বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয় দ্রম্নত কার্যকর উদ্যোগ নিন
প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০
অনলাইন ডেস্ক
বন্যায় দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ১১ জেলায় ২ হাজার ৭৯৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো, আসবাবপত্র ও বইপুস্তক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের সংস্কার কার্যক্রমের জন্য প্রাথমিকভাবে প্রয়োজন প্রায় ৩৩ কোটি টাকা। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে এ বাজেট সমন্বয় করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে নোয়াখালীর ৭৬৩টি, লক্ষ্ণীপুরের ৫০১, ফেনীর ৫৫০, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ২২, কুমিলস্নার ৫২৩, চাঁদপুরের ১৬৯, চট্টগ্রামের ১৬৪, মৌলভীবাজারের ৭৭, সিলেটের ৮ ও হবিগঞ্জের ২২টি। খাগড়াছড়িতে কোনো বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। এগুলো ছাড়াও জেলাভিত্তিক আউট অব স্কুল চিলড্রেন শিক্ষা কার্যক্রমের শিখন কেন্দ্রসমূহের নোয়াখালী, কুমিলস্না, ফেনী ও লক্ষ্ণীপুর জেলার ১৮টি উপজেলার ৯৪৬টি শিখন কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গত মঙ্গলবার ১০ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে 'সাম্প্রতিক বন্যায় প্রাথমিক শিক্ষা সেক্টরে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং করণীয়' সংক্রান্ত সভায় এসব তথ্য জানানো হয়।
এ ছাড়াও ফেনী, চট্টগ্রাম, কুমিলস্না ও মৌলভীবাজারের ১ হাজার ৩২১টি বিদ্যালয়ের ১ লাখ ১৫ হাজার ৮২৩টি পাঠ্যপুস্তক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ২৮ হাজার ৭৩৬টি পাঠ্যপুস্তক সমন্বয় করা হয়েছে। বাকিগুলোর সমন্বয়ের কাজ চলমান। হবিগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, চাঁদপুর, লক্ষ্ণীপুর, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, জেলায় বন্যায় কোনো পাঠ্যপুস্তক ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। আসবাবপত্রসহ অন্যান্য দ্রব্যাদি এবং বইপুস্তকের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, উপজেলা প্রকৌশলী, শিক্ষা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, শিক্ষা কর্মকর্তারা সমন্বয়ের মাধ্যমে সঠিকভাবে নিরূপণ করবে।
মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার পরিধি ব্যাপক। এ স্তরের শিক্ষার গুরুত্ব এমন পর্যায়ে যে গুণগত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে দেশের নানা খাতে দ্রম্নত প্রত্যাশিত পরিবর্তন আনা সম্ভব। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা প্রয়োজনানুযায়ী পর্যাপ্ত গুরুত্ব পাচ্ছে কি? আমাদের বিদ্যালয়গুলোয় দিনের পড়া দিনে শেষ করে দেয়া হয় না এবং শিক্ষার্থীদের বাড়ি, গৃহশিক্ষক ও কোচিংয়ের ওপর নির্ভরশীল করে তোলা হয়। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কতটুকু সময় ধরে বিদ্যালয়ে রাখা প্রয়োজন, তা নিয়ে চিন্তাভাবনার অবকাশ রয়েছে। তবে যদি এমন হয় যে, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার যাবতীয় আয়োজন বিদ্যালয়েই শেষ করা হবে, এমন ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের, ক্ষেত্রে অবশ্য অন্যভাবে ভাবতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষার বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সত্যটুকু আমাদের উপলব্ধি করা প্রয়োজন। সার্বিক দিক বিবেচনায় প্রাথমিক শিক্ষাকে তাই যতটুকু গুরুত্ব দেয়া উচিত, সেটি যত দ্রম্নত সম্ভব নিশ্চিত করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষা স্তরে রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান এবং এ খাতে বরাদ্দ সর্বোচ্চ করার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষার ব্যাপক প্রসার ঘটানো সম্ভব। কোশলমতি শিক্ষার্থীদের মূল ভিত্তি তৈরি হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, সেটি মাধ্যমিক পর্যায়ে প্রায় স্থায়ী হয়ে যায়। সুতরাং, প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে তৈরি হয়ে এলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা পর্যায়ে সেটি পরিপূর্ণভাবে বিকাশের সুযোগ মেলে। কেবল স্কুল মেরামত বা সংস্কার নয়, অন্তর্বর্তী সরকার এ ক্ষেত্রে মনোযোগী হলে দীর্ঘমেয়াদি ও ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।