শাকসবজি ও ফলে ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি জানতে পৃথক দুটি গবেষণা পরিচালনা করেছে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (বিএফএসএ)। এসব গবেষণায় সবজিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক ও ফলে মিলেছে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ। গত সোমবার রাজধানীতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আয়োজিত গবেষণার ফলাফল অবহিতকরণ সেমিনারে নয়টি সবজিতে হেভি মেটালের উপস্থিতি এবং চারটি ফলে কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ উপস্থিতির ফল জানানো হয়। সম্প্রতি সবজিতে রাসায়নিকের মাত্রা নিয়ে গবেষণা করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম ও ড. মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া। তারা বাজার থেকে নয় ধরনের সবজি সংগ্রহ করেছিলেন। এর মধ্যে ছিল আলু, বেগুন, ঢ্যাঁড়শ, টমেটো, লালশাক, পটোল, বাঁধাকপি, শসা ও মটরশুঁটি। গবেষণায় উঠে এসেছে- লালশাকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে ক্যাডমিয়ামের মতো ভারী ধাতু পাওয়া গেছে। যেখানে ক্যাডমিয়ামের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা ১৯০ মাইক্রো গ্রাম প্রতি কেজি, সেখানে লালশাকে পাওয়া গেছে ৭০৪.৩২ মাইক্রো গ্রাম প্রতি কেজিতে। বেগুনে পাওয়া গেছে ২৭৫.৬৬ মাইক্রো গ্রাম, ঢ্যাঁড়শে ৩৪৯ মাইক্রো গ্রাম ও টমেটোতে ১৯৫ মাইক্রো গ্রাম প্রতি কেজিতে। গবেষণা বলছে, ভারী ধাতু দ্বারা দূষিত সবজি সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করা হয় নারায়ণগঞ্জে। আর্সেনিক দ্বারা দূষিত সবজি সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করা হয় শেরপুরে। ক্যাডমিয়ামের ভিত্তিতে সবচেয়ে বেশি ক্যানসারের ঝুঁকিতে আছেন নারীরা। অনুমোদিত মাত্রার চেয়ে বেশি ক্যাডমিয়াম পাওয়া গেছে বেগুন, ঢ্যাঁড়শ, টমেটো ও লালশাকে। গবেষকরা জানান, যেসব সবজিতে হেভি মেটাল রয়েছে সেগুলো দীর্ঘদিন খেলে ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
আমরা মনে করি, ভেজাল, মানহীন ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যপণ্য উৎপাদন, মজুত ও বিক্রয়ের অভিযোগে দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান শুরু করতে হবে। বাংলাদেশের হাজারও সমস্যার মধ্যে অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো খাদ্যে ভেজাল। খাদ্যে ভেজাল আজ আমাদের জাতীয় জীবনে এক মহাদুর্যোগের নাম। অথচ মানুষের সুস্বাস্থ্য ও বেঁচে থাকার জন্য পুষ্টিকর খাবার অতি জরুরি। ফলে, বাংলার মাটি থেকে খাদ্যে জীবনসংহারী ভেজাল মেশায় যারা, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। গড়ে তুলতে হবে সামাজিক প্রতিরোধ।
\হএটা সত্য, বর্তমানে খাদ্যে ভেজাল অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। ফলে, বাংলাদেশের মানুষকে কিডনি রোগ, ক্যানসারসহ নানাবিধ মরণব্যাধি থেকে রক্ষা করতে হলে খাদ্যে ভেজালের বিরুদ্ধে আমাদের সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নেই। দেশে 'খাদ্য নিরাপত্তা' একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উৎপাদন করেই হোক কিংবা আমদানি করেই হোক, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মনে রাখতে হবে, 'খাদ্য নিরাপত্তা' এ দেশের জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। সেই সাংবিধানিক অধিকার সামনে রেখেই 'খাদ্য নিরাপত্তা' নিশ্চিত করতে হবে। এটা সত্য, ভেজাল খাদ্যপণ্য জনস্বাস্থ্যকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। এই প্রবণতা চলতে থাকলে জাতীয় সক্ষমতার ভিত্তি অত্যন্ত দুর্বল করবে। এটা কোনোক্রমেই হতে দেয়া যায় না। এর জন্য প্রয়োজন পরিকল্পিত উদ্যোগ ও কার্যকর পদক্ষেপ।