পথশিশু দ্বারা সেসব শিশুকে প্রকাশ করে যাদের কাছে রাস্তাই তাদের স্বাভাবিক বাসস্থান, জীবিকা নির্বাহের উৎস হয়ে উঠেছে এবং দায়িত্বশীল কোনো প্রাপ্তবয়স্ক কর্তৃক সুরক্ষতি পথনির্দেশনা প্রাপ্ত ও পরিচালিত নয়। বর্তমান বাংলাদেশে প্রায় ৩৪ লাখের মতো পথশিশু রয়েছে। বাংলাদেশে রাস্তার শিশুদের জন্য নির্দিষ্ট কোনো বয়স নেই। পাঁচ বছর বয়সের কম বয়সি শিশুরাও রাস্তায় ঘুরে ঘুরে জিনিসপত্র বিক্রি করতে পারে, রাস্তায় ঘুরে বেড়ায় ও জীবনযাপন করে।
রাজধানীসহ সারাদেশে যে কোনো শহরে দেখা মেলে পথশিশুদের। তাদের কেউ ভিক্ষা করছে, ফুল বিক্রি করছে, পানি, হাওয়াই মিঠাই, চা-বিক্রি করতেও দেখা যায়। এদের মধ্যে কাউকে সারাদিন খাইনি বলে টাকা চাইতেও দেখা যায়। এই পথশিশুদের সম্পর্কে খোঁজ নিলে দেখা যাবে কারও বাবা বা মা নেই অথবা বাবা-মায়ের উভয়েই নেই। অর্থাৎ তাদের দায়িত্ব নেওয়ার মতো কেউ থাকে না। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের পরিবার থাকলেও তারা এতটাই মানবেতর জীবনযাপন করে যে একটি শিশুর ভরণপোষণ দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে তারা শিশু থেকে হয়ে যায় পথশিশু। যে বয়সে বই-খাতা নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা; যে বয়সে নিজের জীবনের ভরণপোষণের ভার অন্যের কাঁধে থাকার কথা; সে বয়সে বই-খাতা ছেড়ে খুঁজতে হচ্ছে জীবিকা অর্জনের পথ। রাস্তায় জীবন-যাপন করতে গিয়ে তারা পরিচিত হয় এক ভিন্ন জগতের সঙ্গে। যে জগতে আলো নেই কিন্তু আঁধার আছে। রাস্তায় বসবাসকারী ছেলেমেয়ে নানা অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে কিছু সংঘটিত অপরাধ গোষ্ঠীর সর্বনিম্ন মাত্রার সঙ্গে কাজ করে। বাংলাদেশের ঢাকায় সংঘটিত অপরাধ ব্যাপক। তারা অপরাধ গোষ্ঠীর নেতাদের মাধ্যমে শহরের বিভিন্ন বস্তি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে তাদের অপরাধ। ফলে তারা পথশিশু থেকে জড়িয়ে পড়ে নানা কিশোর অপরাধমূলক কর্মকান্ডে।
দ্য কোয়ালিটি স্টাডি অন চিল্ড্রেন লিভিং ইন স্ট্রিট সিচুয়েশানস ইন বাংলাদেশ ২০২৪, শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, 'পথশিশুরা তাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতা, খাদ্য, বাসস্থান, শিক্ষা, পুষ্টিকর খাবার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে তারা বেড়ে উঠছে। হারিয়ে যাচ্ছে তাদের সুন্দর শৈশব।'
সাধারণত শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিতে কাজ করে থাকে তাদের পরিবার। কিন্তু পথশিশুদের কোনো পরিবার নেই। এক্ষেত্রে পথশিশু সমস্যাটির টেকসই সমাধানের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন।
কবি সুকান্ত বলেছিলেন,
'তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।'
এই অঙ্গীকার কবি সুকান্তের একার নয়। রাষ্ট্রের প্রতিটি শিশুর কাছে এ আমাদের অঙ্গীকার। শিশুরা রাষ্ট্রের ভূখন্ডে বাস করে তারাও রাষ্ট্রের অংশ। রাষ্ট্রের সদিচ্ছা না থাকলে পথশিশু সমস্যাটির সুন্দর সমাধান সম্ভব নয়। শিশুদের জন্য সরকারি বিভিন্ন উদ্যোগ আছে। তবে তা টেকসই নয়। তাদের জন্য দরকার স্থায়ী পুনর্বাসন।
সাইমা আক্তার
কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় শাখা