কক্সবাজার সদর উপজেলা এবং উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক পাহাড় ধসের ঘটনায় দুই পরিবারের ছয়জনের মৃতু্য হয়েছে। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পর ঘটা এসব ধসে সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ ডিককূল এলাকায় মারা গেছেন মা ও দুই মেয়ে এবং উখিয়া উপজেলার ১৪ নম্বর হাকিমপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মারা গেছেন তিন সহোদর। পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্ত ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী। পরে তিনি ভুক্তভোগী পরিবারকে ৭৫ হাজার টাকা অনুদান প্রদান করেন।
এখানে উলেস্নখ করা প্রয়োজন, গত বুধবার থেকে কক্সবাজারে মাঝারি থেকে কখনো কখনো ভারী বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। এতে জেলা শহরসহ অর্ধশতাধিক গ্রামে বৃহস্পতিবার থেকে মারাত্মক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলে অনেকের বাড়ি ঘর পস্নাবিত হয়েছে। এতে জনজীবনে দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।
তথ্যমতে, কেবল চট্টগ্রাম নগরেই ২৬টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় রয়েছে। এসব পাহাড়ের পাদদেশে অবৈধভাবে সাড়ে ৬ হাজারের বেশি পরিবার বসবাস করছে। যেখানে শিশু, বৃদ্ধসহ বসবাসরত মানুষের সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি।এটা সত্য, থামছে না পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি, বরং দিন দিন বেড়েই চলছে। ফলে বর্ষার মৌসুমে পাহাড়ধসে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা ও হতাহতের ঘটনা। কিছুদিন আগে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৃথক চারটি পাহাড়ধসে নয়জনের মৃতু্য হয়েছে।
বারবার পাহাড়ধসে প্রাণহানিকে আর্থসামাজিক, পরিবেশগত এবং রাজনৈতিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করছেন একজন বিশেষজ্ঞ। এর আগে ফেঞ্চুগঞ্জে পাহাড়ধসে ১০টি পরিবারের ঘর মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। পরিতাপের বিষয় হলো, এরপরও কারও টনক নড়ছে না। সিলেটে পাহাড়ের পাদদেশে এখনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাস করছে লাখ লাখ মানুষ। পাহাড় কেটে ঘরবাড়ি বানিয়ে বসবাস করছে তারা।
শুধু সিলেট নয়, চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ, পার্বত্য জেলা শহরগুলোতে বিভিন্ন জায়গায় কমবেশি টিলা ও পাহাড়ে যথেচ্ছভাবে বসিত গড়ে উঠছে, এতে বাড়ছে পাহাড়ধস ও হতাহতের ঘটনা। আর এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, এতে পাহাড় ও টিলাধসে মানুষের মৃতু্যর ঘটনা ঘটবেই। প্রশ্ন হলো, ঝুঁকি জেনেও মানুষ কেন পাহাড়ে বসতি গড়ছে? এর একটি কারণ বসতি জমির সীমাবদ্ধতা। তবে কিছু সুবিধাভোগী পাহাড় দখল করে ব্যবসাও করছে। চট্টগ্রামের কিছু পাহাড় কেটে আবাসিক ভবন নির্মাণ করে বিক্রির খবরও পত্রিকায় উঠে আসছে।
প্রশাসনের উদাসীনতা, রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাদের লেজুড়বৃত্তি, পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন না করাসহ সমন্বিত উদ্যোগ না থাকায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারী বাড়ছে। অথচ এভাবে বসতি স্থাপনের ফলে কিছু লোক লাভবান হলেও দরিদ্র মানুষ এর খেসারত দিয়ে চলছে প্রতিনিয়ত। সঙ্গত কারণেই এই অবস্থার আশু অবসান হওয়া জরুরি।
উলেস্নখ্য, চট্টগ্রাম নগরে ২০০৭ সালের ১১ জুন ভয়াবহ পাহাড়ধসে মারা যান ১২৭ জন। এর মধ্যে লালখানবাজার ওয়ার্ডের মতিঝরনা এলাকায় মারা গিয়েছিল ১১ জন। পরের বছর আগস্টে একই এলাকায় মারা যান আরও ১৪ জন। ২০১৩ সালে মারা যায় আরও দুজন। এর মধ্যে ছোটোখাটো ধস লেগেই আছে।
টিলা ও পাহাড়গুলো শুধু শহরের সৌন্দর্যই বাড়িয়ে তোলে না, উপরন্তু এগুলো সংশ্লিষ্ট এলাকার বাস্তুতন্ত্রের অংশও। পাহাড়ের টানে বাড়ে পর্যটন শিল্প। কিন্তু যথাযথ ব্যবস্থাপনার অভাবে এবং অজ্ঞতার কারণে একদিকে ঘটছে টিলা-পাহাড় কাটা; অন্যদিকে, ধসে অহরহ ঘটছে হতাহতের ঘটনা। এ অবস্থায় অবৈধ বসতির অবশ্যই অবসান হওয়া জরুরি। পাশাপাশি পাহাড় সুরক্ষায় দ্রম্নত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।