পিটিয়ে হত্যা দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে
প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার ঘটনা ঘটলে তা কতটা আশঙ্কাজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গত কারণেই এ ধরনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। প্রসঙ্গত- পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) তোফাজ্জল নামে এক যুবক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তথ্যমতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে 'গণপিটুনিতে' এক যুবককে হত্যা করা হয়েছে। হলের অতিথি কক্ষে বুধবার রাতে ৩২ বছর বয়সি তোফাজ্জল হোসেন নির্যাতনের শিকার হন। ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ জানিয়েছেন, রাত ১২টায় কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই যুবককে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন বলেও দাবি করা হয়।
কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, বুধবার সন্ধ্যায় চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে আটকের পর তাকে গেস্টরুমে নিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। সেখানে দফায় দফায় মারধর করা হয়। পিটুনির পর ক্যান্টিনে নিয়ে খাবারও খাওয়ানো হয় তোফাজ্জলকে এবং সেই ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর আবার চলে দীর্ঘ জেরা আর মারধর। পরে অবস্থার অবনতি হলে তোফাজ্জলকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তোফাজ্জলকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম আহমেদ ওরফে শামীম মোলস্নাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। জানা যায়, ১৫ জুলাই রাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে আন্দোলনরতদের ওপর হামলার ঘটনায় শামীম সামনের সারিতে ছিলেন এমন অভিযোগ তুলে বুধবার বিকালে শিক্ষার্থীরা তাকে আটক করে। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রান্তিক গেট এলাকা থেকে ধরে নিয়ে গণপিটুনি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির কাছে তুলে দেয় শিক্ষার্থীরা। সেখান থেকে শামীমকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা শাখায় নেওয়া হয়। পরে প্রক্টরিয়াল বডি আশুলিয়া থানায় জানালে পুলিশ শামীম মোলস্নাকে আটক করে সাভারের গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করে। আশুলিয়া থানার ওসি জানিয়েছেন, মারধরের শিকার যুবককে উদ্ধার করে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃতু্য হয়েছে।
আমরা বলতে চাই, পিটিয়ে মানুষ হত্যার মতো ঘটনা কতটা ভয়ানক তা আমলে নেওয়া অপরিহার্য। কেউ অপরাধ করলে তার শাস্তি হবে আইন অনুযায়ী কিন্তু আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া হবে, হত্যার ঘটনা ঘটানো হবে- এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। প্রসঙ্গত উলেস্নখ্য, আইন নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। ফলে কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেয় সেই বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে পিটিয়ে হত্যার এ ঘটনাকে আমলে নিয়ে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। জানা গেছে, দুই হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা অবিলম্বে দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন। এ ছাড়া ঢাবিতে হত্যাকান্ডের ঘটনায় মামলা ও তদন্ত কমিটি হয়েছে। ইতোমধ্যে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৬ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করে নিন্দা জানানো হয়েছে। জাবিতে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দোষীদের বিচার চেয়ে বিক্ষোভ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, মব জাস্টিস কখনই ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে না- এমন আলোচনা উঠে এসেছে, যা আমলে নিতে হবে। এ ছাড়া এ হত্যাকান্ডের ঘটনা আমলে নিয়ে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তোফাজ্জলের হত্যার ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আর জাবিতে শামীম হত্যা, শিক্ষকের বাসায় হামলা এবং গত ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পৃথক তিনটি কমিটি গঠন করেছে। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার আটজনকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। যে কোনো অভিযোগ বা অপরাধের ক্ষেত্রে আইনগত পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক, কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নেবে না- এমনটি প্রত্যাশিত।