সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে হবে
প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশের চেয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এটি আমরা অবশ্যই দাবি করতে পারি। আমাদের আশপাশের দেশগুলোর দিকে তাকালে এর প্রমাণ মিলে। বাংলাদেশ ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি উজ্জ্বল নজির, যেখানে সব ধর্মের লোক যুগ যুগ ধরে শান্তিতে বসবাস করে আসছে। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে প্রশংসিত। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-সম্প্রদায় নির্বিশেষে বাংলাদেশে চমৎকার একটা পরিবেশ বিরাজ করছে বহু বছর ধরে। সবার মাঝে গড়ে উঠেছে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন। ধর্ম-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবাই দেশের স্বাধীনতার জন্য '৭১-এ স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, ঢেলে দিয়েছিল বুকের তাজা রক্ত। মুসলমানরা বিপদে হিন্দুদের আশ্রয় দিয়েছে, প্রাণ বাঁচিয়েছে। এ দেশে ঈদ পূজা পাশাপাশি পালিত হয়। এই দুই উৎসব এখন সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। বিদেশ থেকে যারাই এসেছেন তারা আমাদের এই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রশংসা করেছেন। এমন নজির পৃথিবীতে বিরল।
আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, ছাত্র-জনতার অভু্যত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর বহু হামলার ঘটনা ঘটেছে। কোথাও বাড়িঘরে, কোথাও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে, কোথাও উপাসনালয়ে হামলা-ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। হামলা শুরু হয় মূলত গত ৫ আগস্ট বিকাল থেকে। প্রথম দুই দিন হামলার ঘটনা বেশি ঘটে। সারাদেশে ৫ থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত হামলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তত ১ হাজার ৬৮টি ঘরবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর বাইরে হামলা হয়েছে ২২টি উপাসনালয়ে। সবচেয়ে বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগে। বিভাগটিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অন্তত ২৯৫টি বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। রংপুর বিভাগে ২১৯টি, ময়মনসিংহে ১৮৩টি, রাজশাহীতে ১৫৫টি, ঢাকায় ৭৮টি, বরিশালে ৬৮টি, চট্টগ্রামে ৪৫টি এবং সিলেটে ২৫টি বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। হামলা ভাঙচুর হয়েছে মাজারেও।
আমরা আশা করছি, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি রক্ষা ও দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। কোনোভাবেই কোনো ব্যক্তি বা বিশেষ গোষ্ঠীর দ্বারা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে দেয়া যাবে না। আমাদের এটা মনে রাখতে হবে একটি বিশেষ মহল অপতৎপরতায় লিপ্ত রয়েছে। তারা সুযোগ পেলেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তাদের সফল হতে দেয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে সম্প্রীতি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধের বিকল্প নেই। দেশে সম্প্রীতি রক্ষা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সর্ব ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখা অত্যন্ত কঠিন কাজ। এই কঠিন কাজটিই নতুন সরকারকে করতে হবে।
মনে রাখতে হবে, যারা আমাদের ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে চাচ্ছে তারা দেশ, জাতি ও সব ধর্মের শত্রম্ন। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে এদের মোকাবিলা করতে হবে। এ জন্য সবার মধ্যে দেশপ্রেমকে জাগ্রত করতে হবে। অর্জন করতে হবে উদার মানসিকতা ও সংস্কৃতি। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ হিসেবে বহু বছর ধরে প্রশংসিত হয়ে আসছে আন্তর্জাতিক বিশ্বে। সুতরাং, দেশের ভাবমূর্তি আমাদেরই রক্ষা করতে হবে এবং এর কোনো বিকল্প নেই।