বেহাত অস্ত্র কিশোর গ্যাংয়ের হাতে কঠোর পদক্ষেপ নিন
প্রকাশ | ০১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি থেকে বেহাত হওয়া অস্ত্র এখন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের হাতে। এসব অস্ত্র ব্যবহার করে যে কোনো সময় বড় ধরনের নাশকতা, ডাকাতি, খুন ও অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা করছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা। রাজধানীর থানাগুলো থেকে বেহাত হওয়া এক হাজারের বেশি আগ্নেয়াস্ত্র দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে বলেও তথ্য পাওয়া গেছে। এসব অস্ত্রের বেশিরভাগই হাতবদল হয়ে পেশাদার বা দাগি অপরাধীদের কাছে চলে যাচ্ছে। এর মধ্যে কিছু অস্ত্র সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রির চেষ্টা করা হয়েছে বলেও এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যত্থান চলাকালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেহাত হওয়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে গত ৪ সেপ্টেম্বর থেকে দেশব্যাপী একযোগে যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে। অভিযানপরবর্তী ২০ দিনে মাত্র ২১৬টি আগ্নেয়ান্ত্র উদ্ধার হয়েছে। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯২ জনকে। অথচ বিভিন্ন থানা ও ফাঁড়ি থেকে অস্ত্র হারিয়েছে ৫ হাজার ৮১৮টি। এর মধ্যে ৩ হাজার ৯৩৩টি অস্ত্র ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উদ্ধার ও স্বেচ্ছায় থানায় জমা দেওয়া হয়। ৪ সেপ্টেম্বরের পর রাজধানীর রামপুরা, বনশ্রী, লালবাগ, মোহাম্মদপুর থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তবে বেহাত অস্ত্রের বেশিরভাগই এখনো উদ্ধারের বাইরেই থেকে গেছে।
পুলিশের ভাষ্য মতে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লুণ্ঠিত অস্ত্রের বড় অংশ এখন কিশোর গ্যাংয়ের হাতে। এসব অস্ত্র রাখা বা হাতবদল করে বিক্রির চেষ্টার সঙ্গে জড়িত যারা পুলিশ,র্ যাব কিংবা যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে, তাদের বয়স ১৬ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তারা সম্পূর্ণ অসৎ উদ্দেশ্যে এসব অস্ত্র নিজেদের কাছে রেখেছে। ভবিষ্যতে এসব অস্ত্র ব্যবহার করে ডাকাতি, খুনসহ বড় ধরনের অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে।
খোয়া যাওয়া অস্ত্র কিশোর গ্যাংয়ের হাতে থাকাটা বড় হুমকির কারণ উলেস্নখ করেন অপরাধ বিশ্লেষকরা। আমার বক্তব্য হলো, কিশোর গ্যাংয়ের কাছে থাকুক বা যার কাছেই থাকুক লুণ্ঠিত অস্ত্র উদ্ধারের বন্দোবস্ত করতেই হবে। কারণ এসব অস্ত্র তারা ভালো উদ্দেশ্যে নিজেদের কাছে রাখেনি। এসব অস্ত্র উদ্ধার না করা গেলে আইনশৃঙ্খলার জন্য বড় হুমকি হিসেবে দেখা দেবে।
এটা সত্য, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, জমি দখল, নারীদের উত্ত্যক্ত করা দেশের যে কোনো এলাকায় এ ধরনের অপরাধ ঘটলে 'কিশোর গ্যাং'-এর নাম আসে। অথচ এক যুগ আগেও পাড়া-মহলস্নাকেন্দ্রিক অপরাধের ঘটনায় নাম আসত কোনো না কোনো সন্ত্রাসী বাহিনীর। সে জায়গা 'দখল' করেছে কথিত কিশোর গ্যাং। যদিও এসব বাহিনীর সদস্যদের বেশিরভাগই ১৮ বছরের বেশি বয়সি।
এর আগে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করা সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কথিত কিশোর গ্যাংদের তৎপরতা নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন জমা দিয়েছিল। তাতে বলা হয়েছে, সারাদেশে ২৩৭টির মতো 'কিশোর গ্যাং' রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকা শহরে, ১২৭টি। এসব গ্যাংয়ের (অপরাধী দল) সদস্য ১ হাজার ৩৮২ জন। ঢাকার পর চট্টগ্রামে রয়েছে ৫৭টি। এসব দলের সঙ্গে জড়িত ৩১৬ জন। সরকার পরিবর্তনের পর এরা সবাই চুপ হয়ে আছে এটা বলা যাবে না। কিশোর গ্যাং নির্মূলে পুলিশের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, অভিভাবকসহ সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। কারণ এরা সমাজের বিষফোঁড়া।