অব্যাহতভাবে রিজার্ভ কমার খবর বারবার সামনে এলেও এবারে জানা যাচ্ছে যে, রিজার্ভের পরিমাণ বাড়ছে। যা ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরের মাধ্যমে জানা যাচ্ছে, বিদেশি মুদ্রার সঞ্চিতি বা রিজার্ভের পরিমাণ এখন ২০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। এটি জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভের পরিমাণ ২৪ হাজার ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আইএমএফ-এর বিপিএম-৬ হিসাব মান অনুযায়ী এটা ২০ হাজার মিলিয়নের কাছাকাছি। এক্ষেত্রে বলা দরকার, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুসারে নিট রিজার্ভ গণনা করা হয়। গ্রস বা মোট রিজার্ভ থেকে স্বল্পমেয়াদি দায় বাদ দিলে নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের পরিমাণ জানা যায়। মূলত আইএমএফ-এর ঋণ অনুমোদনের পর ২০২৩ সালের জুলাই থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই তথ্য প্রকাশ করছে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রকাশিত তথ্য বলছে, সেদিন রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ১৯ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলার।
আমরা বলতে চাই, রিজার্ভের পরিমাণ বাড়ছে বলে যখন জানা যাচ্ছে, তখন এটা অত্যন্ত ইতিবাচক। ফলে, সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে রিজার্ভ বাড়াতে উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি। উলেস্নখ্য, রিজার্ভের পরিমাণ বাড়ছে জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র বলেছেন, ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ ক্ষয়রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। কারণ রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি ঘটছে। এছাড়া গত অর্থবছরের তুলনায় এ অর্থ বছরে ৬০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তিনি এটাও জানিয়েছেন, যদি জুলাইয়ের সঙ্গে অগাস্টের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়, তাহলে এটা প্রায় ৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এটাও জানা গেছে, আন্তঃব্যাংক ফরেন এক্সচেঞ্জ সক্রিয় করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো চাইলে নিজেরা কেনাবেচা করতে পারছে এবং বিনিময়হার বাজারভিত্তিক করা হয়েছে। এক্ষেত্রে স্মর্তব্য, গত দুই অর্থবছরে সরকারি ঋণপত্র বা এলসি খোলার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাতে করে বিদেশি মুদ্রার সঞ্চিতি কমে যায়। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের দায়িত্ব নিয়ে আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছিলেন, তিনি রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। তাতে রিজার্ভ বাড়বে, কমার কোনো 'সম্ভাবনা নেই'।
আমরা বলতে চাই, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। মনে রাখা দরকার, এর রাগে বারবার এটা সামনে এসেছে যে, ধারাবাহিকভাবে কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। ফলে, এখন যখন রিজার্ভ বাড়ছে বলে জানা যাচ্ছে, তখন এটি আমলে নিয়ে রিজার্ভ বৃদ্ধিতে উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। এটাও ভুলে যাওয়া যাবে না, রিজার্ভ কমার কারণ হিসেবে এর আগে আলোচনায় এসেছিল ডলার সংকটের বিষয়টি। নানা উদ্যোগ নিয়েও এ সমস্যার যেন সমাধান হচ্ছিল না বলে তখন জানা যায়। এছাড় যে হারে আমদানির দায় পরিশোধ করতে হচ্ছিল সেই হারে রেমিট্যান্স-রপ্তানি আয় আসছিল না। ফলে, আমদানির চাহিদা অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রা না থাকায় বাজারে ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংকটের কারণে রিজার্ভ থেকে বাজারে প্রচুর ডলার বিক্রি করা ছাড়াও আকুর বিল পরিশোধ, রপ্তানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহ কম এসব কারণেই মূলত রিজার্ভ কমছে বলেও এর আগে জানা গিয়েছিল। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্টদের এটা মনে রাখা জরুরি যে, রিজার্ভ যখন অব্যাহতভাবে কমছিল তখন অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে উদ্বেগ বাড়ছে এমন আলোচনাও উঠে আসে। ফলে, রিজার্ভ কমার বিষয়টি যেমন এড়ানোর সুযোগ নেই, তেমনি যখন জানা যাচ্ছে রিজার্ভ বাড়ছে- তখন রিজার্ভ সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, রিজার্ভ বাড়ছে এটি ইতিবাচক। যা আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যাগ অব্যাহত রাখা জরুরি। স্মর্তব্য, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করে- বাজারে 'স্থিতিশীলতা' আনতে রিজার্ভ থেকে নিয়মিত ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নানা কারণে রিজার্ভ কমে যাওয়ার বিষয়টি সামনে আসে। অথচ মনে রাখা দরকার, রিজার্ভ কমে যাওয়াটা অর্থনীতির জন্য ভালো নয় এমন। ফলে, যখন রিজার্ভ বাড়ছে এটিকে আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত হবে এমনটি কাম্য।