জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ যথাযথ বাস্তবায়ন হোক
প্রকাশ | ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বুধবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, প্রধান উপদেষ্টা সময়োপযোগী বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। আমরা মনে করি, দেশবাসীর প্রতি তার ভাষণের গুরুত্ব এবং তাৎপর্য আমলে নেওয়া যেমন জরুরি, তেমনি তিনি যে বিষয়গুলো আলোকপাত করেছেন সেগুলোকে বিবেচনায় রেখে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। অন্যদিকে, জনসাধারণকেও সচেতন হতে হবে।
যখন দেশে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটছে, তখন এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীর প্রতি আইন নিজেদের হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন- যেটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা মনে করি, এ ব্যাপারে জনগণকে সচেতন হওয়াও আবশ্যক। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। মূলত দেশের বিভিন্ন জায়গায় দল বেঁধে হামলা ও ভাঙচুরের কিছু ঘটনা নিয়ে আলোচনার মধ্যে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। ফলে, কেউ যেন আইন নিজের হাতে তুলে না নেয় সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে এবং অপরাধীকে আইনেরও আওতায় আনতে হবে, আর এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়।
আমলে নেওয়া দরকার, দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, 'আপনাদের, আমাদের সন্তানদের জন্য একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রূপরেখা তৈরি করতে আমরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আর যেন আমাদের কোনো স্বৈরাচারের হাতে পড়তে না হয়, যাতে বলতে পারি আমরা একটি গণতান্ত্রিক দেশে বসবাস করি, আমরা যাতে সবাই দাবি করতে পারি যে এই দেশটি আমাদের- আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি।' একইসঙ্গে তিনি উলেস্নখ করেছেন যে, 'আমরা একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। ধর্মীয় সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এমন কোনো কাজ কেউ কোনোভাবেই করবেন না।' সঙ্গত কারণেই আমরা বলতে চাই, প্রধান উপদেষ্টা যেসব বিষয় তুলে ধরেছেন তার গুরুত্ব অনুধাবন করতে হবে এবং দেশকে সুন্দরভাবে এগিয়ে নিতে সবার সহযোগিতা করতে হবে।
মাঠ প্রশাসনকে জনবান্ধব, দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিমূলকভাবে গড়ে তোলার জন্য সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এছাড়া, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা সংস্কারে ছয় 'বিশিষ্ট নাগরিক'কে দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, 'সংস্কার করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে আমরা প্রাথমিকভাবে ছয়টি কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এসব কমিশনের কাজ পরিচালনার জন্য বিষয়ভিত্তিক অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে ছয়জন বিশিষ্ট নাগরিককে এই কমিশনগুলো পরিচালনা করার দায়িত্ব দিয়েছি। এরপর আরও বিভিন্ন বিষয়ে কমিশন গঠন প্রক্রিয়া আমরা অব্যাহত রাখব।' নির্বাচন ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রশাসন, বিচার প্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এই চারটি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার করা সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য অপরিহার্য- এ বিষয়েও তিনি আলোকপাত করেন। এসব প্রতিষ্ঠানের সংস্কার জনমালিকানা ভিত্তিক, জবাবদিহিমূলক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায়ও অবদান রাখবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন জানিয়ে বলেছেন, এর পাশাপাশি সমাজের সর্বস্তরের মানুষের প্রতিনিধিত্ব ও স্বার্থ নিশ্চিত করার জন্য এবং জুলাই গণ-অভু্যত্থানের বার্তাকে প্রতিফলিত করার জন্য সাংবিধানিক সংস্কারের প্রয়োজন অনুভব করার বিষয়টিও উলেস্নখ করেছেন। আমরা মনে করি, সার্বিকভাবে যে বিষয়গুলো তিনি তুলে ধরেছেন তার যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের কাজ করতে হবে।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, অর্থনীতির চাকা সচলে কারখানা খোলা রাখার আহ্বান জানানো, সংবাদমাধ্যম ও মতপ্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা তুলে ধরে সবাইকে মন খুলে সমালোচনা করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। এছাড়া দায়িত্ব গ্রহণের এক মাসে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ১৯৮টি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছেন। গণ-অভু্যত্থানে সব শহীদের পরিবারকে পুনর্বাসন করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। আমরা মনে করি, প্রধান উপদেষ্টা যে সময়োপযোগী ভাষণ দিয়েছেন এবং নানা বিষয়ে আলোকপাত করেছেন তার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। মাঠ প্রশাসনকে জনবান্ধব, দুর্নীতিমুক্ত ও জবাবদিহিমূলকভাবে গড়ে তোলাসহ যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তার যথাযথ বাস্তবায়ন হবে এমনটি আমাদের প্রত্যাশা।