যে কোনো কারণে যদি শ্রমিক বিক্ষোভ, কলকারখানা বন্ধ কিংবা শ্রমিক অসন্তোষসহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে থাকে, যদি উৎপাদন ব্যাহত হয়, তবে তা উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে- যা আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, রাজধানীর অদূরে সাভারের শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আর এ সময় গুলিতে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন অন্তত ৫ জন। অন্যদিকে, সংঘর্ষের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যাচ্ছে। সোমবার দুপুরে আশুলিয়ার টঙ্গিবাড়ী এলাকায় মন্ডল গ্রম্নপের কারখানার সামনে এ ঘটনা ঘটে। এটাও খবরে উঠে এসেছে যে, শ্রমিক নিহতের ঘটনায় শিল্পাঞ্চলে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
আমরা মনে করি, সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হবে। শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনা যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনিভাবে সামগ্রিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। উলেস্নখ্য, শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা জানিয়েছেন, মন্ডল নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানা খুলে দেওয়া, দুজন শ্রমিক নিখোঁজের অভিযোগ ও শ্রমিকদের মারধরসহ নানা বিষয় নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, শ্রমিক ও মালিকপক্ষ আলোচনায় বসে। একপর্যায়ে শ্রমিকরা বাইরে বের হয়ে আসেন। এ সময় পাশের ন্যাচারাল ডেনিম ও ন্যাচারাল ইন্ডিগো কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে মন্ডলের শ্রমিকদের আটকে রেখে মারধর করা হচ্ছে- এমন কথা ছড়িয়ে পড়ে। পরে এ দুটি কারখানার শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে মন্ডল নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানার সামনে বিক্ষোভ করেন। এ সময় আশপাশের কিছু কারখানার শ্রমিকরাও তাদের সঙ্গে যোগ দেন। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ধাওয়া দেন। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। শিল্প খাতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা কোনোভাবেই সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। এটাও বলা দরকার, এর আগে শিল্প খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, বেশ কিছু দিন ধরেই গাজীপুর ও আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার শিল্পকারখানাগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষকে ঘিরে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সড়ক অবরোধ, শিল্পকারখানা ভাঙচুর, এমনকি অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছিল। অন্যদিকে, কারখানায় শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলমান থাকায় বিপুলসংখ্যক বিদেশি ক্রয়াদেশ (অর্ডার) বাতিল হওয়ারও উপক্রম হয়েছিল। ফলে, সর্বাত্মক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ সমীচীন বলেই প্রতীয়মান হয়।
আমলে নেওয়া দরকার, বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক বলছেন, গত কয়েকদিনে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠেছিল। কিন্তু একজন শ্রমিক নিহত ও একাধিক শ্রমিকের আহতের ঘটনা কাম্য নয়। যেখানে সমস্যা সমাধান হয়ে যাচ্ছিল, সেখানে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন মন্ডল নিটওয়্যারে কেন এ ধরনের ঘটনা ঘটল। এছাড়া দ্রম্নত এ সমস্যা সমাধানে উদ্যোগ নিতে হবে, না হলে এ শিল্প খাতটি গভীর সংকটের মুখে পড়বে বলেও তিনি জানান। আমরা মনে করি, সার্বিক বিষয় খতিয়ে দেখে যত দ্রম্নত সম্ভব যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
সর্বোপরি বলতে চাই, পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংকট নিরসনে উদ্যোগ নিন। সাম্প্রতিক সময়ে বারবার শ্রমিক আন্দোলন, অসন্তোষসহ নানা ধরনের ঘটনা ঘটেছে- যা এড়ানো যাবে না। এছাড়া খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে- মালিকপক্ষ বলছে যে, অন্তর্বর্তী সরকার নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। যা সংশ্লিষ্টদের আমলে নিতে হবে। যত দ্রম্নত সম্ভব সংকট নিরসন করতে হবে। মালিকরা দাবি করছেন, অনেক ক্রেতা ক্রয়াদেশ বাতিল করছেন। অনেক ক্রেতার কাছে সময়মতো পণ্য পৌঁছাতে এয়ার কার্গোতে পাঠাতে হচ্ছে, যেখানে হাজার হাজার ডলার মাশুল গুনতে হচ্ছে। সঙ্গত কারণেই এই বিষয়গুলোও আমলে নিতে হবে। সংকট নিরসনসহ যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি রোধে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।