ফের শ্রমিক বিক্ষোভ যথাযথ পদক্ষেপ নিন
প্রকাশ | ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
যে কোনো কারণে যদি শ্রমিক বিক্ষোভ, কলকারখানা বন্ধ কিংবা শ্রমিক অসন্তোষসহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে থাকে, যদি উৎপাদন ব্যাহত হয়, তবে তা উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে- যা আমলে নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে ফের শ্রমিক বিক্ষোভে আশুলিয়া উত্তাল হওয়ার খবর উঠে এসেছে। জানা যাচ্ছে, নূ্যনতম বেতন ২৫ হাজার টাকায় উন্নীত করাসহ নানা দাবিতে সোমবার শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় আবার সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করছেন পোশাক শ্রমিকরা। এতে আশুলিয়ায় ৫১ পোশাক কারখানা বন্ধ রয়েছে বলেও জানা গেছে। তথ্য মতে, শ্রমিক অসন্তোষের জেরে সোমবার অন্তত ৪৩টি পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে; আটটি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া, গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি খাদ্য উৎপাদন কারখানার বিক্ষোভের সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ছয়জনকে আটক করেছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। শিল্প খাতে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে তা কোনোভাবেই সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। এটাও বলা দরকার, এর আগে শিল্প খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, বেশ কিছু দিন ধরেই গাজীপুর ও আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার শিল্পকারখানাগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষকে ঘিরে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সড়ক অবরোধ, শিল্পকারখানা ভাঙচুর, এমনকি অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছিল। অন্যদিকে, কারখানায় শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলমান থাকায় বিপুলসংখ্যক বিদেশি ক্রয়াদেশ (অর্ডার) বাতিল হওয়ারও উপক্রম হয়েছিল। ফলে আবার যখন বিক্ষোভ ও কারখানা বন্ধর বিষয়টি জানা যাচ্ছে তখন পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ সমীচীন বলেই প্রতীয়মান হয়।
উলেস্নখ্য, শিল্প পুলিশ জানিয়েছে- সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের নরসিংহপুর এলাকায় জেনারেশন নেক্সট পোশাক কারখানার কয়েক হাজার শ্রমিক এক মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এছাড়া এর আগে, রোববার দুপুরের পর বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা হা-মীম, শারমিন, নাসা ও আল মুসলিম ডেকো গ্রম্নপের পোশাক কারখানাগুলোতে হামলা চালায়। এ সময় তারা কারখানার প্রধান গেট ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে অন্যান্য শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে বেরিয়ে আসতে বাধ্য করেন। এ পরিস্থিতে রোববার সন্ধ্যায় টঙ্গী আশুলিয়া সড়কের দুই পাশের প্রায় ৪৩ পোশাক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে প্রধান গেটে নোটিশ দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। সোমবার সকালে ৮ পোশাক কারখানায় শ্রমিকরা কাজে যোগ দিলেও দুপুরের পর কারখানাগুলোতে শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করার বিষয়টিও সামনে এসেছে।
আমরা বলতে চাই, কারখানা বন্ধ, বিক্ষোভ, উৎপাদন ব্যাহত এবং শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিলে এই বিষয়গুলো এড়ানোর সুযোগ নেই। কেননা, এ ধরনের পরিস্থিতিতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়া শঙ্কা অমূলক নয়। এর আগে এই শঙ্কাও উঠে এসেছিল যে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে শিল্প খাতে বড় ধস নামবে। এছাড়া এটাও বলা দরকার, এর আগে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে গার্মেন্টস খাতের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকে দাবি করলেও শিল্প পর্যবেক্ষকরা বলেছিলেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি ছিল, কারখানা শ্রমিকদের বিক্ষোভের পেছনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রভাব রয়েছে। শিল্প খাতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য তৃতীয় পক্ষ ইন্ধন দিচ্ছে বলেও জানিয়েছিলেন। ফলে, আবার কারখানা বন্ধ এবং শ্রমিক বিক্ষোভসহ সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংকট নিরসনে উদ্যোগ নিন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বলেছেন, তারা বিভিন্ন দাবিতে কারখানার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কয়েকবার বসলেও কর্তৃপক্ষ দাবিগুলো মেনে নেয়নি। পোশাক খাতে শ্রমিকদের নূ্যনতম বেতন ২৫ হাজার টাকা করার জন্য কয়েকবার আন্দোলন করা হলেও কারখানা কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে না নিয়ে টালবাহানা করছে বলেও জানিয়েছেন। সঙ্গত কারণেই- কারখানা বন্ধ, শ্রমিক অসন্তোষসহ সৃষ্ট পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। এছাড়া যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি রোধে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।