ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যত্থানের পর দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহে বড় ধরনের উলস্নম্ফন হয়েছে। প্রবাসী বাংলাদেশিরা সেপ্টেম্বরে পাঠিয়েছেন মোট ২৪০ কোটি বা ২ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ২৮ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসে কোনো একক মাসে এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ প্রবাসী আয়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গতকাল রেমিট্যান্স প্রবাহের এ তথ্য জানানো হয়।
অতীতে দেখা গেছে, সাধারণত ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতো উৎসবকে ঘিরে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহে উচ্চ প্রবৃদ্ধি হয়। কিন্তু এবারই প্রথম বড় কোনো উৎসব ছাড়া এত বেশি পরিমাণ অর্থ পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, দেশে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছে ২০২০ সালের জুলাইয়ে। করোনাভাইরাস-সৃষ্ট দুর্যোগের মধ্যে ওই সময় প্রবাসীরা রেকর্ড ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন। ওই বছর দেশে ঈদুল আজহার ছুটি ছিল ১ আগস্ট থেকে। তাই জুলাইয়ে এত পরিমাণ রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রে এ উৎসবটিই বড় ভূমিকা রাখে। এরপর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৫৩ কোটি ৮৬ লাখ ডলার রেমিট্যান্স এসেছে চলতি বছরের জুনে। ওই মাসের মাঝামাঝিতেও ছিল ঈদুল আজহা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর দেশের ব্যাংক খাতের ক্ষত বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। বেশকিছু ব্যাংক গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী আমানতের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর তাই ১১টি বেসরকারি ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে প্রবাসীরা আতঙ্কিত হয়ে ব্যাংকবিমুখ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রেমিট্যান্স প্রবাহের চিত্র বলছে প্রবাসীরা সে পথে হাঁটেননি। বরং আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় তারা বেশি আন্তরিকতা দিয়ে বৈধ পথে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহী হয়েছেন।
রেমিট্যান্সের যে প্রবৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, সেটি নতুন বাংলাদেশের সূচনা। প্রবাসীরা দেশের গণ-অভু্যত্থানকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করছেন বাংলাদেশ এখন আমার, এ দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে। প্রবাসীরা মূলত দেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের উৎসবে শামিল হচ্ছেন।
প্রবাসীদের এ উৎসাহ ধরে রাখতে হলে সরকারকে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। দেশ যদি সঠিক পথে পরিচালিত হয়, তাহলে প্রবাসীরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আরও বেশি অনুপ্রাণিত হবেন। দেশ আবারো বিপথে গেলে প্রবাসীরা হতাশ হবেন। অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার বিমানবন্দরে প্রবাসীদের জন্য সেবার মান বাড়ানোর প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন। প্রবাসীরা যদি তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু পান, তাহলে দেশের রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। বাকি সময়েও এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা গেলে রেমিট্যান্সে নতুন রেকর্ড হবে। অন্যদিকে দেশের রিজার্ভ সংকটও কেটে যাবে। দেশও মুক্ত হবে বড় ধরনের অর্থনৈতিক ঝুঁকি থেকে।