কামড়াকামড়ির চিত্র বদলেছে কি?

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

ওমর ফারুক ঢাকা
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল টানাটানি করছে। আপনাদের জানিয়ে রাখি, তারা কোনো দলের নয়! তারা আমাদের দেশের জন্য শহীদ হয়েছেন। তারা তাদের মাতৃভূমিকে ভালোবেসে জীবন ত্যাগ করেছেন। তারা বৈষম্য সহ্য করতে না পেরে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তারা নিজের দেশকে মায়ের মতো সম্মান জানিয়ে বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েছেন। তারা অত্যাচার, নির্যাতন ও দুর্নীতিবাজদের রুখে দিতে শেষ হাসি হেসে মানচিত্র পুনরুদ্ধার করেছেন। তারা স্বৈরশাসক মুছে ফেলতে পৃথিবীকে বিদায় জানিয়েছেন। তারা উত্তপ্ত মরুভূমি ও জায়াগান্টিক সমুদ্র থেকে দেশকে রক্ষা করেছেন। তারা নির্দিষ্ট দলের নয়, বাংলাদেশের সবার। দয়া করে তাদের নিয়ে রাজনীতি করবেন না। শহীদরা আমার আপনার সবার। শহীদরা আমাদের শান্তিতে রাখতে মরণের স্বাদ গ্রহণ করছেন। কামড়াকামড়ির রাজনীতি বন্ধ করুন। টানাহেঁচড়ার রাজনীতি বন্ধ করুন। মানুষের জীবন নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করুন। না হয় কী করতে হবে আমাদের জানা আছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শহীদদের নিয়ে রাজনীতি বন্ধ না করলে আমরা আবারও জমায়েত হব। মঞ্চে দাঁড়িয়ে স্পিকার সামনে রেখে অনর্গল উল্টোপাল্টা মিথ্যা বলার রাজনীতি আমরা চাই না?বৈষম্য ও দুর্নীতির সমুদ্রে ভাসা রাজনীতি আমরা চাই না। বাকশক্তি গলা চেপে হত্যা করা রাজনীতি আমরা চাই না। গুম, খুন ও আহাজারির রাজনীতি আমরা চাই না। নিজের দলকে আগে ঠিক করুন। আমি সব রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্য বলতে চাই। কিভাবে দেশকে শান্তি রাখা যায় সেই কথা ভাবুন। দালাল টাইপের, দুর্নীতিবাজ, স্বজনপ্রীতি, সকাল-সন্ধ্যা কথার অমিল ও নিজের পকেট রাজনীতি বন্ধ করবেন। দেশের কোটি কোটি জনগণের কথা ভাববেন। নিজের স্বার্থের কথা ভেবে রাজনীতিতে আগাবেন না। দেশের জনগণ এখন কিছুতে ভয় পায় না সবাই মরতে, লড়তে, মারতে, হারাতে, রুখতে, দৌড়াতে ও বিকল্প তৈরি করতে শিখে গেছে। বিশেষ করে এই আধুনিক জেনারেশনকে আবদ্ধ করে রাখা যাবে না। কুচকুচে অন্ধকারে ফেলে রাখা যাবে না। সূর্যের তাপে পুড়ে না এখন পোড়াতে শিখে গেছে। সময় থাকতে সাবধান হোন। মৃত শহীদ নিয়ে গড়মিল করবেন না। শহীদ নিয়ে নোংরা পরিবেশ সৃষ্টি করবেন না। নির্দিষ্ট দলের বলে তাদের সম্মান কমানোর চেষ্টা করবেন না। তাদের সবাইকে ভালোবাসতে দিন। দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের কথা চিন্তা করুন। দেশের সব ধর্মের মানুষকে একত্রে রাখুন। সবার কথা শুনুন। সব ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, সূত্র, সামুদ্রিক ও পাহাড়ি সবার সামগ্রিক কথা ভাবুন। এই দেশ সবার। এই দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সবাইকে সমবেত করতে হবে। বিশ্ব দরবারে নেতৃত্ব দিতে হলে সবাইকে হাতে নিয়ে কাজ করতে হবে। অপ-রাজনীতি না করে একজন সুস্থ মস্তিষ্কের রাজনীতিবিদের মতো কাজ করুন। হইচইপূর্ণ পরিবেশ তৈরি না করে সুশৃঙ্খল বিন্যাসে বিন্যাস করুন। বিভিন্ন সেক্টরের সিন্ডিকেট এখনো চলমান। সিন্ডিকেটগিরি বিনষ্ট করে দিন। এসব বন্ধ করুন। নিজের দলের লোকদের আগের ইতিহাস থেকে শিক্ষা দিন। যে দল হবে হোক আগে মানুষের জন্য মানুষ তা বোঝান। দেশের যে কোনো প্রান্তের বাঙালি আমাদের ভাই ও বোন তা মগজে গেঁথে নিন। দেশের যে কোনো ধর্মের মানুষ এই দেশের জনগণ সমান সুযোগ-সুবিধা পাবে তা ব্যাখ্যা করে নিজের মানুষকে বোঝান। হিংসাত্মক নৈরাজ্য সৃষ্টি না করে ভালোবাসতে হবে তা প্রচার করুন। কোনো বিপদ এলে দেশে তা সবাইকে নিয়ে মোকাবিলা করার অভ্যাস গড়ে তুলুন হৃদয়ে। কামড়াকামড়ি ও কাদা ছোড়াছুড়ি করবেন না আশা করি। এই দেশের জনগণ সব বুঝে জানে ও করতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যা সময় আছে তার মধ্যে রাজনৈতিক দলের উচিত দলকে নতুন কিছু শিক্ষা দেওয়া। এই দেশ আগের মতো নাই। এই জেনারেশন দিয়ে সব সম্ভব। দেশের প্রয়োজন হলেই মুহূর্তেই দাঁড়িয়ে যাবে রাস্তায়। রাজপথ কাঁপিয়ে তুলবে আবারও। সব অপশক্তি, অরাজকতা, নৈরাজ্য, বৈষম্য, উশৃঙ্খল এবং কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করতে বেশি সময় নেবে না এই টগবগে জেনারেশন। সুতরাং সবার উচিত দেশের কথা ভাবা। দেশের মানচিত্র নিয়ে গবেষণা করা। দেশের পাহাড়, সমুদ্র, স্থল ও জল বিভাগ নিয়ে জ্ঞান রাখা। মানুষকে মানুষের মতো ভালোবাসা। বাংলার ভূখন্ড থেকে বিশ্বমানের নেতৃত্ব খুঁজে বের করা। দেশের স্বার্থে এক হওয়া। এই দেশকে গড়ে তোলার দায়িত্ব আপনার আমার সবার। অনেক সময় শিক্ষা আশপাশ থেকে নিতে হয়। বেশিদূরে যাইতে হয় না। আপনারা ভালো কাজের প্রতিযোগিতা করুন। মানুষকে সুন্দর পরিবেশে রাখার তাড়না তৈরি করুন। সবাইকে সমান অধিকার দেওয়ার চিন্তাভাবনার মনোনিবেশ করুন। দেখবেন জনগণ আপনাদের খুঁজে বের করে ফেলবে। গভীর বনে থাকলেও আপনাকে ভালোবাসবে। অতল সমুদ্রের মধ্যে থাকলে টেনে এনে পাশে থাকতে বলবে। রক্তপিপাসু না হয়ে রক্ত দিতে শিখুন। যুদ্ধ না লাগিয়ে মানুষের মধ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনুন। মানুষ তথা জনগণ আপনাকে হৃদয়ে জায়গা দেবে। এতে আপনি বা আপনারা দেশের মঙ্গল বয়ে আনতে পারবেন। তা না হলে মানুষ জানে কি করতে হবে। ওমর ফারুক ঢাকা