কোনোভাবেই দূষণমুক্ত হচ্ছে না রাজধানী ঢাকা- এমন খবর বারবার সামনে এসেছে। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত খবরে বায়ুদূষণ সংক্রান্ত যেসব তথ্য উঠে এসেছে তাও উদ্বেগজনক। ফলে সামগ্রিকভাবে বায়ুদূষণ পরিস্থিতি আমলে নেওয়ার বিকল্প নেই। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, বায়ুদূষণে বিশ্বের ১২০টি শহরের মধ্যে বুধবার সকাল ৯টার দিকে রাজধানী ঢাকার অবস্থান ছিল পঞ্চম। এ সময় আইকিউএয়ারের বাতাসের মানসূচকে ঢাকার স্কোর ছিল ১০৭। এক্ষেত্রে আমলে নেওয়া দরকার, বাতাসের এই মান সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য 'অস্বাস্থ্যকর' বলে বিবেচনা করা হয়। সংবেদনশীল গোষ্ঠী বলতে বয়স্ক ব্যক্তি, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও অসুস্থ ব্যক্তিরা।
আমরা বলতে চাই, বায়ুদূষণ সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে, একইসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা। উলেস্নখ্য, বায়ুদূষণের পরিস্থিতি নিয়মিত তুলে ধরে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার। বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় এবং সতর্ক করে। ফলে তাদের দেওয়া তথ্যে যখন জানা যাচ্ছে- বায়ুদূষণে বিশ্বের ১২০টি শহরের মধ্যে বুধবার সকাল ৯টার দিকে রাজধানী ঢাকার অবস্থান ছিল পঞ্চম। তখন এটি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে, বুধবার সকাল ৯টার দিকে বায়ুদূষণে প্রথম অবস্থানে ছিল পাকিস্তানের লাহোর। আইকিউএয়ারের সূচকে শহরটির স্কোর ১৭৪।
আমরা মনে করি, সামগ্রিকভাবে বায়ুদূষণ কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বলা দরকার, এর আগে জানা গিয়েছিল বায়ুদূষণ কমাতে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী শীত মৌসুম শুরুর আগেই সরকার ঢাকার বায়ুদূষণ কমানোর উদ্যোগের বিষয়টি সামনে আসে। এক্ষেত্রে ঢাকার চারপাশের অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করাসহ বায়ুদূষণ রোধের ব্যবস্থা না করে নতুন ভবন নির্মাণের লাইসেন্স দেওয়া হবে না। খোলা ট্রাকে বালু বা ইট বহন করা যাবে না বলেও জানা যায়। ফলে, এই বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন জরুরি। এছাড়া, রাস্তায় গাড়ির যত্রতত্র হর্ন বন্ধ করতে পরিবেশ মন্ত্রণালয় অভিযান সংক্রান্ত বিষয়ও আলোচনায় এসেছিল- যা আমলে নিতে হবে।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, বিভিন্ন সময়ে দেশের বায়ুদূষণ সংক্রান্ত যে পরিস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে তা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক। ফলে, বায়দূষণ কমাতে উদ্যোগ গ্রহণের যে বিষয়গুলো সামনে এসেছিল সেগুলোর যেমন যথার্থ বাস্তবায়ন করতে হবে; তেমনি মনে রাখা দরকার, এর আগে এটাও আলোচনায় এসেছে যে, বায়ুদূষণের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ইটভাটাগুলো। পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ প্রকল্পের এক গবেষণায় উঠে এসেছিল যে, সারাদেশে ইটভাটা আছে প্রায় ৮ হাজার। আর ঢাকার আশপাশের এলাকাগুলোতে রয়েছে সাড়ে ৭০০টিরও বেশি। এ ক্ষেত্রে উলেস্নখ্য, ইটভাটাগুলো প্রতি মৌসুমে ২৫ লাখ টন কয়লা ও ২২ লাখ টন জ্বালানি কাঠ পোড়ায়। ইটভাটার দূষণে ৮৮ লাখ ৮৬ হাজার টন গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত হয়। ঢাকার বায়ুদূষণের জন্য ইটভাটা প্রায় ৫৮ শতাংশ দায়ী বলেও তথ্য উঠে এসেছিল। অন্যদিকে, বায়ুদূষণের কারণ হিসেবে নির্মাণকাজ, যানবাহন, সড়ক ও মাটি থেকে সৃষ্ট ধুলার কারণে, বিভিন্ন জিনিসপত্র, পস্নাস্টিক পোড়ানোসহ নানা কারণ উঠে এসেছে। আমরা মনে করি, দূষণের কারণগুলো আমলে নিয়ে দূষণ কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই।
সর্বোপরি বলতে চাই, বুধবার সকাল ৯টার দিকে বায়ুদূষণে বিশ্বের ১২০টি শহরের মধ্যে রাজধানী ঢাকার অবস্থান ছিল পঞ্চম- এটি এড়ানো যাবে না। এছাড়া এর আগে এটাও সামনে এসেছে যে, বায়ুদূষণ বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবেশগত স্বাস্থ্য হুমকি। অন্যদিকে, বায়ুদূষণের কারণে বাচ্চাদের স্বল্প ও দীর্ঘস্থায়ী রোগব্যাধি হয়। ফুসফুসে ক্যানসার, হৃদরোগ, লিভার ও কিডনিতে জটিলতা বাড়তে পারে এমন বিষয়ও জানা গেছে। সঙ্গত কারণেই সামগ্রিক পরিস্থিতি যেমন আমলে নিতে হবে, তেমনি বায়ুদূষণের ভয়াবহতা বিশ্লেষণপূর্বক প্রয়োজনীয় উদ্যোগও অব্যাহত রাখতে হবে। মনে রাখা দরকার, বায়ুদূষণে প্রাণহানি শুধু নয়, নানা ধরনের অসুখ-বিসুখসহ জনসাধারণের জীবনে বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। সঙ্গত কারণেই বায়ুদূষণ সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে বায়ুদূষণ কমাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি।