সকাল ৭টা। গ্রামের মোড়ের চায়ের দোকানটায় আস্তে আস্তে বাড়ছে মানুষের ভিড়। প্রাথমিকে পড়ুয়া ছাত্র থেকে শুরু করে বুড়ো চাচারও আনাগোনা। এমনকি, সকাল সকাল পড়ার টেবিল উপেক্ষা করে আসা ছাত্রদের বাবারাও আছে সেখানে, একইসঙ্গে। কেন? কারণ, ততক্ষণে চায়ের দোকানের বড় মনিটরওয়ালা টিভিগুলো চালু হয়ে গেছে। যা নেশার মতো টানছে সবাইকে। তাতে কোনোটাতে চলছে নিম্নমানের বাংলা সিনেমা, নাটক কিংবা কোনোটাতে চলছে আঞ্চলিক সঙ, যাত্রা ইত্যাদি। শিক্ষামূলক, গঠনমূলক কোনো অনুষ্ঠান বা সকালের খবর খুব কমই চোখে পড়বে। যেই ছাত্রের থাকার কথা ছিল পড়ার টেবিলে সে কেন সকাল সকাল চায়ের দোকানের টিভির সামনে? যেখানে দর্শক একজন বৃদ্ধ থেকে শুরু করে ১০ বছরের ছেলেটাও সেই ধরনের অনুষ্ঠান থেকে সাধারণত কি শিখা যায় তা একজন সুস্থ মস্তিষ্কের, সুস্থ সংস্কৃতিমনা মানুষের কাছে বোধগম্য না হওয়ারই কথা। দুঃখজনক হলেও সত্যি, এ দৃশ্য একদিনের নয়, প্রতিদিনের! এমনকি একজন ছাত্রের নয়, বেশিরভাগ ছাত্রের নিত্যনৈমিত্তিক আচরণ! সকাল থেকে রাত অবধি তারা সারাক্ষণ ডিজিটাল বিনোদন প্রযুক্তিতে মত্ত থাকে। যার মধ্যে টিভিতে বা মোবাইলে কার্টুন দেখা এবং গেম খেলা অন্যতম। এখন প্রশ্ন হতে পারে- গ্রামের বেশিরভাগ পরিবার তেমন সচ্ছল না হওয়া সত্ত্বেও তাদের বাচ্চাদের হাতে স্মার্ট ফোন থাকে কীভাবে? বাস্তবতা হলো থাকে। যদি ব্যক্তিগতভাবে না থাকে তবে গ্রম্নপের থাকে। সবাই মিলে চাঁদা তুলে মোবাইল কিনে এবং সবাই মিলেই সেটা ব্যবহার করে। গ্রম্নপ ধরে একসঙ্গে মোবাইল গেম খেলে আবার এই গেম খেলা নিয়ে বাজিও ধরে টাকা বা মূল্যবান জিনিস জিতে নেয়। রাস্তার ধারে কিংবা বড় গাছের নিচে বসে বিশেষ করে যেখানে পাসওয়ার্ডবিহীন মুক্ত নেটওয়ার্কের প্রাপ্যতা মিলে সেখানেই দল বেঁধে চলে মোবাইল গেম খেলা থেকে শুরু করে নানারকম ডিজিটাল বিনোদন গ্রহণ। এই মোবাইল নেশাই মূলত কেড়ে নিয়েছে তাদের স্কুলপ্রীতি, পড়াশুনার আগ্রহ এমনকি স্বাভাবিক জীবন যাত্রা। সারাদিন মোবাইল ইন্টারনেটে যুক্ত থাকায় অপ্রত্যাশিতভাবেই তাদের পরিচিতি ঘটে নানারকম রোমাঞ্চিত ছবি, ভিডিও এমনকি লোভনীয় সব ওয়েবসাইটের। ভীষণরকম ভয়ংকর তথ্য হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া শিশুর ফোনেও পাওয়া যায় ওইসব ওয়েবসাইটে ভিজিট করার রেকর্ড! অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। আচ্ছা, পঞ্চম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীর কতই বা বয়স? হঁ্যা, বয়সের গাণিতিক মান হিসেবে একেবারেই কম, এগারো কিংবা সর্বোচ্চ বারো। কিন্তু গ্রামীণ পরিবেশে এই বয়সে সে শিখে ফেলে অনেক কিছু। এত গেল পঞ্চম শ্রেণির খবর। ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম এদের কি অবস্থা? উত্তর হচ্ছে, অবস্থা দুঃখজনক। একটু বেশিই দুঃখজনক। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুরাও একজন আরেকজনকে প্রেম পত্র লিখে। নিশ্চিতভাবেই তারা প্রেম, ভালোবাসা কিংবা প্রেমপত্র কেন লিখে মানুষ, তা জানে না। কিন্তু লিখতে হবে। কেননা, সিনেমায় দেখেছে, রোমান্টিক নাটকে দেখেছে এমনকি জনপ্রিয় টিকটকে দেখছে কাউকে সুন্দর লাগলে প্রেম নিবেদন করতে হয়, প্রেমপত্র লিখতে হয়। কাউকে ভালোবাসি বলতে হয়। প্রাক-প্রাথমিকের এক শিশু তার সহপাঠী মেয়ে বন্ধুকে বাড়ি থেকে আনা ফুল দিয়ে বলে তুমি আমার বউ হবে? এটা শুনে ভীষণভাবে অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করায় উত্তরে বলে 'আম্মু যখন টিভি দেখে আমি তখন দেখেছি কাউকে ফুল দিয়ে এটা বলতে হয়'। এই কথা শুনে আশ্চর্য হবেন নাকি দুঃখ পাবেন? এই সমস্যাগুলোকে আমরা সমস্যা মনে করি না। আরে, ছোট বাচ্চা ও কি আর বুঝে বলছে? না বুঝেই বলছে, ঠিক হয়ে যাবে বলে আমলে নেই না। চিন্তার বিষয়টা ওখানেই, সে না বুঝে করছে মানেই শিশুর অবচেতন মনে এগুলো গেঁথে আছে। শিশু জন্মের পর থেকেই একটু একটু করে একজন সামাজিক মানুষ হয়ে ওঠে বৃহৎ পরিব্যাপ্তির সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। যেখানে সমাজের বস্তুগত, অবস্তুগত সব বিষয়ই প্রভাবিত করে শিশুকে। বিনোদন একটা বড় ভূমিকা পালন করে এই সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায়। তাই এখানে শিশুকে একা ছেড়ে দিলে ভবিষ্যতে ভুলের মাশুল দিতে হবে পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রকে। সদা জাগ্রত থাকতে হবে অভিভাবকদের। সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোনের প্রাপ্ত্যতার পেছনে অভিভাবকদের সঙ্গে আলোচনায় বেশ কিছু কারণ উঠে আসে। তারা প্রথম দায়ী করেন করোনার সময়ের অনলাইন ক্লাস পদ্ধতিকে। তারা বলেন, যে করোনার সময়ে অনলাইনে ক্লাস এবং অ্যাসাইনমেন্ট লিখার জন্য শিক্ষার্থীর হাতে স্মার্ট ফোন তুলে দিতে তারা বাধ্য হয়েছেন। শুধু সন্তান পড়ার সুযোগ পাবে বলে অনেকে ধার করেও মোবাইল কিনে দিয়েছেন। তবে তারা বুঝতে পারেননি যে পরবর্তী সময়ে এর সুফলের চাইতে ক্ষতিই বেশি হবে। অনেক অভিভাবক এবং শিক্ষকরাও সরকারের ভালো রেজাল্টধারীদের হাতে ট্যাব তুলে দেয়াকেও দায়ী করেছেন। এর সুবাদে যাদের হাতে মোবাইল ছিল না তারাও তাদের অভিবাবকদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, এখন পড়তে হলে মোবাইল ফোন লাগে। অবাক করা তথ্য হচ্ছে, বাবা ভ্যানগাড়ি চালায় কিংবা দিনমজুর তাদের সন্তানের হাতে ১৫/২০ হাজার টাকার স্মার্ট ফোন। মোবাইল ফোন কিনে না দেয়ায় বাড়িতে ভাঙচুরের ঘটনার প্রমাণও পাওয়া যায়। অন্যদিকে, যেই শিশুদের হাতে মোবাইল নেই তারা টিফিনের সময়ে মোড়ের দোকানে টিভি দেখে আনন্দের খোরাক মেটায়। প্রতিটি ছাত্রের ধ্যানই যেন মোবাইল ফোন বা ডিজিটাল প্রযুক্তি। যার দরুন দুরুত্ব বেড়েছে পাঠ্য বইয়ের সঙ্গে এমনকি যে কোনো ধরনের গল্প, ছড়া সাহিত্য পাঠ থেকে। শিশুর পাঠ্য বইয়েয় থেকে দূরে সরে যাওয়ার পেছনে নানামুখী কারণ বিদ্যমান। দৃষ্টিপাত করতে হবে অনেকগুলো নিয়ামক, প্রভাবকের দিকে। শুধু সকালের ওই ঘটনার জন্য হয়ত ওই মাকে বা বাবাকে দোষারোপ করা যায়, কেন তার সন্তানকে পড়ার টেবিলে আটকে রাখতে পারলেন না। তবে শুধুই কি একজনকে দোষারোপ করে সমস্যাটাকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ আছে? কখনই না। হঁ্যা, অভিভাবকদের অসচেতনতাই একটা বড় কারণ তা নিশ্চিতভাবেই সত্যি। একইসঙ্গে তাদের সিংহভাগই নিরক্ষর এবং অশিক্ষিত। বাচ্চা কার সঙ্গে মিশছে, কোথায় যাচ্ছে, স্কুলে নিয়মিত যাচ্ছে কিনা এই বিষয়ে তারা সজাগ থাকলে তো পরিস্থিতি অন্যরকম হতে পারত। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো কেন একজন ছাত্র বা ছাত্রী পাঠ্য বই পড়ার আনন্দটা হারিয়ে ফেলল? কেবলই কি ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রভাব? একজন শিক্ষার্থীর হাতে খড়ি বাড়িতে হলেও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয় কোনো শিক্ষকের হাত ধরে। বইয়ের সঙ্গে প্রথম ভালোবাসাটা তৈরি করে দেন ওই শিক্ষকই। এখানে কোনো ঘাটতি হলেই শিশুটি সহজে আর স্কুলমুখী হতে চাইবে না। করোনাকালীন একটা দীর্ঘ সময় প্রাতিষ্ঠানিক এবং আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম থেকে দূরে থাকায় মানসিকভাবেই তারা কিছুটা বিপর্যস্ত। পূর্বের ন্যায় নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের বারবার ছন্দপতনের মুখোমুখি হতে হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষকদের মাঝেও একধরনের জড়তা চলে আসায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্কেও তৈরি হয়েছে জটিলতা, বেড়েছে দূরত্ব। করোনা চলে গেলেও এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়ে গেছে এখনো। অন্যদিকে, সব শিক্ষকের শিক্ষাদান কৌশল একই রকম নয়। একই বিষয় একজন শিক্ষক হয়ত খুবই প্রাণবন্ত করে উপস্থাপন করতে পারেন, শিক্ষার্থীদের মনে আগ্রহ তৈরি করতে পারেন, অন্যজন হয়ত পারেন না। কিংবা অনেকে চেষ্টাও করেন না। শিক্ষক পেশাকে সব শিক্ষকই দায়বদ্ধতা হিসেবে গ্রহণ করেন না। কেউ কেউ শুধু পেশা হিসেবেই বিবেচনা করেন। তবে শিক্ষা কার্যক্রমকে আরো বেশি প্রাণবন্ত এবং আগ্রহী করে তুলে ধরার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম নামে ৪+ এবং ৫+ বয়সিদের জন্য স্কুলমুখী শিক্ষা কর্যক্রম চালু করেছে। এ শিক্ষার মূল উদ্দেশই হচ্ছে কীভাবে আনন্দের সঙ্গে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করে তাদের স্কুলের প্রতি আগ্রহী করে গড়ে তুলা যায়। তবে এর সুফল পেতে অপেক্ষা করতে হবে কয়েক বছর। অন্যদিকে, যাদের শিক্ষাজীবনে অনুপ্রবেশ এমন আনন্দের মাধ্যমে ঘটেনি তারাই আছে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায়। এর কারণ হিসেবে অভিযোগের আঙুলটি শিক্ষকদের পাশাপাশি শিক্ষা ব্যবস্থার দিকেও তুলা যায়? কেননা, সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারই অনস্বীকার্য। সংস্কারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়া উচিত- যারা ইতোমধ্যে স্কুলবিমুখ হয়েছে তাদের কীভাবে স্কুলমুখী করা যায় সে বিষয়ে। কীভাবে তাদের মনে মানুষের মতো মানুষ হওয়ার স্বপ্ন বুনে দেয়া যায়। একইভাবে উদ্যাগ নিতে হবে কীভাবে তাদের মোবাইল আসক্তি কমানো যায়। যেখানে প্রধান ভূমিকা রাখতে পারেন একজন মা। সন্তানের জীবন গড়ার কারিগর একজন সুযোগ্য, দক্ষ এবং সচেতন মা। এই মর্মে দীক্ষিত হয়ে, শিশুর মানসিক, শারীরিক তথা সার্বিক বিকাশ সম্পর্কে মায়েদের সচেতন করার নিমিত্তে প্রাথমিক শিক্ষায় 'মা সমাবেশ' নামক কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এই কর্মসূচির মাধ্যমে শিশুর বিকাশ সম্পর্কিত তথ্যের পাশাপাশি মোবাইল আসক্তি হ্রাসকরণ তথ্য, তত্ত্ব ও পদ্ধতিগত বিষয়ে সচেতন করা যেতে পারে। অভিভাবকের ভূমিকার পাশাপাশি সমাজ তথা রাষ্ট্রকেও রাখতে হবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। নীতিগত সিদ্ধান্তে আনতে হবে পরিবর্তন। এমন কিছু আইন প্রয়োজন- যা একজন শিশুকে শুধু বিরত রাখবে না বরং বাধ্য করবে মোবাইল, ইন্টারনেট থেকে দূরে থাকতে। মোবাইল আসক্তি গোটা একটা জেনারেশনকে আজ ধ্বংসের মুখে ফেলে দিচ্ছে। তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বুদ্ধি, প্রজ্ঞা সব গুণাবলিই আজ হুমকির মুখে। সমগ্র বিশ্বই আজ এ ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখছে। সম্প্রতি বিশ্বের উন্নত দেশগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ- মোবাইল আসক্তি যাতে একজন শিশুকে শারীরিক, মানসিকভাবে পঙ্গু করে দিয়ে দেশের বোঝা হিসেবে তৈরি করতে না পারে, তাই সুইডেন সরকার আইন করেছে 'দুই বছরের আগে কোনো বাচ্চা মোবাইল, টিভি বা ডিজিটাল প্রযুক্তির অন্য কোনো গেজেট দেখতে পারবে না- তথা চিনবেই না'। অর্থাৎ একদম দুধের শিশুকে শান্ত করার জন্য মোবাইল বা অন্য কোনো গেজেট যেন না দেয়া হয় সামনে। এতে শিশুর অবচেতন মনও চিনবে না মোবাইলকে এবং একই সঙ্গে তার চোখও রক্ষা পাবে ক্ষতিকর বস্নম্ন রশ্মি থেকে। এতে শিশুটির সাস্থ্য ঝুঁকিও কমে যাবে অনেক। অন্যদিকে, চলতি বছরের মে মাসে তের বছরের কম বয়সি শিশুদের স্মার্ট ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আনয়নে নীতিমালা তৈরি করেছে ফ্রান্স। যাতে উলেস্নখ করা হয়েছে যে, কোনো শিশু তের বছরের আগে ফোন ব্যবহার করলেও তা কোনোভাবেই স্মার্টফোন হতে পারবে না। এবং আঠারো বছরের আগে কেউ ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, টিকটক ব্যবহার করতে পারবে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শিশুদের জন্য স্মার্টফোন ব্যবহার নিষিদ্ধও করা হতে পারে। একইভাবে, ব্রিটিশ মোবাইল অপারেটর 'ইই'ও দাবি করেছে যাতে এগারো বছরের আগে শিশুর হাতে স্মার্ট ফোন তুলে দেয়া না হয়। এদিকে, যুক্তরাজ্যের রেগুলেটর সংস্থা অফকমের ডেটা অনুযায়ী দেখা যায় যে, ৯৭% শিশুরা বারো বছর বয়সে একটি মোবাইল ফোনের অধিকারী হয়। তাই, শিশুদের পড়াশোনায় মনোযোগে ব্যাঘাত রোধে, শিক্ষার মান উন্নয়নে, শিশুদের সাইবার বুলিংয়ের হাত থেকে রক্ষা করতে সারা বিশ্বে স্কুলে স্মার্টফোন ব্যবহারে নিষিদ্ধের আহ্বান ইউনেস্কোর। এতে সাড়া দিয়ে সম্প্রতি শ্রেণিকক্ষে মোবাইল বা অন্য কোনো ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে ফিলিপাইনসহ ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্স। অন্যদিকে, চীন সরকার প্রস্তাব রেখেছে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের স্মার্টফোন ব্যবহারের সময়কে নির্দিষ্ট করে দিতে। তারা চায়, অপ্রাপ্ত বয়স্করা যে দিনে দুই ঘণ্টার বেশি মোবাইল ব্যবহার করতে না পারে। একইভাবে, যুক্তরাজ্যও চায় মোবাইল ব্যবহারে সময় এবং বয়স এর সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দিতে। এ উদ্দেশ্যে তারা 'অনলাইন নিরাপত্তা আইন-২০২৫' হাতে নিয়েছে।, অনলাইনে বিচরণ করা অর্ধেক শিশু নিয়মিত পর্ন সাইটে ভিজিট করে। তাই এআই প্রযুক্তির সহায়তায় ব্যবহারকারীদের চেহারা থেকে বয়স নির্ধারণে সেলফিভিত্তিক ব্যবস্থা রাখার পরামর্শও অফকমের। উন্নত রাষ্ট্রগুলোর নেয়া পদক্ষেপ থেকে একটা উপলব্ধি প্রতীয়মান হয় যে, সবাই শিশুদের নিয়ন্ত্রণ করে তাদের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে চায়। এই নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা থাকবে একজন সচেতন মা, পরিবারের সব সচেতন সদস্য, শিক্ষক এমনকি রাষ্ট্রের সব সচেতন সুনাগরিক। কিন্তু, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে সব পরিবারে একজন সচেতন মা পাওয়া সবচেয়ে বড় বাধা। এমনকি সচেতন সদস্যের পরিবার পাওয়াও অন্যতম প্রতিবন্ধকতা। শুধু গ্রামের শিশুরা না, শহরের বস্তির কিংবা নিম্ন আয়ের মানুষের সন্তানরাও বড় হয় একাকী, সচেতন মায়ের সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের একটা বৃহৎ অংশ এই একবিংশ শতাব্দীর ডিজিটাল যুগে এসেও আছে ঝুঁকির মধ্যে। তাদের বাদ দিয়ে উন্নত সমাজ তথা দেশ গঠন নিশ্চিতভাবেই অসম্ভব। তাই এই জেনারেশনকে আবার স্কুলমুখী করতে হবে। বইপ্রেমী করে গড়ে তুলতে হবে। স্ব-স্ব অবস্থান থেকে সবার ভূমিকা নিশ্চিত করতে হবে। প্রত্যেকেই যদি তার পরিবারের দায়িত্ব নেয় যে, কোনো শিশুই আর অযত্নে, অবহেলায় বড় হবে না। তবেই আস্তে আস্তে একদিন সমগ্র সমাজ তথা দেশের চিত্রও পালটে যাবে। সেই সঙ্গে এই পরিবর্তনে অবদান রাখতে হবে রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট সব গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গসংগঠনকেও। সাদিয়া আফরিন : শিক্ষক