দেশে কোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধি অর্থনৈতিক বৈষম্য বাড়ছে
প্রকাশ | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোতে কোটি টাকা রয়েছে এমন হিসাবের (অ্যাকাউন্ট) সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। বিশেষ করে আর্থিক সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যেও বড় অঙ্কের জমার হিসাবের সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, গত তিন মাসে কোটিপতি প্রায় তিন হাজার বেড়েছে। ব্যাংকে কোটি টাকার বেশি রয়েছে এমন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের হিসাবের সংখ্যা এক লাখ ১৮ হাজার ছাড়িয়েছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা পিষ্ট। সাধারণ মানুষ এখন সংসারের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন। ফলে ব্যাংকে টাকা জমানোর চেয়ে অনেকে আগের জমানো অর্থ ভেঙে খাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতেও একটি শ্রেণির মানুষের আয় বেড়েছে। এরা হচ্ছে বিত্তশালী বা বড় প্রতিষ্ঠান। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২৪ সালের জুন শেষে ব্যাংক খাতে মোট আমানতকারীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫ কোটি ৮৪ লাখ ৭৭ হাজার ৫২৩। এসব হিসাবে জমা আছে ১৮ লাখ ৩৮ হাজার ৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কোটি টাকার বেশি আমানত রয়েছে এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা এক লাখ ১৮ হাজার ৭৮৪। কোটি টাকার ওপরে এসব হিসাবে জমা আছে সাত লাখ ৭৩ হাজার ৫৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ দেশের ব্যাংকিং খাতের মোট আমানতের ৪২.০৫ শতাংশ কোটি টাকার হিসাবধারীদের। তথ্য বলছে, চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত এক কোটি টাকার বেশি আমানতের ব্যাংক হিসাব ছিল এক লাখ ১৫ হাজার ৮৯০টি। ওই সব ব্যাংক হিসাবে মোট জমা ছিল সাত লাখ ৪০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে কোটিপতি হিসাব বেড়েছে দুই হাজার ৮৯৪টি। তার আগে গত বছরের (২০২৩ সাল) ডিসেম্বর পর্যন্ত এমন ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ছিল এক লাখ ১৬ হাজার ৯০৮। আর মোট জমা ছিল সাত লাখ ৪১ হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা।
মনে রাখতে হবে, মূল্যস্ফীতির প্রথম প্রভাবই হলো মুদ্রার ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়া। যে কারণে মূল্যস্ফীতি বাড়লে দরিদ্র মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে। বিপাকে পড়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণিও। কারণ ক্রয়সীমার বাইরে চলে যায় পণ্যমূল্য। এতে চাহিদা মেটাতে গিয়ে মধ্যবিত্ত দরিদ্র হয়ে পড়ে আর দরিদ্র হয়ে পড়ে নিঃস্ব। এ পরিস্থিতিতে দেশে কোটিপতির সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া নিঃসন্দেহে দেশের অর্থনীতির জন্য এক ধরনের সতর্কবার্তা বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এর মন্দ প্রভাব নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত সবার ওপরই পড়ে। একটি উন্নয়নকামী দেশের জন্য মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক বৈষম্য নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি।
দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে এখন কোটিপতির সংখ্যা বেশি। অনেকেই পাঁচ-দশ বছরের মধ্যে কোটিপতি হয়ে গেছেন। এটা হচ্ছে অসুস্থ ও অসম পুঁজির বিকাশ। এই বিকাশের কারণে মধ্যবিত্ত ধীরে ধীরে বিত্তহীন হয়ে পড়ছে। সমাজে অর্থনৈতিক ভারসাম্য আনার জন্য বন্ধ করতে হবে আর্থিক পরিমন্ডলে দুর্বৃত্তায়নের প্রবণতা। কমিয়ে আনতে হবে অর্থনৈতিক বৈষম্য।