সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা, দারিদ্র্য ও সচেতনার অভাবে বাল্যবিয়ে কমানো যাচ্ছে না বরং প্রতি বছরই বাড়ছে। সরকারি নানা পদক্ষেপ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগও কাজে আসছে না। আর্থিক সংকট, ইভটিজিংয়ের কারণে মূলত নিম্নবিত্ত মানুষ কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছেন। এছাড়াও বিচার ব্যবস্থার সংকটের কারণও এর জন্য দায়ী। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন স্কুলছাত্রী উত্ত্যক্তের শিকার হলে বখাটেদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে সময় লাগছে। ততক্ষণাৎ তেমন আইনি পদক্ষেপ না থাকায় উপরন্তু হুমকির শিকার হচ্ছেন অভিভাবকরা। বাল্যবিয়ের হার মূলত অঞ্চল ভিত্তিকও হয়ে থাকে। বর্তমানে দেশে বাল্যবিয়ের শিকার ৯% কিশোরী।
স্কুল খোলার পর দেখা গেল, অনেক ছাত্রী স্কুলে আসছে না। এর মধ্যে সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণিপড়ুয়া ১৯ জন ছাত্রীর স্কুলে অনুপস্থিত থাকার তালিকা করা হলে দেখা যায়, কোটা আন্দোলনে স্কুল বন্ধ থাকাসহ গত দুই মাসে ১৯ জন ছাত্রীর বাল্যবিয়ে হয়ে গেছে। এমন ঘটনা ঘটেছে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলা পৌর সদরের চাঁচকৈড় শাহীদা কাশেম পৌর বালিকা বিদ্যালয়ে। এই চিত্র নতুন নয়।
অভিভাবকরা অসচেতন হওয়ায় অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন একের পর এক। আমরা মনে করি, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই অভিভাবকদের নিয়ে সচেতনতামূলক সমাবেশ, বিচার ব্যবস্থার সংকট নিরসন, সামাজিক সচেতনতা, আর্থিক অবস্থার উন্নয়ন এবং শিক্ষার হার বাড়ানো গেলেই কেবল বাল্যবিয়ে কমিয়ে আনা সম্ভব। মনে রাখতে হবে, সামাজিক, অর্থনৈতিক সমস্যা, আইনের বিধি নিষেধ, দেশের সাময়িক অস্থিরতা যখন বেড়ে যায় তখনি এই ঘটনাগুলো বেশি সংঘটিত হয়। দেশের সচেতন নাগরিক সমাজ, আলেম-সমাজ সব শ্রেণিপেশার মানুষ এগিয়ে এলে অনেকটাই কমবে বাল্যবিয়ের হার। বাল্যবিয়ে বেড়ে যাওয়া এটা সমাজ তথা রাষ্ট্রের জন্য এক অশুভ বার্তা।
দুঃখজনকভাবে লক্ষ্য করা যায়, বাজেটে কন্যাশিশুদের সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ এবং কিশোরী তথা কন্যাশিশুদের বিদ্যালয়ে ফিরে যাওয়া নিশ্চিত করার জন্য কোনো পৃথক বা সুনির্দিষ্ট কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি- যা রাখা জরুরি ছিল। মনে রাখতে হবে বাল্যবিয়ে একটি সামাজিক সমস্যা। এর ফলে, দেশের কন্যাশিশুদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে তলিয়ে যায়। তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে গিয়ে মৃতু্য ডেকে আনে। অনেকেই অত্যাচার নির্যাতনে মারায় কিংবা আত্মহননের পথ বেছে নেয়। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, স্থানীয় প্রশাসন ও কাজীরাও আগে বাল্যবিয়ে বন্ধে জোরালো ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু এখন সেটা কমে এসেছে। বাল্যবিয়ে রোধে সরকারকে ব্যাপকভাবে প্রচার চালাতে হবে। ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে হবে। না হলে বাল্যবিয়ে বেড়ে গেলে জাতীয় উন্নয়নে এর বড় প্রভাব পড়বে। সময় থাকতে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়াই সমীচীন।