অন্তর্র্বর্তী সরকার ডিমের দাম বেঁধে দিলেও গত দুই দিনের ব্যবধানে ডিমের দাম হালিতে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বাজারে ডিমের ডজন এখন ১৭০ টাকা থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। স্থানীয় বাজারগুলোয় ডিমের হালি সাধারণত ৬০ টাকা এবং ডজন ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন অভিযোগ করছে, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোয় এখন ডিমের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে, করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে বন্যার কারণে ডিমের সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে দাম বেড়েছে। বাজারে ডিমের দাম স্বাভাবিক রাখতে ১৫ সেপ্টেম্বর ডিমের উৎপাদন, পাইকারি ও খুচরা দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের আদেশে উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিম ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা দাম নির্ধারণ করা হয়। অথচ সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ টিসিবির প্রতিবেদনই বলছে, খুচরা বাজারে অনেকটাই বেশি দামে কিনতে হচ্ছে ডিম। দাম নিয়ে ক্রেতাদের ক্ষোভ-অসন্তোষ থাকলেও সেসব পাত্তাই যেন দিচ্ছেন না বিক্রেতারা। দাম নিয়ে প্রশ্ন তুললেই তারা বলছেন, 'নিলে নেন, না নিলে সামনে হাঁটেন। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা অফিসে বসে একটা দাম নির্ধারণ করে দিয়েছেন, যেখানে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। তাদের দাবি, দেশের বাজারে মুরগির খাদ্যের প্রচুর দাম। তাছাড়া অতিরিক্ত গরমের জন্য খামারে ডিমের উৎপাদনও কমে গেছে। এ কারণে বাজারে সরবরাহ কমেছে। আর সরবরাহ কমায় ডিমের দাম বেড়ে গেছে। তবে বাজারে আসা ভোক্তাদেরও পাল্টা প্রশ্ন, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি পিস ডিম আমদানি খরচসহ ৭ টাকা দাম পড়লেও বাংলাদেশে উৎপাদিত ডিম কেন প্রতি পিস ১৪/১৫ টাকা হবে? ডিমের দাম নিয়ে ভোক্তা মহলে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। কেউ কেউ প্রকাশ্যেই বর্তমান সরকারকে 'ব্যর্থ' বলেও সমালোচনা করছেন। তাদের দাবি, ডিমের বাজারে এখনো শক্ত একটা সিন্ডিকেট কাজ করছে। আওয়ামী লীগের পতন হলেও বর্তমান সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। তা না হলে সরকার দাম নির্ধারণের ১৫ দিন চলে গেলেও কেন এখনো ডিমের দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে না?
এ কথা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে মূলত ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দায়ী। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট যে ভাঙা সম্ভব হয়নি, এখন সেটা স্পষ্ট। আমরা আশা করেছিলাম, নতুন প্রশাসনের অধীন সিন্ডিকেট তাদের দৌরাত্ম্য বজায় রাখতে পারবে না। তাই দাম আরও কমে আসবে। কিন্তু বাজারের চিত্র প্রায় একই।
আমরা মনে করি, ডিমসহ অন্য দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানার জন্য সরকারের দায়িত্বশীল যেসব সংস্থা আছে, সব সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে সরকার পরিবর্তন হলেও বাজার সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয়। দেশের অসাধু ব্যবসায়ীদের লোভী মানসিকতার এখনো কোনো পরিবর্তন হয়নি। কীভাবে তারা সাধারণ জনগণের পকেট কাটবে, সে চিন্তায় ব্যস্ত থাকে। এদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে।