দেশে যাতায়াত জনিত দুর্ঘটনা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো অঞ্চলে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। বিশেষ করে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতু্যর বিভীষিকা থেকে কিছুতেই যেন রক্ষা নেই এ দেশের মানুষের। কিন্তু ভয়াবহ এ দুর্ঘটনাগুলো কেন হচ্ছে কারা এজন্য দায়ী তা শনাক্ত করে দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনোযোগ ও তৎপরতা চোখে পড়ছে না। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করার কারণেই এর পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণেই এ দেশের মানুষ আপনজন হারিয়ে চোখের পানি ঝরাচ্ছে আর নিঃস্ব হচ্ছে অসংখ্য পরিবার। অথচ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ নিলে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব।
বিদায়ী আগস্টে সারাদেশে ৪৬৭টি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় ৪৭৬ নিহত এবং ৯৮৫ জন আহত হয়েছেন। আগস্টে মোটর সাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে সবচেয়ে বেশি। ১৯৩টি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় ২০৬ নিহত, ২০১ জন আহত হয়েছেন। এটা মোট দুর্ঘটনার ৪১ দশমিক ৩২ শতাংশ, নিহতের ৪৩ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং আহতের ২০ দশমিক ৪০ শতাংশ। বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের মাসিক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আগস্টে রেলপথে ১০টি দুর্ঘটনায় ৮ নিহত, ২ জন আহত হয়েছে। নৌপথে ১৩টি দুর্ঘটনায় ৫০ নিহত, ২ আহত এবং ৯ জন নিখোঁজ রয়েছেন। সড়ক, রেল ও নৌপথে সর্বমোট ৪৯০টি দুর্ঘটনায় ৫৩৪ নিহত এবং ৯৮৯ আহত হয়েছেন।এ মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে ঢাকা বিভাগে। ১১৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১২১ নিহত ও ২৬১ জন আহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বরিশাল বিভাগে। ২৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২৬ এবং আহত হয়েছেন ৯৩ জন।
দুর্ঘটনার কারণ হলো- দেশের সড়ক-মহাসড়কে ট্রাফিক পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশের অনুপস্থিতির সুযোগে আইন লঙ্ঘন করে যানবাহনের অবাধ চলাচল; জাতীয় মহাসড়কে রোড সাইন বা রোড মার্কিং, সড়কবাতি না থাকায় এবং অতিবৃষ্টির কারণে সড়কের মধ্যে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি বেড়েছে; জাতীয়, আঞ্চলিক ও ফিডার রোডে টানিং চিহ্ন না থাকার কারণে নতুন চালকের এসব সড়কে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন; মহাসড়কের নির্মাণ ত্রম্নটি, যানবাহনের ত্রম্নটি, ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা; উল্টোপথে যানবাহন চালানো, সড়কে চাঁদাবাজি, পণ্যবাহী যানে যাত্রী পরিবহণ; অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, বেপরোয়া যানবাহন চালানো এবং একজন চালক অতিরিক্ত সময় ধরে যানবাহন চালানো। এসব কারণ এর আগেও উলেস্নখ করা হয়েছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষ সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে দুর্ঘটনায় মৃতু্য রোধ করা যাচ্ছে না।
মনে রাখতে হবে, বড় বড় দুর্ঘটনা থেকে যদি আমরা শিক্ষা নিতে না পারি তবে ভবিষ্যতেও এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে। পরিকল্পিত ও সফল উদ্যোগই কেবল পারে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা রোধ করতে।