আবার পিটিয়ে হত্যা কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

প্রকাশ | ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
যে কোনো ধরনের অভিযোগে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটলে তা কতটা আশঙ্কাজনক, বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গত কারণেই এ ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়িতে ধর্ষণের অভিযোগে এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। হত্যার পর পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। তথ্য মতে, মঙ্গলবার দুপুরে খাগড়াছড়ি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের আবুল হাসনাত মুহাম্মদ সোহেল রানা নামের ওই শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে বলে খবরে উঠে এসেছে। লক্ষণীয় এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাহাড়ি ও বাঙালিরা খাগড়াছড়ি সদরে আবার মুখোমুখি অবস্থান নেন বলে জানা যায়। দু'পক্ষই পৃথক মিছিল বের করে। সদরের মহাজনপাড়ার কয়েকটি দোকানেও ভাঙচুর করা হয়। এছাড়া একটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বলা দরকার, এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর মোটর সাইকেল চুরির অভিযোগে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার পর পাহাড়ি-বাঙালি সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাত হয়েছিল। আমরা বলতে চাই, যে কেউ অপরাধ করলে তাকে আইনের হাতে তুলে দিতে হবে। কোনো অবস্থাতেই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। ফলে সামগ্রিক ঘটনা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের দ্রম্নত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। জেলা প্রশাসকও জানিয়েছেন, এক শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। ধর্ষণের অভিযোগে তাকে পিটুনি দেওয়া হয়। এরপর অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আমলে নেওয়া দরকার, সাম্প্রতিক সময়ে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটছেই। এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) তোফাজ্জল নামে এক যুবক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল। আমরা বলতে চাই, পিটিয়ে মানুষ হত্যার মতো ঘটনা কতটা ভয়ানক তা আমলে নেওয়া অপরিহার্য। কেউ অপরাধ করলে তার শাস্তি হবে আইন অনুযায়ী কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া হবে, হত্যার ঘটনা ঘটানো হবে- এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। উলেস্নখ্য, এর আগে আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ফলে কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেয় সেই বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এবারের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জানা যাচ্ছে যে, নিহত শিক্ষক সোহেল রানা বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন ও সেফটি বিভাগের চিফ ইনস্ট্রাক্টর ছিলেন। প্রতিষ্ঠানটি সদরের খেজুর বাগান এলাকায়। ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রম্নয়ারি এক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে সোহেল রানা কারাগারে ছিলেন। তিন মাস আগে তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পান। এরপর একই প্রতিষ্ঠানে তিনি যেন আবার যোগদান না করেন, সে জন্য শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছিল। এরপর মঙ্গলবার আবার তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর স্কুলটির শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করতে থাকে। একপর্যায়ে সোহেল রানাকে অধ্যক্ষের কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পরে অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকে ১০-১৫ জন পাহাড়ি তরুণ অভিযুক্ত শিক্ষক সোহেল রানাকে এলোপাতাড়ি মারতে থাকেন। এ সময় তাকে পুলিশসহ কয়েকজন রক্ষা করতে ব্যর্থ হন। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, যে কোনো অভিযোগই হোক না কেন, পিটিয়ে হত্যা কাম্য হতে পারে না। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। ফলে এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে এই আলোচনা বারবার উঠে এসেছে যে, মব জাস্টিস কখনোই ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে না, যা আমলে নিতে হবে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। যে কোনো অভিযোগ বা অপরাধের ক্ষেত্রে আইনগত পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক, কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না- এমনটি প্রত্যাশিত।