জলাবদ্ধতার কারণে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জনদুর্ভোগের বিষয়টি নতুন নয়। সামান্য বৃষ্টিতেই রাজধানী ঢাকা শহরে জলাবদ্ধতার সমস্যা প্রকট আকারে দৃশ্যমান হয়- এমন আলোচনা বিভিন্ন সময়ে সামনে এসেছে। আর সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বৃহস্পতিবার দিনভর মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে রাজধানী ঢাকার বেশিরভাগ রাস্তাঘাট। পানি নিষ্কাষণের সুস্থ ব্যবস্থা না থাকায় দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এতে অলিগলি থেকে শুরু করে বেশিরভাগ সড়কে সৃষ্টি হয় ভয়াবহ যানজট। চরম দুর্ভোগে পড়েন কর্মজীবী মানুষ। অন্যদিকে টানা বৃষ্টিতে আবারও নোয়াখালীতে বন্যা ও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। জেলার বানভাসি মানুষ নতুন করে দুশ্চিন্তায় পড়েছে। জেলায় এখনো প্রায় ১২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
তথ্য মতে, বিরামহীন বৃষ্টিতে খুলনার জনজীবনও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বুধবার দুপুর থেকে কখনো ঝিরিঝিরি, কখনো হালকা আবার কখনো মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় নগরীর রাস্তাঘাটের পাশাপাশি নিম্নাঞ্চলের বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধতায় বেড়েছে নগরবাসীর দুর্ভোগ। অন্যদিকে, রাজধানীর জলাবদ্ধতায় বিভিন্ন সড়কে শুরু হয় যানজট। বিশেষ করে মতিঝিল, যাত্রাবাড়ী, কাকরাইল, গুলিস্তান, শান্তিনগর, মৌচাক, বাড্ডা, বনানী, ফার্মগেট, শাহবাগ, মিরপুর রোডে যানবাহনের দীর্ঘ সারি বাড়তে থাকে। এসব সড়কে ২০/২৫ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে এক থেকে দেড় ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। আর যেসব সড়কে বৃষ্টির পানি জমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে সেখানে সিএনজি অটোরিকশা ও মোটর সাইকেলসহ বিপুলসংখ্যক ছোট যানবাহন মাঝ রাস্তায় বিকল হওয়ায় যানজটের ভোগান্তি আরও বেড়েছে।
আমরা বলতে চাই, জলাবদ্ধতা সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, জলাবদ্ধতার কারণে দুর্ভোগ এবারই নয়, বিভিন্ন সময়ে নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার কারণে স্বাভাবিক জীবন বিঘ্নিত হয়। ফলে আবার যখন উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো, তখন সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করা। এমন আলোচনা বারবার সামনে এসেছে যে, রাজধানী ঢাকার জলাবদ্ধতা দীর্ঘদিনের। শহরের অন্যতম একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে জলাবদ্ধতা। সামান্যতম বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় রাস্তা-ঘাটসহ অনেক এলাকা। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই।
আমলে নেওয়া দরকার, নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, জলাবদ্ধতার ভোগান্তি কমাতে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কার্যক্রমে সমন্বিত পরিকল্পনার অভাব সুস্পষ্ট, বৃহস্পতিবারের বৃষ্টি তা আবারও প্রমাণ করল। দুই সিটি যা করছে তা সাময়িক ব্যবস্থা। ঢাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে করা মহাপরিকল্পনাকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু টাকা খরচ করছে তারা। দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ ছাড়া ঢাকার জলাবদ্ধতার সমাধান হবে না। ফলে এই বিষয়গুলো আমলে নেওয়া জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
ভারী বৃষ্টিতেও ঢাকায় যাতে জলাবদ্ধতা না হয় সে জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গত চার বছরে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে খরচ করেছে প্রায় ৩৬০ কোটি টাকা। অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটির প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসনে চার বছরে খরচ করা হয়েছে প্রায় ৩৭০ কোটি টাকা। দুই সিটির প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আগের চেয়ে ঢাকার জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। আরও উন্নতির জন্য মানুষকেও সচেতন হতে হবে। কারণ, পলিথিনজাতীয় বর্জ্য নির্বিচারে নর্দমা ও খালে ফেলা হয়। ফলে সচেতনতা বৃদ্ধিসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নেওয়া জরুরি বলেই আমরা মনে করি।
সর্বোপরি বলতে চাই, জলাবদ্ধতার যে চিত্র পরিলক্ষিত হয় তা কতটা উদ্বেগের- সেটি আমলে নিয়ে প্রয়াজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরকেই। এর আগে এটাও আলোচনায় এসেছে যে, অপরিকল্পিত নগরায়ন জলবাদ্ধতার অন্যতম কারণ। ফলে এটিও এড়ানো যাবে না। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে- এমনটি কাম্য।