রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের প্রাপ্য সম্মান দিন

প্রকাশ | ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

সেতু খানম শিক্ষার্থী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স, আজকের বিশ্বে উন্নয়নশীল অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য এক চালিকাশক্তি। উন্নয়নশীল দেশগুলোতে যখন আর্থিক সংকট নেমে আসে, তখন প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স হয়ে ওঠে অর্থনীতির জন্য অক্সিজেন। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। আমাদের দেশের অর্থনীতির বড় একটি অংশ নির্ভর করে প্রবাসী আয়ের ওপর। বর্তমানে বিশ্বের ১৭৬টি দেশে প্রায় এক কোটি ৫৭ লাখ বাংলাদেশি কর্মরত আছেন, যারা প্রতিবছর গড়ে ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশে পাঠান। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তাদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ ছিল প্রায় ২৫৪ কোটি ২০ লাখ ডলার। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এই রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের যথাযথ মর্যাদা আমরা এখনো দিতে পারিনি। প্রবাসে যাত্রার আগে ও পরে বিভিন্ন ধাপে তাদের সম্মুখীন হতে হয় নানা হয়রানির। অতিরিক্ত টিকিটের দাম, ভিসা জটিলতা থেকে শুরু করে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে তাদের সঙ্গে ঘটে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও। এমনকি প্রবাসে মৃতু্যবরণকারী কর্মীদের দেশে ফেরত আনতে তাদের পরিবারকে অমানবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়। এই প্রবাসীযোদ্ধারাই দেশের অর্থনৈতিক সংকটের সময় ঢাল হয়ে দাঁড়ান। বিশেষত ডলার সংকটের মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রবাসী আয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। অথচ তাদের উপেক্ষা করে দেশকে এগিয়ে নেওয়া অসম্ভব। তাদের কল্যাণে কিছু সামাজিক সংগঠন এগিয়ে এলেও, এখনো তাদের অধিকাংশ দাবিই পূরণ হয়নি। সম্প্রতি 'রেমিট্যান্স ফাইটার্স' নামক একটি সংগঠন প্রবাসীদের ১০টি দাবি উপস্থাপন করেছে। তাদের অন্যতম দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- অনলাইন ভোটিং সিস্টেম চালু করা, রেমিট্যান্স সার্টিফিকেট প্রদান, ভিসা ও টিকিটের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ এবং দেশে ফিরে ব্যবসায় উদ্যোগে আর্থিক সহায়তা দেওয়া। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর থেকে বিভিন্ন মহল নিজেদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরছে। তবে প্রবাসীদের অধিকার ও সম্মান এখনো সঠিকভাবে ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় প্রবাসীরা দেশের পাশে দাঁড়িয়ে যে অবদান রেখেছিলেন, তা সহজে ভোলার নয়। দেশে অর্থ পাঠানো বন্ধ করে তৎকালীন সরকারকে আর্থিক চাপে ফেলে দিয়েছিলেন তারা। এমনকি অনেক প্রবাসী রাস্তায় নেমে আসার কারণে কারাগারে পর্যন্ত যেতে হয়েছিল। এ ধরনের দেশপ্রেমিকদের প্রাপ্য সম্মান ফিরিয়ে দেওয়া আজকের সময়ের দাবি। এই রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের দাবিগুলো পূরণ করা আজ শুধু প্রয়োজন নয়, নৈতিক দায়িত্বও। দেশের উন্নয়নের এই মেরুদন্ডকে যথাযথ সম্মান ও সহায়তা দিতে হবে। তাদের পাশে থেকে দেশের অগ্রযাত্রাকে বেগবান করতে হবে। দেশপ্রেমিক এই যোদ্ধাদের আর উপেক্ষা করা যাবে না। পরিশেষে বলা যায়, প্রবাসীদের জন্য সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার এখনই সময়। তাদের দাবিগুলো পূরণ করে, তাদের প্রাপ্য মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ আরও সমৃদ্ধ করতে পারব। সেতু খানম শিক্ষার্থী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া