কিছুদিন আগে উৎপাদক, পাইকারি ও ভোক্তা তথা খুচরা পর্যায়ে ডিম, সোনালি ও ব্রয়লার মুরগির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। ডিম খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা, সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। এখানে উলেস্নখ করা প্রয়োজন হাসিনা সরকারের আমলেও সুনির্দিষ্ট কিছু পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। কাজে আসেনি তা। এবারও কাজে আসেনি।
বরং বাজারে উল্টো চিত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে ডিমের হালি এখন ৬০ টাকা। কেবল তাই নয়, সবজি ও চালের বাজার চড়া। ১০০ টাকা কেজির নিচে সবজি পাওয়া কঠিন। বেড়েছে চালের দামও। বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল ৫৫ টাকা, আটাশ চাল ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট ৭২ থেকে ৮০ টাকা মানভেদে। নাজিরশাইল ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। বাংলা বাসমতি ৯৫ থেকে ১০০ টাকা কেজি। সুপার শপে ১১০ টাকা কেজি।
আমরা মনে করি, কেবল সুনির্দিষ্ট কিছু পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেই হবে না, বাজার ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ভিন্ন এক চিত্র দেখা গিয়েছিল দেশের কাঁচাবাজারে। তখন বেশ কিছু পণ্যের দাম কমেছিল। পণ্য সরবরাহ বাড়ায় নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসতে শুরু করেছিল। মাছ-মাংস ও সব ধরনের সবজির দাম আগের চেয়ে কমেছিল। এখন আবার বর্ষা, বন্যা ও সরবরাহ সংকটের দোহাই দিয়ে শাকসবজির দাম বাড়ানো হয়েছে। বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় হতাশ সাধারণ মানুষ। বেশি দামে চাল কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন খেটে খাওয়া দিনমজুররা। অথচ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাজারে চালের দাম কমার কথা ছিল। কারণ, পণ্যের দাম বৃদ্ধির পেছনে চাঁদাবাজিকে দায়ী করা হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী এখন তো চাঁদাবাজি থাকার কথা নয়। তা হলে ঠুনকো অজুহাতে চালের দাম বেড়েছে কেন? নিকট ভবিষ্যতে আদৌ কমবে কিনা তা নিয়ে তারা সন্দিহান। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সঙ্গতি ঠিক রাখতে না পারায় অনেকে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। তাদের আয়ের অধিকাংশ খরচ করতে হচ্ছে চাল কিনতে। এ কথা কোনোভাবেই অস্বীকার করার উপায় নেই, পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে মূলত ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দায়ী। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট যে ভাঙা সম্ভব হয়নি, এখন সেটা স্পষ্ট। আমরা আশা করেছিলাম, নতুন প্রশাসনের অধীন সিন্ডিকেট তাদের দৌরাত্ম্য বজায় রাখতে পারবে না। তাই দাম আরও কমে আসবে। কিন্তু বাজারের চিত্র প্রায় একই। সবার আগে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। আগে যারা চাঁদাবাজি করত তারা সামনে নেই। নতুন কেউ যেন আবার পরিবহণ থেকে চাঁদাবাজি শুরু করতে না পারে সেটা খেয়াল রাখতে হবে।
আমরা মনে করি, দেশে উৎপন্ন পণ্যের ক্ষেত্রে কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যন্ত সব পর্যায়েই মনিটরিং থাকতে হবে- যাতে কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়াতে না পারে। দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানার জন্য সরকারের দায়িত্বশীল যেসব সংস্থা আছে, সব সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। মনে রাখতে হবে সরকার পরিবর্তন হলেও বাজার সিন্ডিকেট এখনো সক্রিয়। দেশের অসাধু ব্যবসায়ীদের লোভী মানসিকতার এখনো কোনো পরিবর্তন হয়নি। কীভাবে তারা সাধারণ জনগণের পকেট কাটবে, সে চিন্তায় ব্যস্ত থাকে। এদের কঠোর হাতে দমন করতে হবে।