গণতন্ত্রের জোছনা ও রাজনীতি চর্চা

সাধারণ মানুষ কী চায় স্বস্তি ও বিশ্বাস। একটু স্বস্তিতে থাকতে চায়। বিশ্বাসের অভাবে দৈনন্দিন জীবনে দ্রবমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হলে হিমশিম খায় নিম্ন আয়ের মানুষ। বেতন ও স্কেল বৈষম্যে থাকা চাকরিজীবী মনে করে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বেঁচে থাকার জন্য খেতে হবে। খাবারের মান ও প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী না পেলে সংকট দিন দিন বাড়তে থাকে। বিবদমান সংকট মোকাবিলায় গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চা ও নেতা দরকার। বিবদমান সংকটে গণতন্ত্রের জোছনা খুব প্রয়োজন। কারণ পথটা অন্ধকারাচ্ছন্ন, এ যাত্রায় আছে ভবিষ্যৎ রাজনীতির পথ।

প্রকাশ | ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

শাহমুব জুয়েল
সামাজিক চিন্তা ও রাজনীতি হচ্ছে রাষ্ট্রীয় কাঠামো তৈরির মৌলিক মাধ্যম। যেখানে নিহিত থাকে উন্নতির অঙ্কুর। রাষ্ট্রের উত্থান-উন্নতির ক্ষেত্রে সুষম গণতন্ত্র ও জনমত জরিপের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। জনগণকে, রাষ্ট্রকে, রাষ্ট্রের সম্পদকে, রাষ্ট্রের ভিন্নমতকে মূল্যায়ন করতে হবে। নিম্ন আয়ের মানুষ থেকে উচ্চ আয়ের মানুষের জীবনযাপনের দিকে সমদৃষ্টি থাকতে হবে। জনগণের সন্তুষ্টি থাকে সুপরিকল্পিত জীবনযাত্রা ও নগর ব্যবস্থায়। সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ যা প্রত্যাশা করে তা হচ্ছে মাইনরিটি সিগন্যাল। বিপরীতে কিছু চিন্তা করা অযৌক্তিক ও কলহের দাবানলে হাত রাখার মতো বিষয়। জনগণের ভালো-মন্দ বিবেচনা করে শ্রেণি ও সময় ধারণ করতে হয় এবং তা যথাযথ অনুধাবন করে রাষ্ট্র গঠনের দায়িত্ব নেওয়া হচ্ছে আগতজনের বিশেষ কাজও বটে। দায়িত্বশীল ব্যক্তির দরকার হয়ে থাকে গ্রহণযোগ্য জনমত ও দায়িত্বশীলতা। জনগণের সুখ-দুঃখ, আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলন ঘটানো লাগে দায় ও দায়িত্বের দু্যতিতে। তাতে জনগণের একটি আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা তৈরি হতে থাকে। রাজনীতি হচ্ছে জনগণকে নিয়ে, সেই জনগণের চাহিদা ও সমুদয় সমস্যা সমাধানই হবে রাজনীতির মৌলিক উদ্দেশ্য। রাষ্ট্রীয় সংস্কার ও উত্তরণের পাশাপাশি রাজনীতি ও গণতন্ত্রচর্চার নিরাপদ পরিবেশ বজায় থাকলে নতুন ও দক্ষ নেতৃত্ব জন্ম লাভ করে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে রাজনীতিক দলে গণতন্ত্র চর্চা সুযোগ রাখা হয় না, পাত্তা দেওয়া হয় না। কিন্তু দক্ষ ও কর্মঠ এবং মেধাবীদের মূল্যায়ন হলে আশাবাদী শক্তি তৈরি হয়। তারা যখন ক্ষমতাসীন হয়ে ওঠে তখন সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা তৈরি হয়। পদ-পদবি লাভের জন্য আর্থিক অনিয়মের খবর খুব দারুণভাবে চাউর আছে। অযোগ্যদের পুনর্বাসন হলে দলগুলো খর্বকায় ও শেকড়-বাকড়ে পঁচন ধরে। তারাই দুর্নীতির আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে তরতাজা হয়ে ওঠে। যে কোনো ক্ষমতাসীন ও গণতান্ত্রিক শক্তির সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে দুর্নীতির ওপর আঘাত করা। যারা এসব করবে তাদের সামাজিকভাবে বর্জন করা। দুর্নীতি এমন প্রলয় যা রাষ্ট্রকে বিকলাঙ্গ করে। যে ঝড়ে দেশ বারবার বিধ্বস্ত এবং লন্ডভন্ড হচ্ছে। অথচ রাঘববোয়ালরা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রশাসন ও দপ্তরের তোয়ালের ভাঁজে সোনা-রূপোর সাজ বিদ্যমান। গ্রামে কথিত আছে, অপবিত্র হয়েছে সোনা রূপার জল চিটিয়ে দাও, তাতেই পবিত্র হয়ে উঠবে। রূপ বদলের দুর্নীতিবাজরা ঘাপটি মেরে থাকে। গিরগিটির মতো সুরত বদলায়, পকেট বদলায়, কথা বদলায়। মূল জায়গায় আঘাত করে ন্যায়নীতি-সততা এবং কর্মনিষ্ঠ মানুষকে মূল্যায়ন করা লাগবে। সমাজে সৎ ও ভালো মানুষ আছে, দপ্তরেও সৎ ও ভালো মানুষ আছে- সব এক নয়। একটু আলাদা করে নিতে হবে। তাতে রাষ্ট্র অশুভছায়া থেকে মুক্তি পাবে। মৌলিক পরিকল্পনা ছাড়া রাষ্ট্র অচল ও ভঙ্গুর। সেক্টর অনুযায়ী ভাগ করা থাকলেও দক্ষ ও অভিজ্ঞ এবং বুদ্ধিভিত্তিক লোকের মাধ্যমে তা গতি পায়। রাষ্ট্রে গতিশীলতা না থাকলে আর্থিক প্রবাহ কমে যায় তাতে জনগণের দুর্ভোগ চরমে ওঠে। মেধা ও মননশীল লোকের মাধ্যমে রাষ্ট্রের কাঠামো তৈরি হয়। রাষ্ট্রের সংকট ও খাতগুলো মোকাবিলা করতে ধী-সম্পন্ন লোকের প্রয়োজন হয়ে থাকে। এসব লোকের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে দাঁড় করাতে হয়। কীভাবে তা সম্ভব এ বিষয়ে তারা যৌক্তিক পথ বের করে। নীতি নির্ধারকরা তা ভাবে, দেখে এবং বিবেচনা করে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এভাবে দেশীয় ব্যবস্থাপনা ও সময়কে বিবেচনা করে নতুন শাসন ব্যবস্থা গড়ে ওঠে এবং উৎকৃষ্ট শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রকাশ পায় জাতীয়তা ও সাম্প্র্রতিক সুশাসন। গণতন্ত্রই মুক্তি। দুর্বলতা মানে জনমতের অভাব আছে। রাষ্ট্রীয় কাঠামো সংকোচিত। বাজে পরিস্থিতির সম্ভাবনা থাকে। তাতে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের চাহিদা, বুর্জোয়া রাষ্ট্রের তুষ্টিবিধান ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পায়। দেশে গণতন্ত্র ও নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমে নতুন শাসক তৈরি ও আইনি নীতি প্রয়োগের গুরুত্ব অধিক। আমাদের চারপাশে বহু শত্রম্ন আছে, সুবিধাবাদী আছে- যারা সুযোগ পেলে আমাদের গাড় মটকাতে কার্পণ্য করবে না। অতএব, আমাদের সাবধানতা খুব প্রয়োজন। স্বাধীনতার এত বছর পরেও আমাদের সাবধানতা তৈরি হয়নি। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পারস্পরিক রাজনৈতিক হিংসার জন্ম দিয়েছি। একটি টেকসই ও আদর্শ রাজনীতি উপহার দিতে পারিনি। কোথায় যেন গলদ, জনগণ কাউকে ভালোবেসে আস্থা রাখতে পারেনি, আস্থার বড়ো সংকট। রাষ্ট্রের সুশাসনের জন্য বিদ্বেষহীন রাজনীতি চর্চা দরকার। তা থেকে দলগুলো বহু দূরে। ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে অন্ধ- ম্যাচাকার। সাম্প্র্রতিক সময়ে মনে হচ্ছে প্রশাসন, আইন ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা একটু গা-ঢাকাভাবেই আছে। তারা কী চায় কিংবা তাদের উদ্দেশ্য কী স্পষ্ট নয় বরং এটা বুঝা যায় যে, সিদ্ধান্তে পারস্পরিক বিচ্ছিন্নতা আছে। আইনি বিচ্ছিন্নতা মানে জনবিচ্ছিন্নতা; কারণ আইন জনগণের ওপর প্রয়োগ হয়। জনগণ আইনের থেকে খারিজ ও লুপ্ত- যা রাষ্ট্রের জন্য ভালো নয়। মনে রাখতে হবে, এ দেশের মাটি ও মানুষ ঋতু পরিবর্তনের মতোই বদলে যায়। গাছ বদলে পেলে, জল বদলে পেলে, ভূমি বদলে পেলে, বউ বদলে পেলে। যদিও বদলানোর সিস্টেমটা সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে হয়। মুহূর্তের মধ্যে কোনো কিছু প্রত্যাশা মোটেও ভালো নয়। বাঙালি জাতি যে কোনো কঠিন পরিস্থিতিতে একযোগে দাঁড়ায়। আবার উনিশ-বিশে হলে মত বদলায়। আবেগের স্থায়িত্ব সম্পর্কে এলার্ট থাকাটা সমীচীন হবে। গণতন্ত্র হচ্ছে সাম্যভিত্তিক একটি রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা। রাতের অন্ধকার থেকে আলোর পথে ধাবিত করা। অন্ধকার হচ্ছে কলুসিত ও বিচ্ছিন্নতা। আমরা আলোর দিকে যাত্রা করতে চাই। সাম্য হচ্ছে রাজনৈতিক সমতা তথা লেভেল ফিল্ড পেস্নয়িং। একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ জনমত চর্চার পদ্ধতিও বটে- যা গণতান্ত্রিক চিন্তাকে উৎসাহিত করে এবং রাষ্ট্রের তৃণমূল মানুষের চিন্তা, আকাঙ্ক্ষা ও উৎসাহের প্রকাশ ঘটায়। তৃণমূল মানুষকে ছাড়া রাষ্ট্র কখনো সুসংহত হতে পারে না। এলিটরা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে নড়াছড়া করাতে পারে কিন্তু তৃণমূলের জনগোষ্ঠী রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক মুক্তির প্রধানতম হাতিয়ার ও শক্তি হিসেবে কাজ করে। তাদের কথা ভাবতে হবে তারাও একটা বৃহৎ অংশ। কৃষি, কলকারখানা, গার্মেন্টস শিল্প, মৎস্য শিল্প, বাজারজাত শ্রমিক, কাঁচাবাজার বিক্রেতা, লোহা শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক এদের ভরণপোষণ ও চাহিদা পূরণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাষ্ট্র যখন তাদের চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়। আয়-ব্যয়ের সঙ্গে সমতা রক্ষায় ব্যর্থ হয়, প্রতারণা করে এবং অসামঞ্জস্য সৃষ্টি করে তারা তখন বিপস্নবী হয়ে ওঠে। বিপস্নব জনমনে রোপিত থাকে। জনমনের কষ্ট প্রকৃতি জানে। সবকিছুর মূলে জনমতের প্রাধান্য। যাদের মন ও মানসিকতা ডাইভার্ট হয়। এদের চাহিদা কম কিন্তু নগদে বিশ্বাসী। ঠকবাজ ও প্রতারণার ফাঁদে তাদের আটকানো যায় না। তাতে বোকামো ছাড়া কিছুই নয়। তারা শুধু আন্তরিকতা ও স্বচ্ছতা চায়। চাওয়ার সঙ্গে অমিল হলে বোকামির দন্ড দিতে হয় রাষ্ট্রযন্ত্রকে। তা হচ্ছে ম্যান্ডেট হারানো। যারা ম্যান্ডেট হারায় তারা সহজে দাঁড়াতে পারে না। জনগণের ম্যান্ডেট এত সহজ নয়, সুবিধা ও প্রয়োজনের তাগিয়ে চাকার মতো ম্যান্ডেট ঘুরে। দাবা রাজার মতো থামে ও জয়ী করে। আমাদের দেশে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষ। তাদের ভাষা, মনের আকুতি ও চাহিদা মূল্যায়নও গণতন্ত্রের অংশ। এসবের মূল্যায়নই রাষ্ট্রের নৈতিক কাজ। স্থানীয় সরকার তৃণমূলের রক্ষাকবচ। এসব পর্যায়ে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি বিরজমান। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ নিরাপত্তা আশা করে ওয়ার্ড মেম্বার ও ইউপি চেয়ারম্যান কাছে। প্রত্যাশা থাকে সুবিচারের। পৈত্রিক সম্পত্তি, পারিবারিক কলহ, সরকারি ভাতাদি ওয়ার্ড মেম্বার কর্তৃক বণ্টন হয়ে থাকে। সেখানেও গড়ে ওঠে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কিছু আগাছা- যা সাধারণ জনগণকে ভোগান্তির মধ্যে পেলে দেয়। সেখানে তারা আর্থিক লেনদেন ও অনিয়মের বাজার তৈরি করে। তাতে ভুক্তভোগী বিচারবঞ্চিত হতে থাকে সাধারণ মানুষ। সঠিক বিচারের অভাবে অন্যায়কারী আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। দেখা দেয় বিচারবৈষম্য। এটির মূল কারণ হচ্ছে জনপ্রতিনিধি হিসেবে ভালো লোকের অংশগ্রহণের অভাব ও নির্বাচনের ক্ষেত্রে অস্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা। গণতান্ত্রিক চর্চা তৃণমূলেও সঠিকভাবে সম্পন্ন হয় না। ভোটাধিকার প্রয়োগ ও নির্বাচনী অস্বচ্ছতা, জবরদস্তি করা হয়। অথচ তৃণমূল মানুষের সেবা নিশ্চিত করতে ভালো ও যোগ্য সমাজসেবক নির্বাচিত করা নৈতিক দায়িত্ব ছিল। যাতে জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস জেগে ওঠে। বিশ্বাস ভঙ্গ করতে না পারে। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের জন্য জনগণের কাছে মাসিক জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করা বাহুল্য। তাতে তৃণমূলে স্বচ্ছতার মাধ্যমে জনবান্ধব ম্যাপ হতে পারে। বিশ্বে গণতন্ত্র চর্চার পরিসর ছোটে হয়ে আসছে- যা অকল্যাণকর এবং জনমত চর্চার জন্য হুমকিস্বরূপও বটে। বিশ্ব পরিস্থিতি তাতে আরও নাজুক ও ভঙ্গুর হতে পারে। জনমত শূন্যতা মানে দেশীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাপনে সংকোচন সৃষ্টি করা। মানবগোষ্ঠীর কখনো সংকোচন পছন্দ করে না, সর্বদা মুক্ত অবাধ ও সৃষ্টিশীল সমাজ ব্যবস্থা প্রত্যাশা করে। গণতন্ত্র ব্যাহত হলে কর্তৃত্ববাদী প্রথা চালু হবে এবং পরস্পর সহনশীলতা ও সম্প্র্রীতি বিলুপ্ত হতে থাকবে। অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর উত্থান ক্রমশই বৃদ্ধি পাবে- যা বিশ্বকে দাম্ভিক ও কর্তৃত্ববাদী মানসিকতায় পর্যবসিত করবে। গণতন্ত্র নিয়ে হান্টিংটনের 'তৃতীয় জোয়ার' এবং ফুকুইমারের 'ইতিহাসের সমাপ্তি' কিংবা 'উদারনৈতিক গণতন্ত্রের বিজয়'-এর কথামৃত হয়ে যাবে। মৃত ব্যবস্থপনাকে যথোপযুক্ত করা দরকার আছে বলে মনে করি। জনমত, সভ্যশ্রেণি ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের মাঝে বন্ধন তৈরি করে একটি সুষম কাঠামো গঠন করা। যাতে অগণতান্ত্রিক শক্তি ও অনৈতিক চর্চা সহজেই সৃষ্টি হতে না পারে। এজন্য কাঠামোগত পদ্ধতি সৃষ্টি করতে হবে। যাতে পরস্পর নাগরিক সমাজে সহনশীল ও সহমর্মিতা এবং জনবান্ধন রীতিনীতি তৈরি হয়। গণতন্ত্রের সূচক নিম্নগামী। বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো নানাভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহে বাধা ও চাপ প্রতিষ্ঠানগুলোকে দমিয়ে রেখেছে। কথা বলা ও ভুল ধরিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। তেলানিতে অভ্যস্ত, তেল শোধনেও অভ্যস্ত। ধীরে ধীরে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও প্রতিষ্ঠানগুলো সংকটের মুখে পড়ছে। বিপরীতে দেশে দেশে তৈরি হয়েছে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা। স্বৈরাচারীকরণ বা অটোক্রেটাইজেশনের হার তুলনামূলক বেশি। মধ্যপ্রাচ্য ও রাশিয়া চীনে- যা স্পষ্টত দৃশ্যমান। উদার ও গণতন্ত্রপন্থিদের রাজনৈতিক দুর্বলতা, অদূরদর্শিতার কারণে ব্যর্থতা ও রক্ষণশীল স্বৈরশাসক গড়ে ওঠে। যদিও গণতন্ত্রের মৃতু্যর কারণে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা 'পরিমার্জিত স্বৈরতন্ত্র', 'বেসামরিক স্বৈরতন্ত্র', 'ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতন্ত্র' 'নিয়ন্ত্রিত ও পরিমার্জিত গণতন্ত্র' ইত্যাদি নানা নামের কথা বলেন। যে নামেই ডাকা হোক না কেন, বলাবাহুল্য গণতন্ত্র চর্চা সংকোচিত হয়েছে। কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা বৃদ্ধি পাচ্ছে। হান্টিংটনের মতে, গণতন্ত্রের তৃতীয় ও শেষ জোয়ারটি ছিল ১৯৭৪ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত, যখন দক্ষিণ ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা, এশিয়া ও বিভিন্ন কমিউনিস্ট দেশে গণতন্ত্রের বিকাশ ঘটে। আমাদের স্বাধীনতা গণতন্ত্রের জন্য, অধিকারের জন্য কিন্তু সুবিধাবাদী ও কর্তৃত্ববাদী আদর্শের কাছে আমরা বারবার মার খেয়েছি। আমাদের আদর্শ হারিয়েছি, নেতা হারিয়েছি, শক্তি হারিয়েছি। রাষ্ট্র ও জনমতের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। জাতীয় চিন্তার মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রস্তুত করতে পুরোপুরি ব্যর্থ। সাম্য, মৈত্রী ও স্বাধীনতা- এই তিনটি অপশনই বর্তমানে অচল বুলিমাত্র। শিক্ষা ব্যবস্থায় গণতন্ত্র ও সাম্য এবং মানবাধিকার কতটুকু আছে। স্বাধীনতা থেকে শুরু করে নিজ ইচ্ছে ও নিজস্ব মত অনুযায়ী একটি বিষয়বস্তু চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে বারবার। চাপানোর আগে শিক্ষকদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি করা হয়নি। মানুষ মনে করা হয়নি। আবাসন ভাতা, চিকিৎসা ভাতায় রাখা হয়েছে বৈষম্য ও অসামঞ্জস্য। স্বাধীনতা ৫০ বছর পরেও একজন শিক্ষকের উৎসব ভাতা ২৫%, বাড়ি ভাড়া ১,০০০/- এবং চিকিৎসা ভাতা ৫০০/- পৃথিবীতে এর চেয়ে নিষ্ঠুর উপহাস আর আছে কী? মফস্বলের বেসরকারি শিক্ষকদের বেতনভাতা দৈনন্দিন বাজারের সঙ্গে কতটা যৌক্তিক, তাদের মাঝে হতাশা ছাড়া আর কিছু আছে কী? কারণ সমকালীন জীবনযাত্রা সামাজিকভাবে বসবাস ও সংসারের দৈনন্দিন খরচা মেটানো অসম্ভব। তার মাঝে কতগুলো প্রথা গ্রথিত হয়েছে। বলা যেতে পারে আনুপাতিক প্রমোশন। বেসরকারি একজন শিক্ষক আজীবন প্রভাষক হয়ে অবসরে যাবেন। এ প্রথা নিরসরে ৫০% সহকারী অধ্যাপক প্রথা চালু করেও সেখানে রাখা হয়েছে আরেকটি হাস্যকর প্রথা- যা হলো জেষ্ঠ্য প্রভাষক। পৃথিবীর কোনো দেশে এ প্রথা আছে কিনা জানা নেই। অন্যদিকে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রাখা চলতি দায়িত্ব তথা (চ. দা.) এগুলো কার মাথা থেকে উদ্ভূত হয়েছে তা বিবেকবর্জিত। নানাচেষ্টা ও বহুমুখী প্রদক্ষেপ গ্রহণ করেও এসব কখনই শিক্ষা ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে পারেনি, বরং দীনতা তৈরি করেছে। সামষ্টিক উন্নতির ক্ষেত্রে এ ধরনের হটকারী সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক। শিক্ষকদের উন্মুক্ত চিন্তা ও গবেষণা করার সুযোগ নেই বরং রয়েছে নির্দিষ্ট অক্ষমতা- যা একটি শ্রেণি ও মতকে প্রশ্রয় দেয়। গণতান্ত্রিক শৃঙ্খলা জাতির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। জনবহুল দেশে মানুষের মাঝে অস্থিরতা বেশি দিন থাকলে তা হয়ে ওঠে বিষফোঁড়া। সুযোগ পায় সিন্ডিকেট ও অসাধু ব্যবসায়ী। বাজারজাতকরণে ক্ষেত্রে তারা জটিল গ্যাং হয়ে ওঠে। চাঁদাবাজি ও লুটপাটের ঘটনা অহরহ ঘটতে থাকে। সাধারণ মানুষ কী চায় স্বস্তি ও বিশ্বাস। একটু স্বস্তিতে থাকতে চায়। বিশ্বাসের অভাবে দৈনন্দিন জীবনে দ্রবমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হলে হিমশিম খায় নিম্ন আয়ের মানুষ। বেতন ও স্কেল বৈষম্যে থাকা চাকরিজীবী মনে করে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে বেঁচে থাকার জন্য খেতে হবে। খাবারের মান ও প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী না পেলে সংকট দিন দিন বাড়তে থাকে। বিবদমান সংকট মোকাবিলায় গণতান্ত্রিক রাজনীতি চর্চা ও নেতা দরকার। বিবদমান সংকটে গণতন্ত্রের জোছনা খুব প্রয়োজন। কারণ পথটা অন্ধকারাচ্ছন্ন, এ যাত্রায় আছে ভবিষ্যৎ রাজনীতির পথ। শাহমুব জুয়েল : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক