রাষ্ট্র সংস্কার ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ প্রসঙ্গে
সংবিধান সংস্কার বা পুনর্গঠন যাই বলি না কেন, এর মৌলিক পরিবর্তন সময়ের দাবি। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদের ইতিবাচক সম্ভাবনাকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
প্রকাশ | ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বোরহানউদ্দীন ইউসুফ
ছাত্র-জনতার গণঅভু্যত্থানের পটভূমিতে রাষ্ট্র সংস্কারের দাবি সামনে এসেছে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজন সংবিধানের ব্যাপক সংশোধন ও পরিবর্তন। আবার বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংবিধান পুনর্লিখনই উপযুক্ত সমাধান। নির্বাচন, রাজনীতি, বিচারব্যবস্থা, পার্লামেন্ট, সুশাসন নিয়ে সংকট ও সীমাবদ্ধতার প্রসঙ্গ জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে। রয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদের অনিশ্চয়তাও। বিশ্ববরেণ্য অর্থনীতিবিদ নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মানুষের প্রত্যাশা আকাশচুম্বি। ছাত্র-জনতা গণঅভু্যত্থানের স্পিরিটকে কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারে মাইলফলক কোনো অগ্রগতি অর্জিত হোক, এটা বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর আকাঙ্ক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্র সংস্কারে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ কমিশন গঠনের ষোষণা দেন, যা ১ অক্টোবর থেকে থেকে কাজ শুরু করে তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট দিবে। ছয়টি কমিশন হলো- নির্বাচন কমিশন, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুদক, জনপ্রশাসন এবং সংবিধান। মিডিয়া নিয়ে কমিশন গঠনের বিষয়টি বিবেচনাধীন। ইতোমধ্যে শিক্ষা কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা আলোচিত হচ্ছে।
ক্ষমতা আঁকড়ে থাকতে শাসকের লাগামহীন পদক্ষেপ ও নির্দয় আচরণ আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক ও শাসনতান্ত্রিক দুর্বলতার বহিঃপ্রকাশ। 'কথিত রাজনীতিবিমুখ' নতুন প্রজন্মের জেগে ওঠা রাষ্ট্র সংস্কারের অনিবার্যতাকে সামনে নিয়ে এসছে। চলছে নানামুখী আলোচনা, প্রস্তাব ও বিশ্লেষণ। বাংলাদেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের সুবিধা ও প্রয়োজনীয়তার কথা আলোচিত হচ্ছে। বিশ্বের প্রায় ৪০% পার্লামেন্ট দ্বিকক্ষবিশিষ্ট। গড়ঃযবৎ ড়ভ চধৎষরধসবহঃং খ্যাত যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টকে আদর্শ ধরে বিশ্বের বেশিরভাগ আইনসভা গঠিত হয়েছে। ১৩৪১ সালে প্রথমবার ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টে সাধারণ লোকেরা অভিজাত ও যাজকদের থেকে আলাদাভাবে সভার আয়োজন করেছিল। এর ফলে সংসদে কার্যত উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ গড়ে উঠেছিল। ইংল্যান্ডের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডস এবং নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্স নামে পরিচিত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চকক্ষ সিনেট এবং নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি সভা। ভারতে রাজ্যসভা ও লোকসভা। আমাদের দেশেও সমাজের বিশিষ্টজনদের সমন্বয়ে উচ্চকক্ষ গড়ে তোলার প্রস্তাব এসেছে। যেটি অন্তর্বর্তীকালীন সময় সরকারের হালধরা বা রাষ্ট্র ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ ও ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে।
বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের শুরুতে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে এককক্ষবিশিষ্ট বা এককেন্দ্রিক 'জাতীয় সংসদ' প্রতিষ্ঠিত হয়। '৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মধ্য দিয়ে একদলীয় বাক্শাল প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা ও সংসদের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করার মধ্য দিয়ে এর কার্যকারিতা অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়। এরপর অব্যাহত থাকে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকারব্যবস্থা। '৯০-এর গণঅভুুত্থানে এরশাদের পতনের পর তিন জোটের রূপরেখা অনুয়ায়ী বিজয়ী বিএনপি বাংলাদেশে পুনরায় সংসদীয় সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করে। যদিও বয়কট ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় এর যথাযথ সুফল পায়নি জনগণ।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম বলেন, সংবিধান সংস্কার দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ শুরু করতে হবে। সংবিধানে যেভাবে প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতাহীন করা হয়েছে এবং সংসদকে যেভাবে ক্ষমতাহীন করা হয়েছে, অ্যাটর্নি জেনারেল এবং বিচার বিভাগকে প্রধানমন্ত্রীর অধীনে আনা হয়েছে কিংবা রাষ্ট্রের বিভিন্ন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে নির্বাহী বিভাগের অধীনে নিয়ে আসা হয়েছে- এটার জন্য ব্যাপক সংস্কার লাগবে।
রাষ্ট্র সংস্কারের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক-অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের দাবি জানিয়েছেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) নেতারা। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, 'আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার, সাম্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। কিন্তু আমরা তা থেকে যোজন যোজন দূরে চলে গিয়েছিলাম। নব্বইয়ে তিন জোটের রূপরেখার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র সংস্কারের আরেকটি সুযোগ তৈরি হলেও আমরা সেই সুযোগ হারিয়েছি। তাই ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানের মধ্য দিয়ে এখন যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, তাকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।'
সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও ভোটগ্রহণ পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। তার মতে, মনোনয়ন বাণিজ্য রাজনৈতিক হানাহানির জন্য দায়ী। তাই জনগণ প্রার্থীকে নয়, দলকে ভোট দিবে। তিনি বলেন, নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার করে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদে তাদের নিজ নিজ আসন বরাদ্দের ব্যবস্থা রাখতে হবে। দেখা যায়, সরকারি ও বিরোধীদলের মোট প্রাপ্ত ভোট কাছাকাছি হলেও সংসদে তাদের প্রাপ্ত আসনের বিশাল তারতম্য তৈরি হয়। প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে আসন বিন্যাস হলে সংসদে কারও একচ্ছত্র আধিপত্য তৈরি হবে না।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আলী রীয়াজ বলেন, এই গণঅভুুত্থানের আকাঙ্ক্ষা হলো, দেশকে স্বৈরশাসনমুক্ত করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। জনগণের এই আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে হলে সংবিধানের পুনর্লিখন করতে হবে। যদি কোনো দল নির্বাচনে ৩০০ আসনও পায়, তারাও এই সংবিধান পরিবর্তন করতে পারবে না। সংবিধান সংশোধন কোনো কাজে আসবে না জানিয়ে তিনি বলেন, এটি পুনর্লিখন ছাড়া কোনো উপায় নেই। কারণ, সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে 'ক' ধারায় এমন কিছু জিনিস আনা হয়েছে, যেটি সংশোধন করার কোনো উপায় নেই। তিনি আরও বলেন, সাংবিধানিকভাবে একনায়কতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রীর হাতে অভাবনীয় ক্ষমতা। সহনশীলভাবে মতপ্রকাশ এবং মতপ্রকাশে সংখ্যালঘুর নিশ্চয়তা বিধানই হচ্ছে গণতন্ত্র। আমাদের সেই গণতন্ত্র পুনর্গঠন করতে হবে। তাই সংবিধানে হাত দেওয়া ছাড়া আমি আর কোনো পথ দেখতে পাচ্ছি না। ড. আলী রীয়াজ এ লক্ষ্যে গণপরিষদ বা সংবিধান সভার মাধ্যমে সংবিধান প্রণয়ন, ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দল ও সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা, গণশুনানি ও গণভোটের প্রয়োজনীয়তার কথা জানান। যদিও সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক বলেন, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনে যা যা দরকার, তা বর্তমান সংবিধানেই আছে। বিদ্যমান সংবিধান দিয়েই চাইলে সংকটের সমাধান সম্ভব।
বাংলাদেশের শুরুতে রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা ও অনৈক্য দূর করতে এবং পেশাজীবীদের স্বার্থ সংরক্ষণে প্রথম দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের কথা প্রস্তাব করেন বামধারার বিশিষ্ট তাত্ত্বিক সিরাজুল আলম খান। নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য উচ্চকক্ষসহ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদ গঠন করে নির্বাচন সমস্যার স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব। তিনি বলেন, 'পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হবে ৩০০ সদস্যবিশিষ্ট। আর ২০০ সদস্যবিশিষ্ট উচ্চকক্ষে থাকবেন অদলীয়ভাবে নির্বাচিত বিভিন্ন শ্রম ও পেশার প্রতিনিধিরা। নিম্নকক্ষে থাকবেন নির্বাচনে বিভিন্ন দলের প্রাপ্ত আসনের আনুপাতিক প্রতিনিধি। থাকবেন প্রবাসী, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত, বিভিন্ন প্রাদেশিক পরিষদের (গঠনের পর) প্রতিনিধি, নারীর ক্ষুদ্র জাতিসত্তার প্রতিনিধিরা। তিনি আরও বলেন, 'পার্লামেন্টে গঠিত এই উচ্চকক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার নির্বাচিত হবে এবং ওই সরকার নির্বাচন কমিশন গঠন করলে তা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। নির্বাচন কমিশন হবে পৃথক এবং পূর্ণাঙ্গ। কমিশনের সচিবালয় হবে নির্দলীয় এবং রাজনৈতিক দলের প্রভাবমুক্ত। নির্বাচন কমিশন ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে।'
২০১৬ সালের ১৯ মার্চ দলের জাতীয় কাউন্সিলে বিএনপি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের ইতিবাচক দিক সামনে নিয়ে আসে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তার ঘোষিত ভিশন-২০৩০-এ সংবিধানের এককেন্দ্রিক চরিত্র অক্ষুণ্ন রেখে বিদ্যমান সংসদীয় ব্যবস্থা সংস্কারের অংশ হিসেবে জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করার বিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার কথা জানিয়েছিলেন। তবে জাতীয় সংসদ সত্যিকার অর্থেই হয়ে উঠবে সব জাতীয় বিতর্কের কেন্দ্রস্থল। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্টের যৌক্তিকতা অনুভব করে এর প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন করেছেন। ২০২২ সালের ১৯ জানুয়ারি জিয়াউর রহমানের জন্মদিনের আলোচনায় তিনি বলেন, বিএনপি সরকার গঠন করলে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করবে। যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডসের আদলে দেশের শ্রেণি-পেশা ও বুদ্ধিজীবীদের প্রতিনিধিত্বশীল উচ্চ পরিষদ গঠন করা হবে। বুদ্ধিজীবীদের প্রতি ইঙ্গিত করে তারেক রহমান বলেন, অনেকে সরকারে যোগ দেবেন না, কিন্তু তাদের পরামর্শ আমাদের দরকার। এ জন্য সংসদে উচ্চকক্ষ সৃষ্টি করা হবে। উচ্চকক্ষে এসে তারা তাদের মতামত রাখবেন। ১৩ জুলাই ২০২৩ 'রাষ্ট্র মেরামতে ৩১ দফা কর্মসূচি' তে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট অন্তর্ভুক্ত থাকে।
তারেক রহমান সম্প্রতি ৪ সেপ্টেম্বর দলের ঢাকা বিভাগীয় তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল আলোচনায় দেশের সংস্কার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেন, 'দেশে প্রথাগত রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, কিন্তু দেশ গঠন, উন্নয়ন ও পরিচালনায় অংশ নিতে চান- এমন অসংখ্য জ্ঞানী, গুণী শিক্ষক, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, চিকিৎসক, কারিগরি বিশেষজ্ঞ, মানবতাকর্মী রয়েছেন। কিন্তু বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোতে তাদের পক্ষে সংসদে সদস্য হিসেবে অবদান রাখার সুযোগ নেই। তাদের সেবা আর অবদান দেশের কাজে লাগাতে বিএনপি পৃথিবীর অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও উচ্চকক্ষসহ দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা সংবিধানে সংযুক্ত দেখতে চায়।' তারেক রহমান বলেন, স্বাধীনতার পরপর জাতীয় ঐক্যের শক্তিকে ব্যবহার না করে যে সুযোগ সেদিন হাতছাড়া করা হয়েছে, আগামী দিনে আমরা সেটার পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি আগামীতে জাতীয় সরকারের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা দেখতে চায়। তিনি বলেন, এ দেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্র আর ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে যারা অংশগ্রহণ করেছেন; তারা সবাই আগামীতে দেশ পরিচালনায় অংশগ্রহণ করবেন, যাতে দেশ তাদের অবদানের সুফল থেকে বঞ্চিত না হয়। বিএনপি এককভাবে সরকার গঠন করার সুযোগ পেলেও ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের শরিকদের সমন্বয়ে জাতীয় সরকার গঠনের উদারতা দেখাতে চায়।
'পরিবর্তনের লক্ষ্যে জনসমাজ' ব্যানারে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিকদের একটি সুধী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। তাদের অন্যতম সুপারিশ, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন, নিম্নকক্ষের মেয়াদ যখন শেষ হয়ে যায় অথবা রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ভেঙে দেওয়া হয়, তখন উচ্চকক্ষ থেকে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা। তারা বলেন, সংবিধান পুনর্লিখনে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভুু্যত্থানের চেতনা প্রতিফলন ঘটাতে হবে। পাশাপাশি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ গঠন করতে হবে। তাদের আরেকটি বিশেষ প্রস্তাব হলো- কোনো ব্যক্তি দুই মেয়াদ বা সর্বোচ্চ ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী না থাকা। তারা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য সংস্কার যত সহজ হবে, দলীয় সরকারের পক্ষে তত সহজ হবে না। সংস্কার সম্পন্ন না করে তাড়াহুড়া করে নির্বাচন করলে গণঅভুু্যত্থানের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং জনগণের স্বপ্ন পূরণ বাধাগ্রস্ত হবে। ফলে, ফ্যাসিবাদী প্রবণতা, দুর্নীতি, অবিচার ও অব্যবস্থা, নির্যাতন-নিপীড়ন আবার ফিরে আসতে পারে, যা কাম্য নয়।
সংবিধান সংস্কার বা পুনর্গঠন যাই বলি না কেন, এর মৌলিক পরিবর্তন সময়ের দাবি। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট জাতীয় সংসদের ইতিবাচক সম্ভাবনাকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে।
প্রয়োজনে স্বাধীনতা-উত্তর চারটি বিভাগকে প্রদেশ ঘোষণা দিয়ে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ হতে পারে আরেকটি চমক। রাজনৈতিক পক্ষসমূহ এবং ছাত্রসমাজের প্রতিনিধিদের দূরদৃষ্টি ও বোঝাপড়ার ওপর এর সাফল্য নির্ভর করছে। সবকিছুর ঊর্ধ্বে প্রয়োজন ছাত্র-গণঅভু্যত্থানে অংশগ্রহণকারী সব শক্তির ইস্পাত কঠিন ঐক্য। তবেই যে কোনো সংস্কার, পরিবর্তন ও পরিবর্ধন হবে সহজ ও বাস্তবায়নযোগ্য।
বোরহানউদ্দীন ইউসুফ :প্রধান সমন্বয়কারী কাউন্সিল ফর ন্যাশনাল এজেন্ডা (সিএনএ) ও ফেমা'র সাবেক দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষক