শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি

  ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি

বিদেশি ঋণ বাড়লে সেটি এড়ানোর সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বিদেশ থেকে নেওয়া বাংলাদেশের ঋণ আবারও শত বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। তথ্য মতে, জুন শেষে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১০৪ বিলিয়ন ডলার। উলেস্নখ্য, এর আগে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে মোট বিদেশি ঋণ ছাড়িয়েছিল ১০০ বিলিয়ন ডলার। চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিক শেষে ঋণ নেওয়ার চেয়ে পরিশোধ বাড়লে তা কমে হয়েছিল ৯৯ দশমিক ৩১ বিলিয়ন। আমরা মনে করি, বিদেশ থেকে নেওয়া বাংলাদেশের ঋণ আবারও শত বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে বলে যখন জানা যাচ্ছে, তখন এটি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।

লক্ষণীয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের বুধবার প্রকাশিত হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে বিদেশ থেকে নেওয়া সরকারি ও বেসরকারি খাতের মোট বিদেশি ঋণের স্থিতি ছিল ১০৩ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী দেশীয় মুদ্রায় যা ১২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৮০ কোটি টাকার সমান। এর মধ্যে সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের পরিমাণ ৮৩ দশমিক ২১৫ বিলিয়ন ডলার এবং বেসরকারি খাতের কোম্পানির বিদেশি ঋণের পরিমাণ ২০ দশমিক ৫৭৪ বিলিয়ন ডলার। জানা যায়, বড় বড় প্রকল্প ও অবকাঠামো খাতের উন্নয়ন কাজে হাত দিয়ে ক্ষমতাচু্যত আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দেড় দশকের শাসনামলে বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে।

আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি এটাও লক্ষ্যণীয় যে, বিশ্লেষকরা বলছে- সাবেক সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনা যথাযথ না থাকায় দেশি ও বিদেশি উভয় উৎস থেকে বেশি পরিমাণে ঋণ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া এটাও খবরে উঠে এসেছে যে, বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে যদিও বৈদেশিক মুদ্রায় বিদেশি ঋণ নেওয়াকে সব সময় স্বাগত জানান অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা। এসব ঋণের একটা অংশ দর কষাকষি বা কম বাছবিচার করে নেওয়ার সমালোচনাও রয়েছে। শেষের দিকে উন্নয়ন কাজের চাপ সামাল দিতে উচ্চ সুদে ঋণ নেওয়ার বিষয় নিয়েও সমালোচনা করেছেন বিশ্লেষকরা। ফলে, এই বিষয়গুলো আমলে নিতে হবে। বিদেশি ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেছেন, 'বিদেশি ঋণ বেড়ে গেলে কিছুটা তো ঝুঁকি বেড়ে যায় দেশের। বর্তমান ঋণ স্থিতি আমাদের মতো দেশের জন্য অধিক বেশি ঋণ হয়ে গেছে। যদিও এসব ঋণ নেওয়া হয়েছিল বড় বড় প্রকল্পের জন্য। ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে আগের সরকার ঠিকমতো পরিকল্পনা করেছে কিনা তা জানা নেই।' এছাড়া, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বাড়ছে না। বৈদেশিক মুদ্রা না বাড়লে তো ঋণ পরিশোধে সমস্যা হবে এই বিষয়টি আলোকপাত করে রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয় বাড়ানোর পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগও বাড়াতে হবে বলেও মত দেন।

আমরা বলতে চাই, বিদেশি ঋণ সংক্রান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে হবে। বিদেশি ঋণ বৃদ্ধির যে ঝুঁকি সেটিসহ সার্বিক পরিস্থিতিকে সামনে রেখে পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয় বাড়ানোসহ করণীয় নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে। ঋণ সংক্রান্ত তথ্যে জানা যায়, ২০২১ সালে মোট ঋণ নেওয়া হয় ৯ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার- যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। এছাড়া, ২০২২ সালে ৪ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২৩ সালে সরকারের বিদেশি ঋণ বেড়েছে সাড়ে সাত বিলিয়ন ডলার- যা বছরওয়ারি হিসাবে তৃতীয় সর্বোচ্চ। ফলে, ঋণ সংক্রান্ত পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।

সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, একদিকে বিদেশ থেকে নেওয়া বাংলাদেশের ঋণ আবারও শত বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে বলে জানা যাচ্ছে; অন্যদিকে, ঋণ বৃদ্ধিতে ঝুঁকি সংক্রান্ত বিষয় আলোচনায় আসছে। ফলে, সামগ্রিক পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। ঋণ সংক্রান্ত অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় ঠিক করতে হবে। রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয় বাড়ানোসহ যে সব বিষয় আলোচনায় আসছে সেগুলো আমলে নিতে হবে। সার্বিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে