দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আশঙ্কাজনক- এই আলোচনা বিভিন্ন সময়েই উঠে এসেছে। এছাড়া ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ, আর কার্যকর উদ্যোগের অভাবে দিন দিন এডিস মশার উৎপাত বেড়েছে এমন আলোচনাও নতুন নয়। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, সারাদেশে ডেঙ্গুর ভয়াল থাবায় গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ডেঙ্গু নিয়ে আরও ৮৪৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এতে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ১০৮ জন। এ সময় নতুন করে আরও একজনের মৃতু্য হয়েছে। এক্ষেত্রে বলা দরকার, এ নিয়ে চলতি বছরে মশাবাহিত রোগটিতে মৃতু্যর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২৫ জনে। উলেস্নখ্য, শনিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক নিয়মিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। একদিকে জানা যাচ্ছে, সারাদেশে ডেঙ্গুর ভয়াল থাবা অন্যদিকে, কক্সবাজারে বর্ষার শেষেও গাণিতিক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু- এমন তথ্য উঠে আসছে। ইতোমধ্যে জেলায় ৬ হাজারের বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগী বাড়ায় জেলাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। এ অবস্থায় স্থানীয়রা এডিস মশা নিধনেরও দাবি জানিয়েছেন। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও জানিয়েছেন, কক্সবাজার শহরে ডেঙ্গুর প্রকোপ উচ্চহারে বাড়ছে।
আমরা বলতে চাই, ডেঙ্গু সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি এড়ানোর সুযোগ নেই, আক্রান্ত ও মৃতু্য- এসব তথ্য আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি। স্মর্তব্য, এডিসবাহিত এই রোগ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহণও অপরিহার্য। এছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য যেখানে এডিস মশা জন্ম ও বৃদ্ধি পায় সেখানে যেমন ধ্বংস করা দরকার, এর পাশাপাশি জনসচেতনতা বাড়াতেও কার্যকর উদ্যোগ জরুরি। আমরা মনে করি, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বিবেচনায় রেখে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এটা ভুলে যাওয়া যাবে না, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ডেঙ্গু রোগের প্রভাব কমবে না। অন্যদিকে, যেহেতু ডেঙ্গু থেকে রক্ষা পাওয়ার কোনো প্রতিষেধক বা টিকা নেই, তাই সুরক্ষিত থাকার একমাত্র পন্থা হলো মশার কামড় থেকে নিজেকে সুরক্ষা রাখা এটাও আলোচনায় এসেছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
লক্ষ্যণীয় যে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ২৩ হাজার ১০৮ জন। তাদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ২ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৮ শতাংশ নারী। এ সময় মারা যাওয়া ১২৫ জনের মধ্যে ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ নারী এবং ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশ পুরুষ। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রতি বছর বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। আর ২০২৩ সালের জুন থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। স্মর্তব্য, এর আগে এমন আলোচনাও উঠে এসেছে- বিভিন্ন কারণে পরিত্যক্ত বাসাবাড়িসহ বিভিন্ন জায়গা দেখভাল ভালোভাবে হয় না। এতে বিভিন্ন জায়গায় এডিসের ঘনত্ব দেখা দেয়। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের কার্যক্রম চালু রাখতে হবে এবং অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, সারাদেশে ডেঙ্গুর ভয়াল থাবার বিষয়ে যেসব তথ্য উঠে আসছে তা আমলে নিতে হবে। ডেঙ্গু সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। সামগ্রিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ নিশ্চিত করা জরুরি। এছাড়া ডেঙ্গু রোধে প্রয়োজনীয় সচেতনতা বাড়ানোসহ পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ এবং তার বাস্তবায়নও নিশ্চিত করতে হবে। বলা দরকার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ও মৃতু্যর তথ্য রাখে ২০০০ সাল থেকে। এর মধ্যে ২০২৩ সালে এ রোগ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃতু্যও হয় ওই বছর। সঙ্গত কারণেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি আমলে নিয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক এমনটি কাম্য।