ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততায় ভাটা বাড়াতে সঠিক পরিকল্পনা জরুরি
প্রকাশ | ০২ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত (সিএআর) অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বনিম্নে রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে- ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনের এসব দেশের সিএআর চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তৈরি করা সিএআরের এই চিত্রের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে বাংলাদেশে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত আর্থিক পরিস্থিতি। একটি ব্যাংকের সিএআর যত বেশি হয়, সেই ব্যাংকের আর্থিক স্বাস্থ্য তত ভালো বলে মনে করা হয়। এটা ব্যাংক খাত সংক্রান্ত সাধারণ অর্থনীতির হিসাব।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ার সব দেশেই ব্যাংকগুলোর সিএআর কয়েক বছর ধরে বাড়ছিল। তবে ব্যতিক্রম হয়েছে গত বছর, যখন ভারত, পাকিস্তন ও শ্রীলঙ্কার ব্যাংকগুলোর সিএআর কমেছে। গত বছরে অবশ্য বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর সিএআর বেড়েছে। তবে গত বছর ভালো করলেও বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর সিএআর পরিস্থিতি সার্বিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে খারাপ রয়েছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মূলধন পর্যাপ্ততার অনুপাত ছিল ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ। তবে ওই সময়ে পাকিস্তানের ব্যাংকগুলোর এই অনুপাত ছিল ১৬ দশমিক ৬ শতাংশ, ভারতের ১৬ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কার ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর মূলধন পরিস্থিতি কয়েক বছর ধরেই দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বনিম্ন। সম্প্রতি দেশের ১০টি ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগে দেউলিয়া হওয়ার পথে চলে গিয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ইতিবাচক উদ্যোগে তা রক্ষা পেয়েছে।
তবে এটা সত্য, ২০১৭ সাল থেকে আমাদের দেশের ব্যাংকগুলোর সিএআর কখনো বাড়ছে, আবার কখনো কমছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর সিএআর ছিল ১০ দশমিক ৮ শতাংশ। পরের বছর এই অনুপাত কমে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ হলেও ২০১৯ সালে তা আবার বেড়ে হয় ১১ দশমিক ৬ শতাংশ। ২০২১ সালে এটি দাঁড়ায় ১১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশে- যা আবার ২০২২ সালে বেড়ে হয় ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ।
ব্যাংকিং খাতের বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশে খেলাপি ঋণ বাড়ছে। তবে সে অনুপাতে মূলধন বাড়ছে না। আবার ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদও বাড়ছে। অনেক ব্যাংক নানা অভ্যন্তরীণ কারণে প্রকৃত আর্থিক চিত্র প্রকাশও করছে না। ফলে, দেশের ব্যাংকগুলোর প্রকৃত মূলধন ভিত্তি শক্তিশালী না হয়ে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। যা দেশের অর্থনীতির জন্য বিপজ্জনক। বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, সরকারি খাতের বেশির ভাগ ও বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি প্রকট। এই কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় সবার নিচে অবস্থান করছে দেশের ব্যাংকগুলোর সিএআর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চে দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩১ হাজার ৬২০ কোটি টাকা। এই পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ১৬ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ বেশি। ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ খেলাপি ঋণ। এর বাইরে পুনঃতফসিল করা ঋণের স্থিতি ২ লাখ ১২ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। পাশাপাশি অবলোপন করা ঋণের পরিমাণ ৬৫ হাজার ৩২১ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯ হাজার ৭২১ কোটি টাকায়।
আমরা মনে করি, দেশের ব্যাংক খাত ঘুরে দাঁড়াতে হলে খেলাপি ঋণ যেমন কমাতে হবে, একইভাবে ব্যাংকের মূলধন বাড়াতে হবে। সে জন্য জনআস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে- যাতে মানুষ ব্যাংকবিমুখ না হয়। তারা যাতে ব্যাংকে লগ্নি করে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় বাংককে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।