জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ

বাস্তব প্রতিফলন জরুরি

প্রকাশ | ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
ছাত্র-জনতার গণ-অভু্যত্থান বাংলাদেশে বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামোর আমূল সংস্কারে সম্ভাবনার এক নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। টেকসই সংস্কারের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র, সুশাসন ও সমৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়েছে। গণতন্ত্রের নতুন যাত্রায় বিশ্বকে পাশে চায় বাংলাদেশ। অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে নতুনভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গত শুক্রবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশনে দেওয়া ভাষণে ড. ইউনূস এ আহ্বান জানান। জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে এ ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। তিনি বাংলায় ভাষণ দেন। বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ভাষণ দেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ। তিনি পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দায়িত্ব গ্রহণ, বাংলাদেশ নিয়ে মানুষের আকাঙ্ক্ষা, অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রারম্ভিক পদক্ষেপ তুলে ধরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন। তিনি রাষ্ট্র হিসেবে দ্বিপক্ষীয় এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের দায়িত্বের বিষয়টিও উলেস্নখ করেন। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সমকালীন নানা বিষয় তুলে ধরে ভবিষ্যতের পৃথিবীর কথাও ভাষণে উলেস্নখ করেন তিনি। ছাত্র-জনতার অদম্য সংকল্প ও প্রত্যয়ের মাধ্যমে একটি স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা থেকে মুক্তি এসেছে বলে উলেস্নখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, এই সম্মিলিত সংকল্পের মধ্যেই দেশের ভবিষ্যৎ নিহিত- যা বাংলাদেশকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মাঝে একটি দায়িত্বশীল জাতির মর্যাদায় উন্নীত করবে। এই গণ-আন্দোলন রাজনৈতিক অধিকার ও উন্নয়নের সুবিধাবঞ্চিত বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণকে ঐক্যবদ্ধ করেছে। বাংলাদেশের এই অভু্যত্থান আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষকে মুক্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে প্রেরণা জুগিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অবদানকারী চতুর্থ বৃহত্তম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৪৩টি দেশে ৬৩টি মিশনে শান্তিরক্ষী পাঠিয়েছে। এসব মিশনে দায়িত্ব পালনকালে ১৬৮ জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। যে কোনো অবস্থায় নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জাতিসংঘের ভবিষ্যৎ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমগুলোতে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা একইভাবে অবদান রাখার সুযোগ পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। বাংলাদেশের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে নতুন বাংলাদেশের সঙ্গে নতুনভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা মানুষের মৌলিক অধিকারকে সমুন্নত ও সুরক্ষিত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমাদের দেশের মানুষ মুক্তভাবে কথা বলবে, ভয়ভীতি ছাড়া সমাবেশ করবে, তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে, এটাই আমাদের লক্ষ্য। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ এবং সাইবার ডোমেইনসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সুসংহতকরণেও আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। রাষ্ট্র ব্যবস্থার সব পর্যায়ে সুশাসন ফিরিয়ে আনাই আমাদের অভীষ্ট। সেই লক্ষ্যে বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থা, সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা সংস্কারে স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে। সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের সংস্কারের জন্যও পৃথক কমিশনসহ আরও কয়েকটি বিষয়ে কমিশন গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ব্যবসাবাণিজ্যে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোনো বিদেশি ব্যবসা বা বিনিয়োগ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করতেও বাংলাদেশ বদ্ধপরিকর। তিনি বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোতে অভিযোজনের জন্য ব্যাপক বিনিয়োগেরও আহ্বান জানান। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা থেকে সৃষ্ট রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশ ও এ অঞ্চলের জন্য প্রথাগত ও অপ্রথাগত উভয় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা কার্যক্রম চালু রাখা এবং তাদের টেকসই প্রত্যাবাসন করার উদ্দেশ্যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যাপ্ত সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাই। বিশ্ববাসীর উদ্বেগ এবং নিন্দা সত্ত্বেও গাজায় গণহত্যা থামছে না। ফিলিস্তিনের বিদ্যমান বাস্তবতা কেবল আরব কিংবা মুসলমানদের জন্যই উদ্বেগজনক নয়, বরং তা সমগ্র মানবজাতির জন্যই উদ্বেগের। আড়াই বছর ধরে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এই যুদ্ধের প্রভাব সর্বব্যাপী। এমনকি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর নেতিবাচক প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। জাতিসংঘসহ বহুপক্ষীয় বিশ্বকাঠামোতে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও অবদান অব্যাহত থাকবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, মর্যাদা ও স্বার্থ সংরক্ষণের ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বের সব রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। আমরা জাতিসংঘে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের বাস্তব প্রতিফলন দেখতে চাই।