুন্দর একটি সংজ্ঞা প্রদান করেন। তিনি বলেন- মানবসম্পদ উন্নয়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে মানবের স্বাধীনতা এবং সুযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং এগুলোর মাধ্যমে তাদের জীবন-মান উন্নত হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা বলতে আমরা মানবশিশুর শিক্ষার প্রথম পর্যায়টিকে বুঝি। সুনির্দিষ্টভাবে আমাদের দেশ ও সমকালের ভাষায়: শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাকে প্রাথমিক শিক্ষা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু শিক্ষার বিষয়টি বেশ বিস্তৃত অ্যারিস্টটলের মতে, সুস্থ দেহে সুস্থ মন তৈরি করাই হচ্ছে শিক্ষা। পেস্নটোর মতে: শিক্ষা হচ্ছে সেই শক্তি, যার দ্বারা সঠিক সময়ে আনন্দ ও বেদনা অনুভূতিবোধ জন্মায়। প্রাথমিক শিক্ষা কেন বা কিজন্য এ প্রসঙ্গে জ্যাক রুশো বলেন : ডব ধৎব নড়ৎহ বিধশ, বি হববফ ংঃৎবহমঃয; যবষঢ়ষবংং, বি হববফ ধরফ; ভড়ড়ষরংয, বি হববফ ৎবধংড়হ. অষষ :যধঃ বি ষধপশ ধঃ নরৎঃয, ধষষ :যধঃ বি হববফ যিবহ বি পড়সব :ড় সধহ্থং বংঃধঃব রং :যব মরভঃ ড়ভ বফঁপধঃরড়হ. জাতিসংঘ মানবসম্পদ উন্নয়নের যে রিপোর্ট প্রতি বছর প্রকাশ করে, তা মূলত ৩টি সূচকের জ্যামিতিক গড়। সূচক ৩টি হলো: ১। আয়ুষ্কালের সূচক ২। শিক্ষার সূচক এবং ৩। মাথাপিছু আয়ের সূচক। অর্থাৎ মানবসম্পদ উন্নয়নের দ্বিতীয় সূচকই শিক্ষা।
এ ছাড়া মানব উন্নয়ন সূচকের উপ-চলকসমূহ হলো: ১। সুস্বাস্থ্য ২। জ্ঞান অর্জনের অবস্থা ৩। মানবাধিকার ৪। মানুষের নিরাপত্তা ৫। সুন্দর জীবনমান ৬। আয়ের সমতা ৭। সম্মান এবং ৮। মনের জোর। এখানেও শিক্ষার সম্পর্ক নিবিড়। কেননা শিক্ষার সঙ্গে জ্ঞান, জীবনমান, আয় ও সম্মানের সম্পর্ক জড়িত। এ প্রসঙ্গে আমেরিকার জার্নাল অব পাবলিক হেলথ একটি গবেষণা প্রকাশ করে ঝড়পরড় বপড়হড়সরপ ংঃধঃঁং ধহফ যবধষঃয: ওহপড়সব ধহফ ড়পপঁঢ়ধঃরড়হ পড়হঃৎরনঁঃব :ড় ৎরংশ ভধপঃড়ৎং ভড়ৎ পধৎফরড়াধংপঁষধৎ ফরংবধংবং শিরোনামে। গবেষণাটিতে শিক্ষার সঙ্গে কর্ম ও আয়ের একটি সহ-সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। এখানে দেখানো হয় শিক্ষা ও আয়ের সঙ্গে ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে সুসম্পর্কের মান হলো যথাক্রমে- ৩২ ও . ২৩। আয় এবং পেশার সঙ্গে যথাক্রমে- ৪১ ও . ৩০ এবং শিক্ষা ও পেশার সাথে যথাক্রমে- ৬৭ ও . ৬৬। এ গবেষণাকর্ম, মানব সম্পদ উন্নয়নের সূচক ও উপ-চালকসমূহের ভিত্তিতে বলা যায় মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষা তথা শিক্ষার বিকল্প কোনো পথ নেই।
বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার প্রধান কিছু সমস্যা হলো: শিশু জরিপ যথাযথভাবে সম্পন্ন হয় না। ক্যাচমেন্ট এলাকার অভর্তিকৃত শিশুদের সম্পর্কে তথ্যের অভাব। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তত্ত্বাবধান আশানুরূপ নয়। ভৌত-অভৌত সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা কম। স্কুল কমিটির নাজেহাল অবস্থা। পরিবারের আর্থসামাজিক অবনতি। প্রশাসনের দুর্নীতি। স্কুলে শিক্ষক স্বল্পতা। সবার জন্য শিক্ষা, সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা এ ব্যাপারে যথাযথ প্রচারণা এবং জবাবদিহিতার অভাব, প্রভৃতি। এ জাতীয় সমস্যাগুলোর সমাধান হলে মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার (১ম থেকে ৫ম শ্রেণি) সেকেলেপনা এড়িয়ে আধুনিকায়নের মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান হতে পারে। এ বিষয়ে সেভ দ্য চিরড্রেনের রিড (জঊঅউ) প্রজেক্টের সহযোগিতায় বাফেডের গবেষণা সাময়িকী 'বাংলাদেশ শিক্ষা সাময়িকী'-এর ভিতর সমাধানের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পথ উঠে আসে। তাদের গবেষার আলোকে দেখা যায় যে, প্রাথমিক স্তরের বিদ্যালয়ে আধুনিক শিশু কর্নার প্রতিষ্ঠা, মাল্টিমিডিয়ায় চিত্র প্রদর্শনের মাধ্যমে পাঠদান, শিশুদের ট্যাবের মাধ্যমে শিক্ষামূলক বিচিত্র অ্যাপসের ব্যবহার, অর্থাৎ পাঠ রিলেটেড গেমিং অ্যাপস। এ ছাড়া কার্টুনের মাধ্যমে পড়ালেখার আধুনিকায়ন করে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার সমস্যা দূর করে মানবসম্পদ উন্নয়ে ভূমিকা রাখা যেতে পারে।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার গুণগতমান উন্নয়নে আরও কিছু বাধা হলো: ১। ধর্মান্ধতার দৌরাত্ম্য ২। সামন্ত সংস্কৃতির অচলায়তন ৩। পাশ্চাত্যের ভোগবাদী সংস্কৃতি এবং ৪। সন্ত্রাসিক রাজনীতির প্রভাব, প্রভৃতি। এসব আমাদের কাটিয়ে উঠতে হবে। তাহলে মানবসম্পদ উন্নয়নে প্রাথমিক শিক্ষার ভূমিকা রাখবে। আদতে মানবসম্পদ উন্নয়নে বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার ভূমিকা কী হবে, এ সমস্যার সমাধান হবে কী না, কিংবা এর সম্ভাবনা কতটুকু? বদরুদ্দীন উমরের একটি কথার মধ্যে এসব উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি তার শিক্ষা ও শিক্ষা আন্দোলন বইতে শিক্ষার যাবতীয় সমস্যা সমাধান ও সম্ভাবনার বিষয়ে তাৎপর্যময় একটি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন: অন্য অনেক মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার মতো শিক্ষা সমস্যার সমাধানও মূলত রাজনৈতিক শক্তির প্রগতিশীল চরিত্রের ওপর নির্ভরশীল। এই রাজনৈতিক শক্তি হতে পারে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত অথবা হতে পারে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর বাইরে স্বতন্ত্র সাংগঠনিক কাঠামো থেকে সৃষ্ট, যে শক্তি সরকারের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে তার থেকে অনেক দাবি আদায় করতে সক্ষম।
মুহাম্মাদ রিয়াদ উদ্দিন
শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়