শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১

সম্পদ বিবরণী দাখিল আবশ্যক

সুষ্ঠু বাস্তবায়ন হোক
  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
সম্পদ বিবরণী দাখিল আবশ্যক

দুর্নীতি যে কোনো ধরনের উন্নয়ন বা অগ্রগতির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক। ফলে, দুর্নীতির লাগাম টানতে কিংবা যে কোনো ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার প্রশ্নে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হলে তা আশাব্যঞ্জক বলেই প্রতীয়মান হয়। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, দেশের সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে (আইনানুযায়ী সবাই কর্মচারী) প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে হবে। যদিও এ বছর ৩০ নভেম্বরের মধ্যে তা দাখিল করতে হবে। নির্ধারিত ছকে (ফরম) নিজ নিজ মন্ত্রণালয় বা দপ্তরে সম্পদ বিবরণী জমা দিতে হবে। আর এটাও জানা যাচ্ছে যে, এটি সব কর্মচারীর জন্যই বাধ্যতামূলক। এমনকি সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভুল তথ্য দিলে বিধিমালা অনুযায়ী শাস্তি হবে। তিরস্কার থেকে শুরু করে পদোন্নতি আটকে যাওয়া, বরখাস্ত, বাধ্যতামূলক অবসর বা চাকরি থেকে অপসারণের মতো ব্যবস্থাও নেওয়া হতে পারে। মূলত রোববার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান।

আমরা বলতে চাই, সারাদেশে ১৫ লাখের মতো সরকারি কর্মচারী আছেন। ফলে, তাদের সম্পদের হিসাব দাখিল করার মধ্য দিয়ে স্বচ্ছতা আসুক এবং এই কার্যক্রমের সুষ্ঠু বাস্তবায়ন হোক- যেন এর মধ্য দিয়ে দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরা যায়। উলেস্নখ্য, সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালাড়-১৯৭৯ (পরে ২০০২ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী সব সরকারি কর্মচারীর জন্য সম্পদ বিবরণী দাখিল করা আবশ্যক। বিদ্যমান নিয়মে, প্রত্যেক সরকারি কর্মচারীকে চাকরিতে প্রবেশের সময় স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তির ঘোষণা দিতে হয়। এরপর পাঁচ বছর অন্তর সম্পদের হ্রাস-বৃদ্ধির বিবরণী নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরকারের কাছে জমা দেওয়ার নিয়ম। কিন্তু এ ক্ষেত্রে এটা এড়ানোর সুযোগ নেই যে, দুর্নীতি রোধ এবং চাকরিজীবীদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে আচরণ বিধিমালায় এমন নিয়ম থাকলেও কাগজের এই নিয়ম মানা হতো না বললেই চলে। এমনকি এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে একাধিকবার চিঠি দিলেও কোনো অগ্রগতি হয়নি বলেই জানা যায়। ফলে, যখন অন্তর্র্বর্তী সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সব সরকারি কর্মচারীকে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে হবে- তখন এর যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা তৎপর থাকুক এবং দুর্নীতি রোধ ও চাকরিজীবীদের জবাবদিহি নিশ্চিত হোক।

জানা গেছে, ইতোমধ্যে সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়ার বিষয়ে একটি ফরম বা ছক তৈরি করা হয়েছে। ক্যাডার বা নন-ক্যাডার কর্মকর্তা তার নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সচিবের কাছে সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে হবে। আর গেজেটেড বা নন-গেজেটেড কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজ নিজ নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের সম্পদ বিবরণী দাখিল করতে হবে। এছাড়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পদ বিবরণী জমা দিতে ব্যর্থ হলে অথবা কোনো ভুল তথ্য বা তথ্য গোপন করলে বা সম্পদের কোনোরূপ অসংগতি দেখা গেলে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা অনুযায়ী বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফলে, সার্বিক বিষয়গুলো আমলে নিয়ে যথাযথ উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি।

এটাও জানা যাচ্ছে, আদালতের আদেশ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া সম্পদ বিবরণীর তথ্য সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ হস্তান্তরযোগ্য নয়। এ ছাড়া সম্পদ বিবরণী অতি গোপনীয় দলিল বিধায় এ ক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ প্রযোজ্য হবে না। অন্যদিকে, উলেস্নখ্য যে, আয়করযোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতি বছরই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আয়কর বিবরণী জমা দেন, যেখানে সম্পদের বিবরণীও উলেস্নখ করার বিধান রয়েছে। তবে এটির সঙ্গে সব সরকারি কর্মচারীর সম্পদ বিবরণীর সম্পর্ক নেই বলে জানান সচিব। অর্থাৎ সব কর্মচারীকে সম্পদ বিবরণী জমা দিতে হবে।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বিভিন্ন সময়ে দুর্নীতি নিয়ে যে খবরাখবর প্রকাশিত হয়েছে তা কতটা উদ্বেগ উৎকণ্ঠার বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে, যখন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব বলেছেন, তিনি আশাবাদী, এটি দুর্নীতিতে একটি লাগাম টানা হবে- তখন এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নে সব ধরনের প্রচেষ্টাও অব্যাহত রাখতে হবে। সবক্ষেত্রে দুর্নীতির মূলোৎপাটন জরুরি। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে তার বিকল্পও নেই। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে