দেশের পূর্বাঞ্চলে আগস্টের বন্যার ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি সামনে এসেছে। তথ্য মতে, দেশের পূর্বাঞ্চলে আগস্টের বন্যার এক মাস পর মোট প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির হিসাব তুলে ধরেছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। ফেনীসহ ১১টি জেলায় ভয়াবহ সেই বন্যায় মোট ৭৪ জনের মৃতু্যর তথ্য দিয়েছে মন্ত্রণালয়, আহত হয়েছেন ৬৪ জন। অপরদিকে কৃষি, ঘরবাড়ি আর রাস্তাঘাটসহ সব মিলিয়ে ক্ষতি হয়েছে ১৪ হাজার ২৬৯ কোটি ৬৮ লাখ ৩৩ হাজার ৫২২ টাকার। ৯ লাখ ৪২ হাজার ৮২১ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছিলেন ৪৫ লাখ ৫৬ হাজার ১১১ জন।
আমরা বলতে চাই, বন্যায় নিহত হওয়া এবং যে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সামনে এলো তা আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কোনো বিকল্প নেই। সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের উদ্যোগ গ্রহণও জরুরি। বলা দরকার, আগেই জানা গিয়েছিল- নোয়াখালীসহ দেশের ১১ জেলার বন্যা পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল। বিশেষ করে বেশিরভাগ রাস্তাঘাট, ফসলের ক্ষেত, গবাদি পশুর খামার ও শিল্পকারখানা থেকে পানি পুরোপুরি নেমে না যাওয়ায় প্রায় সব ধরনের কৃষিজ, ব্যবসায়িক ও ক্ষুদ্র-মাঝারিসহ উৎপাদনশীল কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার বিষয়টি যেমন সামনে এসেছিল, তেমনি সার্বিক অর্থনীতি স্থবিরতার বিষয়টিও জানা গিয়েছিল। ফলে এখন যখন ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি সামনে আসছে তখন সার্বাত্মক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে পুনর্বাসনসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
উলেস্নখ্য, বাংলাদেশের উজানে পাহাড়ি ঢল আর অতি ভারী বৃষ্টির কারণে গত ২০ আগস্ট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। দ্রম্নতই তা ছড়িয়ে যায় ফেনী, কুমিলস্না, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্ণীপুর ও কক্সবাজারে। তবে এটাও লক্ষণীয়, বন্যা ১১টি জেলায় ভয়াবহ হলেও কৃষি মন্ত্রণালয় গত ৬ সেপ্টেম্বর জানিয়েছিল, ফসলি জমি আক্রান্ত হয় ২৩ জেলার। এসব জেলার ২ লাখ ৮ হাজার ৫৭৩ হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দুর্দশায় পড়েন ১৪ লাখেরও বেশি কৃষক। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ফসলি জমি ২ লাখের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বন্যায় আক্রান্ত হয় ৩৭ লাখ ২ হাজার ৭৩৩ হেক্টর ফসলি জমি। ফলে, সব মিলিয়ে কৃষিতে ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৩৪৬ কোটি টাকা। ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় নয়টি জেলার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ৮০ হাজার কৃষককে বিনামূল্যে রোপা আমনের উফশী জাতের বীজ, সার সহায়তা এবং খরচ বাবদ মোট ১৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা দেওয়ার হবে বলে জানিয়েছেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার। ফলে, এগুলোর যথাযথ বাস্তবায়নই কাম্য।
আমরা বলতে চাই, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে যেমন উদ্যোগী হতে হবে, তেমনি সার্বিকভাবে বন্যা এবং বন্যার পরবর্তী পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। পানিবাহিত রোগ, বিশুদ্ধপানি, পর্যাপ্ত ত্রাণ এই বিষয়গুলো আমলে নিয়ে আগামী দিনের জন্যও যথাযথ প্রস্তুতি নিতে হবে। আগস্টের বন্যার পরিপ্রেক্ষিতে আগেই অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার পরও কৃষি ও ব্যবসাসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকান্ড শুরু করতে অনেকটা লম্বা সময় লাগবে। কেননা, বন্যার্ত এলাকার ভেঙে যাওয়া রাস্তাঘাট মেরামত করার আগে পরিবহণ চলাচল অসম্ভব। ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের কাঁচামাল, ফসলের বীজ, সার, ব্যবসায়িক মালামাল আনা-নেওয়া কঠিন হবে। এছাড়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, খামার ও শিল্পকারখানা বন্যায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তা সংস্কারের আগে চালু করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। ফলে, সার্বিকভাবে বন্যার ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রভাব এড়ানোর সুযোগ নেই।
সর্বোপরি বলতে চাই, বাংলাদেশে প্রাকৃতিকভাবে দুর্যোগপ্রবণ দেশ। সঙ্গত কারণেই বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলার ক্ষেত্রে অধিকতর পরিকল্পনা গ্রহণ এবং কীভাবে বন্যা পরিস্থিতি আরও সুষ্ঠুভাবে মোকাবিলা করা যায় সেই লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। আগস্টের বন্যায় যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে ওঠা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে করণীয় নির্ধারণ ও যথাযথ বাস্তবায়নে সব ধরনের তৎপরতা অব্যাহত থাকবে- এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।