প্রতিনিয়ত এমন সব ঘটনা ঘটছে যার ফলে, সমাজে অবক্ষয়ের চিত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। পত্রপত্রিকার পাতা খুললেই খুন, ধর্ষণ, যৌন নির্যাতনের খবর জানা যাচ্ছে- যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলেই প্রতীয়মান হয়। সঙ্গত কারণেই এ সংক্রান্ত পরিস্থিতি আমলে নেওয়া এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প থাকতে পারে না। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা গেল, গত ৮ মাসে ২২৪ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ৮১ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে। আত্মহত্যা করেছে ১৩৩ জন কন্যাশিশু। পানিতে ডুবে মারা গেছে ১৮৭ জন কন্যাশিশু। মূলত 'কন্যাশিশুর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন উপস্থাপন' শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায় জাতীয় শিশুকন্যা অ্যাডভোকেসি ফোরাম। মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজনে সহযোগিতা করে এডুকো বাংলাদেশ।
আমরা বলতে চাই, গত ৮ মাসে ২২৪ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। হত্যা করা হয়েছে ৮১ জন এবং আত্মহত্যা করেছে ১৩৩ জন- যখন এই ধরনের তথ্য উঠে আসছে তখন এর ভয়াবহতা কীরূপ তা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। বরং এসব তথ্য আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখা জরুরি। উলেস্নখ্য, জাতীয় শিশুকন্যা অ্যাডভোকেসি ফোরাম বলছে, তারা ২৪টি জাতীয় দৈনিক, ৪৫টি স্থানীয় দৈনিক ও ৫টি অনলাইন গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত গত ৮ মাসে মোট ২২৪ জন কন্যাশিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এমনকি এক বছর বয়সের শিশুরাও এই জঘন্যতম অপরাধের শিকার হয়েছে। এছাড়া, বেশ কিছু ঘটনা নিকটাত্মীয়ের মাধ্যমে সংঘটিত হয়েছে। ৩২ জন কন্যাশিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। ফলে, এই ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যে পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হয় তা কতটা ভয়ের এবং মানিসক অধপতনের চিত্র সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
এটাও সংশ্লিষ্টদের আমলে নেওয়া দরকার, প্রতিবেদন অনুসারে কন্যাশিশু যৌন হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে পথে-ঘাটে, যানবাহনে, বাজারে, পাবলিক পেস্নসে, এমনকি শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বাসাবাড়িতে হরহামেশা যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে বলেও খবরে উঠে এসেছে। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে, দোষীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। একইসঙ্গে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়াসহ জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা, এই ধরনের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এর মধ্য দিয়ে যে অবক্ষয়ের চিত্র স্পষ্ট হয় তা মানুষের সমাজের বসবাসের স্বাভাবিকতাই নষ্ট করে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। অন্যদিকে, এটাও বিশেষভাবে লক্ষ্য করা জরুরি যে, যে আত্মহত্যাগুলোর ঘটনা এ সময়ে ঘটেছে তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদন বলছে, আত্মহত্যার পেছনে মূলত যে কারণগুলো কাজ করেছে, তা হলো হতাশা, পারিবারিক মতানৈক্য বা দ্বন্দ্ব, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হওয়া, যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণ। ফলে এই বিষয়গুলোকে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করার বিকল্প থাকতে পারে না। অন্যদিকে এই সময় যে ৮১ জন কন্যাশিশুকে হত্যা করা হয়েছে এর অন্যতম কারণ ছিল পারিবারিক দ্বন্দ্ব, শত্রম্নতার জের, ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন ইত্যাদি। ফলে দেখা যাচ্ছে, বড়দের শত্রম্নতারও ঘৃণ্য শিকার হচ্ছে কন্যাশিশুরা। এছাড়া অপহরণ ও পাচারের শিকারও হয়েছে তারা। ফলে, সামগ্রিকভাবে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে তা আমলে নেওয়া অপরিহার্য।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, ধর্ষণের মতো ভয়ঙ্কর ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। মানুষ সভ্য হচ্ছে, শিক্ষার বিস্তার ঘটছে, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে অন্যদিকে, শিশুরা নিরাপদ নয়, যৌন নির্যাতন থেমে নেই- এই বিষয়গুলো অত্যন্ত ভীতিপ্রদ। সঙ্গত কারণেই সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন ঘটনাতে হবে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করাসহ ধর্ষণ, হত্যা, অপহরণের মতো ভয়ংকর ও ঘৃণ্য ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।