বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। সঙ্গত কারণেই এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই বিপুল জনগোষ্ঠীর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা স্বাভাবিকভাবেই চ্যালেঞ্জের বিষয়। এছাড়া স্মর্তব্য, নানা সময়েই চিকিৎসক সংকট, ওষুধের দাম বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন বিষয় আলোচনায় এসেছে। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর পাঁচ লাখ ৫৭ হাজার ২০০ জনের মৃতু্য হয় অসংক্রামক রোগে। আর তাদের মধ্যে প্রায় দুই লাখ ৭৩ হাজার মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। অন্যদিকে, বিশ্বে হৃদরোগে প্রতি দেড় সেকেন্ডে একজনের মৃতু্য হয়। অথচ হৃদরোগজনিত মৃতু্যর প্রায় ৮০ ভাগ প্রতিরোধযোগ্য বলে দাবি করেন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা।
আমরা মনে করি, বাংলাদেশে প্রতি বছর পাঁচ লাখ ৫৭ হাজার ২০০ জনের মৃতু্য হয় অসংক্রামক রোগে, এটা যেমন বিবেচনায় নিতে হবে, তেমনি এর মধ্যে প্রায় দুই লাখ ৭৩ হাজার মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় এটাকেও সহজ করে ভাবার সুযোগ নেই। এছাড়া যেহেতু হৃদরোগজনিত মৃতু্যর প্রায় ৮০ ভাগ প্রতিরোধযোগ্য বলে দাবি হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের। ফলে, এই বিষয়গুলোকে সামনে রেখে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। উলেস্নখ্য যে, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, দেশে হৃদরোগের ঝুঁকি ও হৃদরোগজনিত মৃতু্য ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। হৃদরোগের অন্যতম কারণ উচ্চ রক্তচাপ। প্রতি চারজনে একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। তাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি খুবই বেশি। ফলে, আমরা মনে করি, হৃদরোগের অন্যতম কারণ উচ্চ রক্তচাপের বিষয়টি আমলে নিতে হবে। সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও হৃদরোগের ঝুঁকির বিষয়কে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রসঙ্গত, গতকাল সারাদেশে বিশ্ব হার্ট দিবস পালিত হলো। এবারের প্রতিপাদ্য নিধারণ করা হয়- 'ইউজ হার্ট ফর অ্যাকশন বা কর্মের জন্য হৃদয় ব্যবহার করুন'। আমলে নেওয়া দরকার, ডবিস্নউইচও'র গেস্নাবাল রিপোর্ট অন হাইপারটেনশন-২০২৩ অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর দুই লাখ ৭৩ হাজার মানুষ হৃদরোগে মৃতু্যবরণ করে, যার ৫৪ শতাংশের জন্য দায়ী উচ্চ রক্তচাপ। আরও উদ্বেগের বিষয় হলো উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্তদের অর্ধেকই জানে না যে, তাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। এছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে চিকিৎসাসেবা গ্রহণের হার খুবই কম, মাত্র ৩৮ শতাংশ। নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে রোগটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে মাত্র ১৫ শতাংশ অর্থাৎ প্রতি সাতজনে একজন। এমনকি বিশ্বে প্রতি বছর দুই কোটিরও বেশি মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতু্যবরণ করে- যার অন্যতম কারণ উচ্চ রক্তচাপ।
আমরা বলতে চাই, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। চিকিৎসকরা বলেছেন, অনেক হার্ট বস্নক আছে- যা শুধু ওষুধ সেবনেই ভালো রাখা যায়। হৃদরোগ প্রতিকারের চেয়ে সবাইকে প্রতিরোধের দিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত - এমন আলোচনাও উঠে এসেছে। প্রতিরোধে নিয়মিত ৩০ মিনিট হাঁটা, নিয়মিত ঘুম, লবণ না খাওয়া, স্ট্রেস না থাকা ও ধূমপান না করলে হৃদরোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে জানা যায়। ফলে, এই দিকগুলোকে সামনে রেখে জনসচেতনতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিশ্চিত করতে হবে।
সর্বোপরি বলতে চাই, হৃদরোগ সংক্রান্ত ঝুঁকি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। এটা এড়ানো যাবে না, জনস্বাস্থ্য ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হৃদরোগজনিত মৃতু্যর ৮০ ভাগ প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু বাংলাদেশে এই রোগে ঝুঁকি ও মৃতু্য ক্রমবর্ধমান হারে বাড়ছে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, তৃণমূল পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধের সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং এই খাতে সরকারি বাজেট বৃদ্ধির মাধ্যমে হৃদরোগ ঝুঁকি অনেকাংশেই মোকাবিলা সম্ভব- এমনটিও আলোচনায় আসছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। দেশে প্রতি বছর পাঁচ লাখ ৫৭ হাজার ২০০ জনের মৃতু্য হয় অসংক্রামক রোগে। আর তার মধ্যে প্রায় দুই লাখ ৭৩ হাজার মানুষ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। এই তথ্যকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য।