শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

বাড়ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ

অগ্রগতি ধরে রাখতে হবে
  ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বাড়ছে রেমিট্যান্স প্রবাহ

দেশের সার্বিক অগ্রগতিতে রেমিট্যান্সের উলেস্নখযোগ্য অবদান রয়েছে। ফলে, রেমিট্যান্স সংক্রান্ত পরিস্থিতি আমলে নেওয়া এবং সেই মোতাবেক উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে রেমিট্যান্সের প্রবাহ। গত মাসের ধারাবাহিকতা রয়েছে চলতি মাসে। আগস্টের চেয়ে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় বাড়তে পারে চলতি মাস সেপ্টেম্বরে এমন সম্ভাবনাও উঠে এসেছে- যা আশাব্যঞ্জক। তথ্য মতে, এ মাসের প্রথম সাত দিনেই এসেছে ৫৮ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স- যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (প্রতি ডলার ১২০ টাকা হিসাবে) ৭ হাজার ১৪ কোটি টাকা।

উলেস্নখ্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, সেপ্টেম্বরের প্রথম সাত দিনে ৫৮ কোটি ৪৫ লাখ ৪০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন বিভিন্ন দেশে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। আর প্রতিদিন আসছে ৮ কোটি ৩৫ লাখ ডলার করে। এভাবে রেমিট্যান্স আসার ধারাবাহিকতা থাকলে চলতি মাসে আড়াই বিলিয়ন ছাড়িয়ে যাবে। রেমিট্যান্স প্রবাহ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, চলতি মাস সেপ্টেম্বরের শুরু থেকেই রেমিট্যান্স আসার গতি ভালো রয়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আড়াই বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে। এটাও লক্ষণীয় যে, রেমিট্যান্স বেশি আসার পেছনে সচেতনতা কাজ করছে। প্রবাসীদের কাছে পৌঁছানো আর ডলারের দর বৃদ্ধিতে হুন্ডি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন তারা। এতে বাড়ছে রেমিট্যান্স আসার পরিমাণ।

আমরা মনে করি, যখন ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে রেমিট্যান্সের প্রবাহ এবং গত মাসের ধারাবাহিকতা রয়েছে চলতি মাসেও; তখন এটি আমলে নিয়ে অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, দেশের ইতিহাসে এক মাসে সর্বোচ্চ ২৬০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল ২০২০ সালের জুলাই মাসে। বছরওয়ারি হিসাবে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আসে ২০২০-২১ অর্থবছরে। ওই অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স আসে ২৪ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৭৮ কোটি ডলার। আর চলতি বছরের জুন মাসে ব্যাংকিং চ্যানেলে মোট ২৫৪ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। এটি এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, সদ্য বিদায়ি আগস্ট মাসের পুরো সময়ে দেশে বৈধপথে রেমিট্যান্স এসেছে ২২২ কোটি (২.২২ বিলিয়ন) ডলার- যা তার আগের বছরের (আগস্ট-২০২৩) একই সময়ের চেয়ে ৬২ কোটি ডলার বেশি এসেছে। গত বছরের আগস্ট মাসে এসেছিল প্রায় ১৬০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স।

রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে কতটা অবদান রাখে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লে সেটি যেমন ইতিবাচক, তেমনি কমে গেলে তা উদ্বেগের। সঙ্গত কারণেই রেমিট্যান্সের অগ্রগতি ধরে রাখতে উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। এ কথাও বলা দরকার, এর আগে ২০২০ সালে করোনা মহামারির কারণে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেলে দেশে বৈধ পথে প্রবাসী আয় আসা উলেস্নখযোগ্য পরিমাণে বেড়ে যায়। তখন প্রতি মাসে প্রবাসী আয়ের প্রবাহ গড়ে ২০০ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল। বিপুল পরিমাণ প্রবাসী আয় আসার কারণে একপর্যায়ে বৈদেশিক মুদ্রার মোট রিজার্ভ বেড়ে ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায়। সামগ্রিকভাবে রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতিতে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটি বিবেচনায় রেখে সব ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত করা জরুরি।

সর্বোপরি বলতে চাই, বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। ফলে, দেশের জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করা সার্বিক অগ্রগতির প্রশ্নেই জরুরি। দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জন এবং অগ্রগতিতে রেমিট্যান্স ভূমিকা রাখছে। তাই রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা বজায় রাখতে হবে। স্মর্তব্য, নানা সময়ে রেমিট্যান্সে ধস নামার বিষয়টি সামনে এসেছে। ফলে প্রবাসী আয়ে ধস নামলে বিষয়টি যেমন এড়ানো যাবে না, তেমনি রেমিট্যান্সের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। মনে রাখতে হবে, প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্যই ইতিবাচক। ফলে প্রবাসী আয়ের বিষয়টিকে সামনে রেখে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি নতুন নতুন শ্রমবাজার খুঁজে বের করা এবং দক্ষ জনশক্তি নিশ্চিত করা জরুরি। আর সেই লক্ষ্যে বাড়াতে হবে প্রশিক্ষণের পরিধিও।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে