দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। যতই দিন যাচ্ছে সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম ১১ দিনে ১৯ জনের মৃতু্য হয়েছে। যার মধ্যে গত মঙ্গলবারই মারা গিয়েছেন পাঁচজন। মৃতের এই সংখ্যা ডেঙ্গুর সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আশঙ্কা বাড়াচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর দেরিতে হাসপাতালে যাওয়া, দেশব্যাপী চিকিৎসা সুবিধার অপর্যাপ্ততা, ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর রেকর্ড না রাখা এবং ডেঙ্গু শনাক্তে ভুল টেস্ট রিপোর্ট মূলত এ বছর উচ্চ মৃতু্যহারের কারণ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ১৭ হাজার ২৮৪ জন রোগীর মধ্যে মারা গেছেন ১০২ জন। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ বছর মৃতু্যহার বেড়ে হয়েছে শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ। গত বছর যা ছিল শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। বয়স্ক ব্যক্তি, শিশু, স্থূলকায় ব্যক্তি, অন্তঃসত্ত্বা নারী ডেঙ্গুর সংক্রমণের ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। এ ছাড়া যাদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদযন্ত্র, ?কিডনি, ফুসফুস ও যকৃতের সমস্যা আছে তারাও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার বেশি ঝুঁকিতে। তাই এ ধরনের ব্যক্তিরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যাওয়া দরকার যাতে তাদের অবস্থা গুরুতর না হয়। আমরা মনে করি, সরকারের উচিত শহর ও আঞ্চলিক উভয় পর্যায়ে ডেঙ্গু চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে মনোযোগ দেওয়া।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে ডেঙ্গুর মৃতু্যহার কমাতে বর্তমান চিকিৎসা ব্যবস্থা ও পদ্ধতির পরিবর্তন করা জরুরি। ঢাকার বাইরে মৃতু্যহার বেশির কারণ হিসেবে পর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থার অভাব ও ডেঙ্গু শনাক্ত করতে না পারা। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এ ব্যাপারে উদাসীনতার কোনো অবকাশ নেই।
মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু এডিস মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। সঠিক উদ্যোগের অভাবে দিনদিন এডিস মশার উৎপাত বেড়েছে।
এডিস মশা যেহেতু প্রধান বাহক সেহেতু ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য এডিস মশা জন্ম ও বৃদ্ধি রোধ করতে হবে। বাসাবাড়িতে যাতে দীর্ঘদিন পানি জমে না থাকে, বিশেষ করে নির্মাণাধীন ভবনে সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হবে। এ ব্যাপারে দুই সিটি করপোরেশনের নজরদারি বাড়াতে হবে।
এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ বিবেচনায় রেখে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ডেঙ্গু রোগের প্রভাব কমবে না। যেহেতু এডিস মশা সংক্রমিত মশা। এতে এক রোগী থেকে অন্যজন সংক্রমিত হয়ে থাকে। তাই সংশ্লিষ্টদের সার্বিক বিষয় পর্যবেক্ষণ করে এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নিতে হবে। ডেঙ্গুসংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। এক্ষেত্রে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।