অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র জানতে শ্বেতপত্র প্রণয়ন

শ্বেতপত্রের অনেক সুবিধা আছে। নতুন সরকার কোন অবস্থায় অর্থনীতিকে পেল, তার জন্য একটি গ্রহণযোগ্য মূল্যায়ন তাদের যেমন দরকার, ইতিহাসের জন্যও দরকার। শ্বেতপত্র তৈরির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করার পাশাপাশি মূল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।

প্রকাশ | ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

রেজাউল করিম খোকন
বিগত সরকারের দেওয়া তথ্য, বক্তব্য ও পরিসংখ্যানে দেশের অর্থনীতির সঠিক চিত্র দেখা যায়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে বিগত সরকার ক্ষমতাচু্যত হওয়ার পর গঠিত অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার দেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র জানতে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করেছে। এর মাধ্যমে বর্তমান সরকার উপলব্ধি করবে, কী ধরনের উত্তরাধিকারের অর্থনীতিতে তাদের কাজ করতে হবে। সেই ভিত্তিভূমি নিরূপণ করাই কমিটির কাজ। নব্বই দিনের মধ্যে এটি সরকারকে জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। শ্বেতপত্রে দেশের বিদ্যমান অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র থাকার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারের কৌশলগত পদক্ষেপ, জাতিসংঘের টেকসই অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়ন ও বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে করণীয় বিষয়ের প্রতিফলন থাকবে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি ৯০ দিনের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে হস্তান্তর করবে। শ্বেতপত্রের ধারণাটি এসেছে যুক্তরাজ্যের সংসদীয় ব্যবস্থা থেকে। সরকারের দ্বারা প্রকাশিত কোনো নীতিগত নথি যেখানে সংসদীয় প্রস্তাবনা থাকে, সেগুলোই শ্বেতপত্র, যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটে এভাবেই শ্বেতপত্রের বর্ণনা দেওয়া আছে। এর ফলে, অধিকতর আলাপ-আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়। ঊনবিংশ শতাব্দীর ব্রিটেনে পার্লামেন্ট রিপোর্টের প্রচ্ছদ থাকত নীল রঙের। যদি রিপোর্টের বিষয়বস্তু সরকারের জন্য কম গুরুত্বপূর্ণ হতো নীল প্রচ্ছদ বাদ দিয়ে সাদা প্রচ্ছদেই সেগুলো প্রকাশ করা হতো। সেই রিপোর্টগুলোকে বলা হতো হোয়াইট পেপারস্‌। এ প্রথা কোনো প্রস্তাবিত নীতি বা জনস্বার্থ সম্পর্কিত সমস্যার সঙ্গে যুক্ত নয়। বরং কোনো রাজনৈতিক দলের সরকার পরিচালনার পরবর্তী সময়ে অন্য কোনো রাজনৈতিক দল কর্তৃক শাসক দলের কুকীর্তির দলিল হিসেবে শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হয়। যদিও, এবারেরটি দুর্নীতি ধরার কমিটি নয়। দুর্নীতি কেন হয়েছে এবং মাত্রাটা কী, সেটা বলবে এই কমিটি। কিন্তু কে দুর্নীতি করেছে, কেন করেছে সেটা বলা তদের দায়িত্ব নয়, এর জন্য সরকারের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান আছে। বাংলাদেশে শ্বেতপত্র প্রকাশের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ২০০১ সালে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। তাতে আওয়ামী লীগ সরকারের আগের মেয়াদের বিভিন্ন অসঙ্গতির কথা তুলে ধরা হয়। ২০২১ সালে একদল বেসামরিক নাগরিকের, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিরা একটি গণকমিশন গঠন করেন। তারা পরের বছর 'বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন' নামে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করে। তবে 'ইসলাম বিদ্বেষ'-এর অভিযোগে এটি নিয়ে সেসময় বিতর্ক দেখা দেয়। সাত বছরে দ্বিগুণ হয়েছে বাংলাদেশের ঋণ। জানা যায়, ২০২৩ সালের শেষ প্রান্তিকে বাংলাদেশের সার্বিক ঋণ ১০০.৬৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। এর মধ্যে ৮০ ভাগই সরকারের ঋণ। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচু্যত হওয়ার পর তাদের সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দায় নিয়ে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সরকার ঋণ রেখে গেছে ১৮ লাখ কোটি টাকা। বিগত বছরগুলোতে মূল্যস্ফীতি, অর্থ পাচার, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অবস্থাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের দুর্নীতি সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। অন্তর্র্বর্তী সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে কেমন অর্থনৈতিক অবস্থা পেল সেটি বুঝতে অর্থনীতির একটা 'হেলথ চেক আপ'। শ্বেতপত্র প্রণয়ন বর্তমানে অর্থনীতি কোন অবস্থায় আছে, উত্তরাধিকারসূত্রে কী পাওয়া গেছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কীভাবে চলছে সেগুলোকে চিত্রায়িত করার কাজটাই করবে। এটা স্বাস্থ্য পরীক্ষার মতো। এছাড়া 'মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা'ও করা হবে। পলিসি বা নীতিগত দিকটা কীভাবে চলছে, সেই পর্যালোচনাও থাকবে শ্বেতপত্রে। তারা ব্যাংক ও আর্থিক খাতের পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করবেন না। তারল্যসংকট, নামে-বেনামের ঋণ, সঞ্চিতি ঘাটতি এসব বিষয়ে পর্যালোচনা করা হবে। আর যেন টাকা পাচার না হয়, টাকা পাচার করলে শাস্তি পেতে হবে, এমন কথা বলা থাকবে শ্বেতপত্রে। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে আকৃতি ও প্রভাব বিবেচনায় বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পও রয়েছে। কোনো কোনো মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে, কোনোটির কাজ চলমান। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের অর্জন হিসেবে এসব মেগা প্রকল্পের কথা বেশ জোরেসোরেই প্রচার করে আসছিল। তবে পদ্মা সেতুসহ মেগা প্রকল্পগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি অভিযোগ করে আসছে সরকার বিরোধীরা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার স্বার্থে প্রকল্প নিয়ে কাজ করবে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। সময় স্বল্পতার কারণে সব প্রকল্প বিশ্লেষণ করবে না। তবে তারা মেগা প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করবে। মেগা প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে যদি কোনো একটি বিশেষ প্রজেক্টের ওপর মনোযোগ দিতে হয় তারা সেটা করবেন। এবার কি তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতির 'সত্যিকার চিত্রটি' দেখা যাবে? এবারের শ্বেতপত্রটি দুর্নীতি ধরার জন্য নয় বলা হয়েছে। দুর্নীতি কেন হয়েছে এবং মাত্রাটা কী, সেটা বলবে এই কমিটি। কিন্তু কে দুর্নীতি করেছে, কেন করেছে সেটা বলা তাদের দায়িত্ব নয়, এর জন্য সরকারের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান আছে। বাংলাদেশে শ্বেতপত্র প্রকাশের ঘটনা এবারই প্রথম নয়। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচু্যত হওয়ার পর তাদের সময়ে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক দায় নিয়ে কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার সরকার ঋণ রেখে গেছে ১৮ লাখ কোটি টাকা। বিগত বছরগুলোতে মূল্যস্ফীতি, অর্থ পাচার, ব্যাংক ও আর্থিক খাতের অবস্থাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের দুর্নীতি সংবাদের শিরোনাম হয়েছে। অন্তর্র্বর্তী সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে কেমন অর্থনৈতিক অবস্থা পেল সেটি বুঝতে অর্থনীতির একটা হেলথ চেক আপ। শ্বেতপত্র প্রণয়ন বর্তমানে অর্থনীতি কোন অবস্থায় আছে, উত্তরাধিকারসূত্রে কী পাওয়া গেছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কীভাবে চলছে সেগুলোকে চিত্রায়িত করার কাজটাই করবে। এটা স্বাস্থ্য পরীক্ষার মতো। এছাড়া মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষাও করা হবে। পলিসি বা নীতিগত দিকটা কীভাবে চলছে, সেই পর্যালোচনাও থাকবে শ্বেতপত্রে। তারা ব্যাংক ও আর্থিক খাতের পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন করবেন না। তারল্য সংকট, নামে-বেনামের ঋণ, সঞ্চিতি ঘাটতি এসব বিষয়ে পর্যালোচনা করা হবে। আর যেন টাকা পাচার না হয়, টাকা পাচার করলে শাস্তি পেতে হবে, এমন কথা বলা থাকবে শ্বেতপত্রে। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে আকৃতি ও প্রভাব বিবেচনায় বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্পও রয়েছে। কোনো কোনো মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে, কোনোটির কাজ চলমান। আওয়ামী লীগ সরকার তাদের অর্জন হিসেবে এসব মেগা প্রকল্পের কথা বেশ জোরেসোরেই প্রচার করে আসছিল। তবে, পদ্মাসেতুসহ মেগাপ্রকল্পগুলোতে ব্যাপক দুর্নীতি অভিযোগ করে আসছে সরকার বিরোধীরা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার স্বার্থে প্রকল্প নিয়ে কাজ করবে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। সময় স্বল্পতার কারণে সব প্রকল্প বিশ্লেষণ করবে না। তবে তারা মেগা প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করবে। মেগা প্রজেক্ট নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে যদি কোনো একটি বিশেষ প্রজেক্টের ওপর মনোযোগ দিতে হয় তারা সেটা করবেন। কয়েক মাস আগে রপ্তানি উন্নয়ন বু্যরো (ইপিবি) থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের রপ্তানি আয়ের হিসেবে বড় ধরনের অসামাঞ্জস্য ধরা পড়ে। রপ্তানির বাৎসরিক হিসেবে প্রকৃত পরিমাণের চেয়ে ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেশি দেখানোর ঘটনা বিভিন্ন মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দেয়। সরকারি সংস্থাগুলো পরিসংখ্যান নিয়ে অর্থনীতিবিদদের বিভিন্ন সময় সংশয় প্রকাশ করতেও দেখা গেছে। ফলে, তাদের দেয়া তথ্য উপাত্তের ওপর ভর করে পাওয়া চিত্র কতটা সঠিক হবে তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। যা তথ্য পাওয়া গেছে অর্থাৎ, বিবিএস (পরিসংখ্যান বু্যরো), ইপিবি এবং অন্য সংস্থাগুলোর কাছে যা আছে তার ভিত্তিতে অর্থনীতির একটা বস্তুনিষ্ঠ চিত্রায়ন এখানে আশা করা যেতে পারে। শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটিতে অর্থনীতিবিদ ছাড়াও জ্বালানি, অভিবাসন, উন্নয়ন ও সুশাসনের মত বিভিন্ন বিষয়ের বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। নীতি বিশ্লেষক বা বিষয় বিশেষজ্ঞ হিসেবে কমিটির সদস্যরা তাদের মতামত দেবেন। আগামী দুই মাসের মধ্যেই কার্যক্রম গুছিয়ে আনা হবে। খাতওয়ারি যেমন জ্বালানি, প্রাতিষ্ঠানিক, ব্যাংক, রাজস্ব খাত, অর্থ পাচার, বৈষম্য ও দারিদ্র্য বিমোচনসহ বিভিন্ন বিষয় সদস্যদের মধ্যে ভাগ করা হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা নিয়ে শ্বেতপত্র তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটি জ্বালানি খাতসহ বিগত বছরগুলোতে হওয়া বৈদেশিক ঋণ চুক্তিগুলো খতিয়ে দেখা হবে। বিগত বছরগুলোতে বিদেশি ঋণ সংক্রান্ত চুক্তিগুলো যদি পাওয়া যায় তাহলে তা খতিয়ে দেখে অবশ্যই তারা মূল্যায়ন করবেন। কোন সদস্য কী বিষয়ে দায়িত্ব পালন করবেন, ঠিক করা হয়েছে। ইসু্যগুলো নিয়ে তারা ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে ও বিদেশেও যারা বিশেষজ্ঞ আছেন তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। দেশের উন্নয়নে ১০ খাতে শ্বেতপত্র কমিটি কাজ করবে। শ্বেতপত্র কমিটি কোন কোন বিষয়ে মনোযোগ দেবে তা চিহ্নিত করা হয়েছে। সেগুলো হলো- সাধারণ অর্থনীতি, সামষ্টিক অর্থনীতি, ব্যাংকিং খাত, মেগা প্রকল্প, কর আহরণ, পাচার হওয়া অর্থ, বৈষম্য, দারিদ্র্য বিমোচনসহ শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাত নিয়ে কাজ করবে শ্বেতপত্র কমিটি। তথ্যগুলো আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে তুলনা করে যাচাই করা হবে। ১২ সদস্যের শ্বেতপত্র কমিটি যাদের নিয়ে গঠিত হয়েছে, তাদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানসহ বিগত সরকারের রেখে যাওয়া সামগ্রিক অর্থনীতির শ্বেতপত্র তৈরির কাজকর্ম শুরু করেছে। কমিটির কাজের পরিধি হবে নির্দেশনামূলক; বাধ্যতামূলক নয়। সময়ে সময়ে পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে তথ্যের সঠিকতা যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে এবং সবার মতামত ও পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব দিয়ে গঠিত কমিটি কাজ করবে। দেশের বিদ্যমান অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র রাখার পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিষয়ে সরকারের কৌশলগত পদক্ষেপ, জাতিসংঘের টেকসই অভীষ্ট লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়ন ও স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণে করণীয় বিষয়ের প্রতিফলন তুলে ধরা হবে এই শ্বেতপত্রে। অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর একটা শ্বেতপত্র তৈরি করা দরকার। শ্বেতপত্র তৈরি করলে স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যাবে। এই মুহূর্তে অর্থনীতিতে যে জটিল পরিস্থিতি রয়েছে, তা জানার জন্য এবং পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য যা হবে একটি নির্দেশিকা। শ্বেতপত্রের অনেক সুবিধা আছে। নতুন সরকার কোন অবস্থায় অর্থনীতিকে পেল, তার জন্য একটি গ্রহণযোগ্য মূল্যায়ন তাদের যেমন দরকার, ইতিহাসের জন্যও দরকার। শ্বেতপত্র তৈরির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করার পাশাপাশি মূল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আলোচনার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতি পর্যালোচনা ও দিকনির্দেশনার ক্ষেত্রে একটি গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের সৃষ্টি হবে। নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে যা এক ধরনের গণতান্ত্রিক ভিত্তি দেবে। কোনো কারণে সরকার যদি না করে তাহলে পেশাজীবী নাগরিক সম্প্রদায়ের এগিয়ে আসতে হবে। তাই শ্বেতপত্র তৈরি করা জরুরি। শ্বেতপত্রের অনেক সুবিধা আছে। নতুন সরকার কোন অবস্থায় অর্থনীতিকে পেল, তার জন্য একটি গ্রহণযোগ্য মূল্যায়ন তাদের যেমন দরকার, ইতিহাসের জন্যও দরকার। শ্বেতপত্র তৈরির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করার পাশাপাশি মূল অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। আলোচনার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নীতি পর্যালোচনা ও দিকনির্দেশনার ক্ষেত্রে একটি গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণের সৃষ্টি হবে। নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে যা এক ধরনের গণতান্ত্রিক ভিত্তি দেবে। কোনো কারণে সরকার যদি না করে তাহলে পেশাজীবী নাগরিক সম্প্রদায়ের এগিয়ে আসতে হবে। তাই শ্বেতপত্র তৈরি করা জরুরি। শ্বেতপত্র তৈরি করতে হলে অবশ্যই সরকারকে একটি কাঠামো দিতে হবে। কাঠামোর সঙ্গে সরকারের আর্থিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে যুক্ত করতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠান অবস্থানপত্র তৈরি করবে। যেমন- ইতিমধ্যে দায়দেনা পরিস্থিতি নিয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অবস্থানপত্র রয়েছে। একইভাবে গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও সংস্থার অবস্থানপত্র লাগবে। পাশাপাশি অংশীজনের মতামত নিতে হবে। এখানে বেসরকারি খাত, বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং উন্নয়ন সহযোগীদের আনতে হবে। ব্যক্তি খাতের বড় ও মাঝারিদের পাশাপাশি ছোট উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মতামত নিতে হবে। শ্বেতপত্র তৈরিতে এক মাসের বেশি সময় নেওয়া উচিত হবে না। অনেক কিছুই নির্ভর করবে সরকারের মেয়াদকালের ওপর। মেয়াদকাল যাই হোক না কেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে একটি ডাটা কমিশন করতে পারে। তথ্য-উপাত্তের ক্ষেত্রে যেসব ব্যত্যয় হয়েছে এবং ঘাটতি আছে বা যে ক্ষেত্রে নতুন প্রয়োজন দেখা দিয়েছে- সেই জায়গাটা পরিষ্কার করবে। তথ্যের উৎপাদক, ব্যবহারকারী এবং মূল্যায়নকারী- এই তিন পক্ষকে এর সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। সরকারি তথ্য-উপাত্ত সুরক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তথ্য-উপাত্ত প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। পাশাপাশি সাংবিধানিক সুরক্ষা দিতে হবে। ব্যাংকিং এবং জ্বালানি- এ দু'টি খাত অর্থনীতির ফুসফুসের মতো কাজ করে। ব্যাংকিং কমিশন তৈরি করা দরকার। কিন্তু এর পরিধি কী হবে- তা সরকারের সময়কাল ও সামর্থ্যের ওপর নির্ভর করবে। যে সময় পর্যন্ত সরকার থাকবে, তার মধ্যে ব্যাংকিং খাতের রোগ নির্ণয় করার সময় পাবে নাকি পথ্য দেওয়া ও চিকিৎসা করার সময় পাবে এবং ফলাফল পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে পারবে- তা আমরা জানি না। কিন্তু একটি কমিশন হওয়া উচিত। ব্যাংকিং খাতে তথ্য-উপাত্তের সঠিকতা যাচাই করা হবে এর প্রথম কাজ। খেলাপি ঋণের প্রকৃত পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে বড় কাজ। প্রভিশন ঘাটতি ও মূলধন পর্যাপ্ততার মতো বিষয়গুলোকে স্বচ্ছতার সঙ্গে যাচাই করতে হবে। ব্যাংক কোম্পানি আইনে মালিকদের প্রতিনিধিত্ব এবং সময়কাল পর্যালোচনা করে বর্তমানের শিথিল অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য আমানতকারীদের স্বার্থ বিঘ্নিত না করে একটি বাস্তবসম্মত 'এক্সিট পলিসি' করতে হবে। ঋণ অবলোপনের নিয়ম পর্যালোচনা করতে হবে। ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ হতে হবে স্বচ্ছতা ও পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে। যেসব শক্তিশালী শিল্পগোষ্ঠী বা রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যে সুবিধাপ্রাপ্ত গোষ্ঠী ব্যাংকের মালিকানায় রয়েছে, তাদের মালিকানার প্রশ্নটি স্বচ্ছতার সঙ্গে সুরাহা করতে হবে। এটি খুবই জটিল রাজনৈতিক ও অর্থনীতির বিষয়। করপোরেট সুশাসনে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে- যার সঙ্গে মালিকানা ও ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত। সরকারি ব্যাংক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে দিতে হবে। অভিজ্ঞ, বিজ্ঞ ও পেশাদারদের সমন্বয়ে একটা 'বস্নু রিবন' কমিটি করা যেতে পারে, যারা ব্যাংকে পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী নিয়োগের সুপারিশ অনুমোদন দেবে। ব্যাংকের পাশাপাশি এ ধরনের কমিটি দুদক, নির্বাচন কমিশন ও মানবাধিকার কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে হতে পারে। এতে করে রাজনৈতিক অনুগ্রহে নিয়োগের চর্চা বন্ধ হবে। জ্বালানি খাতের জন্য একটা টাস্কফোর্স করতে হবে। ২৩ থেকে ২৪ হাজার মেগাওয়াটের সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও ১২ থেকে ১৩ হাজার মেগাওয়াট কেন উৎপাদন করতে হচ্ছে এবং একই সঙ্গে আমদানি করতে হচ্ছে- টাস্কফোর্স তার ওপর প্রাথমিক একটা প্রতিবেদন দিতে পারে। রেন্টাল, কুইক রেন্টাল ও দায়মুক্তির বিষয়গুলোও সেখানে আসবে। রেজাউল করিম খোকন :অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংকার ; কলাম লেখক