ঢাকা শহরের যানজট নিরসনে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে মূল সড়কে রিকশার মতো ধীরগতির যানবাহন চলাচল বন্ধের পরামর্শ দিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুজন পরিবহণ বিশেষজ্ঞ। দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ হিসেবে তারা ঢাকায় চলাচলকারী সব বাসকে একটি কোম্পানির অধীনে নিয়ে আসার কথা বলেছেন। অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে বুয়েটের অধ্যাপক মোয়াজ্জেম হোসেন ও অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান এ পরামর্শ তুলে ধরেন। গত সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এই বৈঠক হয়। যানবাহনের মধ্যে ট্রাফিক আইন না মানার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। চলছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন- যা আগেও চলত। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে স্বল্প মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য ছয়টি প্রস্তাব তুলে ধরেন বুয়েটের দুই অধ্যাপক। ১. ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা চালু করা। দুই বিশেষজ্ঞ বলেছেন, বুয়েট প্রাথমিকভাবে সাধারণ মানের সিগন্যাল ব্যবস্থা তৈরি করে দেবে- যা পরবর্তী সময়ে উন্নয়ন করা হবে। ২. গণ- অভু্যত্থানের আগে যেভাবে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করত, তারা যেন সেভাবে কাজ শুরু করে, সে জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। ৩. শহরের মোড়গুলোর ৫০ থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে বাস, প্রাইভেট কার, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ যে কোনো ধরনের যানবাহন যাতে থামতে না পারে, পার্ক করতে না পারে, সেই ব্যবস্থা করা। ৪. বাস থামার নির্দিষ্ট জায়গা ছাড়া যাত্রী ওঠানামা করতে না দেওয়া। কোনো বাস পাশাপাশি দাঁড়াতে পারবে না, একটার পেছনে আরেকটাকে দাঁড়াতে হবে। ৫. ভ্রাম্যমাণ ট্রাফিক পর্যবেক্ষক দল গঠন করা। নির্দিষ্ট এলাকায় দায়িত্বরত সেই দলে একজন ট্রাফিক পুলিশ ও একজন ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ার থাকবেন। তারা নির্দিষ্ট এলাকায় সব সময় চলাচল করবেন। তাদের দায়িত্ব হবে রাস্তায় নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটছে কিনা তা দেখা।
এটা সত্য, ঢাকায় প্রায় আড়াই কোটি মানুষ। এর মধ্যে ঢাকা শহরের তিন ভাগের মধ্যে দুই ভাগ এলাকা অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে এবং রাস্তাঘাট কম। এ রকম অবস্থায় যাত্রার বেশিরভাগ পূরণ করতে হবে গণপরিবহণ দিয়ে। ঢাকার যাতায়াতের ৭০ ভাগ গণপরিবহণের মাধ্যমে করা সম্ভব হলে শহরকে সচল রাখা যাবে। দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে রাজধানীতে পর্যাপ্ত গণপরিবহণ নেই। বর্তমান যে সড়ক আছে, সেই সড়কে বিভাজক তৈরি করতে হবে। বাসের লেনে অন্য কোনো পরিবহণ চলতে পারবে না। এটা নিশ্চিত করা গেলে যানজট কমে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।
মনে রাখতে হবে, রাজধানীর যানজট একটি বড় নাগরিক সমস্যা। এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকার কারণে জনদুর্ভোগ বেড়েই চলেছে। সরকারের বাস্তবসম্মত পরিকল্পিত উদ্যোগই কেবল পারে রাজধানী ঢাকাকে যানজট মুক্ত করতে এবং জনগণকে মুক্তি দিতে।