শিল্পকারখানায় অচলাবস্থা যথাযথ উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
শিল্পকারখানায় কার্যত অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না- যে কোনো কারণেই হোক যদি কলকারখানায় অচলাবস্থা তৈরি হয় কিংবা শ্রমিক অসন্তোষসহ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে থাকে, যদি উৎপাদন ব্যাহত হয় তবে তা উদ্বেগজনক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে, যা আমলে নেওয়া কোনো বিকল্প নেই। সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, পোশাক ও বস্ত্রসহ ভারী-মাঝারি শিল্পকারখানাগুলোতে গ্যাস-বিদু্যতের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ কমেছে। এছাড়া বিদেশি ক্রেতাদের 'অর্ডার' ধরে রাখতে অনেকে জেনারেটরে ডিজেল-পেট্রোল পুড়িয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠান চালু রেখেছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে লক্ষণীয়, এমন পরিস্থিতিতে শিল্পমালিকদের ঘাড়ে অতিরিক্ত খরচের বোঝা চাপছে। সার্বিকভাবে শিল্প উৎপাদনে ভাটার টান ধরেছে বলেও জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে শ্রমিক-কর্মচারীদের দাবি-দাওয়া নিয়ে শিল্প খাতের চলমান অস্থিতিশীলতা 'মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা' হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা মনে করি, সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। শিল্প খাতে যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা কোনোভাবেই সহজ করে দেখার সুযোগ নেই। এটাও বলা দরকার, শিল্প খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বেশ কিছুদিন ধরেই গাজীপুর ও আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার শিল্পকারখানাগুলোতে শ্রমিক অসন্তোষকে ঘিরে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সড়ক অবরোধ, শিল্পকারখানা ভাঙচুর, এমনকি অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। অন্যদিকে কারখানায় শ্রমিকদের কর্মবিরতি চলমান থাকায় বিপুলসংখ্যক বিদেশি ক্রয়াদেশ (অর্ডার) বাতিল হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতি কতটা শঙ্কার যেটা যেমন এড়ানো যাবে না, তেমনিভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ সমীচীন বলেই প্রতীয়মান হয়। তথ্য মতে, বৃহস্পতিবার শিল্পাঞ্চলের কোথাও কোনো সড়ক অবরোধসহ কোনো কারখানায় হামলা বা ভাঙচুরের ঘটনা না ঘটলেও সেখানকার মোট ২১৯টি কারখানা বন্ধ রয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এর মধ্যে ৮৬টি কারখানা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা (নো ওয়ার্ক নো পে) মোতাবেক বন্ধ করে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আর ১৩৩টি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। যদিও শিল্পাঞ্চলে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানাগুলোর সামনে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য। এছাড়া শিল্পাঞ্চলে যৌথবাহিনীর টহল অব্যাহত রয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। আমরা বলতে চাই, যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা রোধ করা অপরিহার্য নইলে একদিকে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, অন্যদিকে ক্রেতাদের মনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। যার ফলে নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা থাকে। এছাড়া শ্রমিক অসন্তোষের যে বিষয়টি সামনে আসছে তা কোনোভাবেই এড়ানো যাবে না। যখন জানা যাচ্ছে, শিল্পাঞ্চলে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে, এক্ষেত্রে শিল্পমালিকরা মনে করছেন, এ ধরনের তৎপরতা চালিয়ে হয়তো বিশৃঙ্খলা এড়ানো যাবে, নাশকতা ঠেকানো যাবে না। কিন্তু উৎপাদন পরিস্থিতি স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে আনা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। এতে বায়ারদের কাছে সময়মতো পণ্য পৌঁছাতে এয়ারফ্রেট (উড়োজাহাজীকরণ) করতে হবে। ফলে তারা মোটা অঙ্কের লোকসানের ঝুঁকিতে পড়বেন। তবে কোনো কোনো শিল্পকারখানার পক্ষে এয়ারফ্রেট করেও মাল পৌঁছানোর সময় পাবে না। এতে তাদের অর্ডার বাতিল হবে। এ অবস্থা চলতে থাকলে শিল্প খাতে বড় ধস নামবে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তারা। এছাড়া শ্রমিক অসন্তোষের কারণে গার্মেন্টস খাতের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে অনেকে দাবি করলেও শিল্প পর্যবেক্ষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, কারখানা শ্রমিকদের বিক্ষোভের পেছনে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রভাব রয়েছে। শিল্প খাতে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির জন্য তৃতীয় পক্ষ ইন্ধন দিচ্ছে। ফলে সার্বিক পরিস্থিতি এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, কারখানা বন্ধ, উৎপাদনে ভাটা, শ্রমিক অসন্তোষসহ সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। এছাড়া যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি রোধে সর্বাত্মক পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে। কারখানায় অচলাবস্থা তৈরি হলে, উৎপাদনে ভাটা পড়লে তা কতটা আশঙ্কার সেটা এড়ানো যাবে না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক এমনটি কাম্য।