দুর্বল ব্যাংক সুরক্ষা

এ উদ্যোগ ইতিবাচক

প্রকাশ | ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
তীব্র তারল্য সংকটে থাকা পাঁচটি ব্যাংকে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে; তুলনামূলকভাবে সবল ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে আন্তঃব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে টাকা ধার নেওয়ার বিষয়ে তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক জামিনদার বা গ্যারান্টর হিসেবে ভূমিকা পালন করবে। এই সুবিধা দেওয়ার বিনিময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সামান্য কমিশন যদিও নেয়; তাহলেও ঝিমিয়ে পড়া ব্যাংকগুলোর যে করুণ দশা দেখা যাচ্ছে, তা থেকে উত্তরণের সুযোগ হয়ত তৈরি হবে। রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করা পাঁচ ব্যাংক হলো- বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও গেস্নাবাল ইসলামী ব্যাংক। শেখ হাসিনার সরকার পতনের আগ পর্যন্ত ব্যাংকগুলো বহুল আলোচিত-সমালোচিত এস আলম গ্রম্নপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। সরকার পতনের পর এগুলোর পর্ষদ এস আলম মুক্ত করা হয়। আগের সব পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয় নতুন পরিচালকদের। ব্যাংকগুলো টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তাদের আন্তঃব্যাংক লেনদেনের মাধ্যমে তারল্য সহায়তা দেওয়ার উপায় বাতলে দিয়েছিলেন অন্তর্র্বর্তী সরকারের নিয়োগ দেওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এখন এসব দুর্বল ব্যাংক সবল ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে তারল্য সহায়তা নেওয়ার চেষ্টা করবে। সবল ব্যাংক সহায়তা দিতে রাজি হলে তখন তা গ্রহণ করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে। গ্রাহকদের অভিমত. তারা বেশ কয়েকদিন ধরে টাকা তোলার চেষ্টা করছিল কিন্তু পাচ্ছিল না। দুর্বল ব্যাংক গ্রাহকদের চাহিদামতো টাকা দিতে পারছিল না। তারা ৫০ হাজার টাকা তুলতে এসে উঠাতে পারতো মাত্র ২০ হাজার টাকা। অনেককে ফিরে যেতেও হয়েছে। এর প্রধান কারণ ছিল তারল্য সংকট অর্থাৎ নগদ টাকার অভাব। গত সপ্তাহে তারল্য সহায়তা পাওয়ার জন্য আবেদন করে এসব ব্যাংক। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতেই বাংলাদেশ ব্যাংক গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার তারল্য সহায়তা দেওয়ার অনুমোদন দেয়। এটা সত্য সরকার পতনের পর থেকে তারল্য সংকটের চূড়ায় পৌঁছে যায় এসব দুর্বল ব্যাংক। গ্রাহকরা পড়েন ভোগান্তিতে। এখনো ব্যাংকগুলো স্বাভাবিক লেনদেনে ফিরতে পারেনি। এক সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাংকগুলোর একটি ছিল ইসলামী ব্যাংক। এস আলম গ্রম্নপের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর মন্দ ঋণ ও বাড়তে থাকা লেখাপি ঋণে জর্জরিত ব্যাংকটিও তারল্য সংকটসহ নানা অব্যবস্থাপনায় ডুবতে থাকে। অনেক দিন থেকেই দেশের ব্যাংক খাতে অস্থিরতা চলছে। বাংলাদেশে ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ব্যাংক খাতে ৯২ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে বলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডি জানিয়েছে। গত ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে ২৪টি বড় কেলেঙ্কারির মাধ্যমে এ অর্থ হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে সংস্থাটি বলছে। আত্মসাৎ হওয়া অর্থের পরিমাণ চলতি অর্থবছর মানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশ এবং দেশের মোট জিডিপির দুই শতাংশের সমান। গত ১৬ বছরে শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে দেশের আর্থিক খাতের অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনার কারণেই এমনটি হয়েছে। দেশের দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সুরক্ষা দেয়ার এ উদ্যোগ ইতিবাচক। আশা করছি, এবার দুর্বল ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট কেটে যাবে এবং গ্রাহকরাও শঙ্কামুক্ত হবেন।