সীমান্তে রোহিঙ্গা ঢেউ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জরুরি

প্রকাশ | ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে রোহিঙ্গারা- এমন খবর জানা গেলে সেটি কতটা উদ্বেগের বলার অপেক্ষা রাখে না। কেননা, এমনিতেই বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। এরপর প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এমতাবস্থায় আবার যদি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বৃদ্ধির ঘটনা ঘটে তবে তা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, দেশে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা বাড়ছে। উদ্বেগের বিষয় হলো, এক শ্রেণির রোহিঙ্গা দালালের মাধ্যমে নৌকাযোগে নাফ নদী পাড়ি দিয়ে টেকনাফে আসছেন রোহিঙ্গারা। আশ্রয় নিচ্ছেন বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে। এ ছাড়া বাসাভাড়া করেও থাকছেন কেউ কেউ। আমলে নেওয়া জরুরি যে, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিচ্ছিন্নভাবে ১০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কথা বলা হলেও জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়দের ধারণা- মঙ্গলবার পর্যন্ত এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি- যা খবরে উঠে এসেছে। অন্যদিকে, মংডু সীমান্তে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আছেন আরও ৬০ থেকে ৭০ হাজার রোহিঙ্গা এমনটিও জানা যাচ্ছে। সঙ্গত কারণেই যখন সীমান্তে বিজিবি ও কোস্ট গার্ডের সতর্ক পাহারা এড়িয়ে নতুন করে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশের ঘটনায় স্থানীয়দের মাঝে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে; তখন পরিস্থিতি কতটা আশঙ্কাজনক সেটি আমলে নেওয়া এবং সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। আমরা বলতে চাই, যখন এটা সামনে আসছে যে, ছয় মাস ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত চলছে। আর এখন সংঘাত সবচেয়ে তীব্র আকার ধারণ করেছে, তখন সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে, কিন্তু এই চাপ কতদিন সইবে? এমন প্রশ্ন বারবার সামনে এসেছে। অন্যদিকে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে, এরই মধ্যে আবার যখন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বৃদ্ধির বিষয়টি সামনে আসছে, তখন তা কতটা উৎকণ্ঠার সেটি এড়ানোর সুযোগ নেই। উলেস্নখ্য, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরকে কেন্দ্র করে দেশটির সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মির মধ্যে তীব্র লড়াইয়ের মধ্যে রোহিঙ্গাদের অনেকেই দালালদের মাধ্যমে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন বা চেষ্টায় আছেন বলে জানা যাচ্ছে। উখিয়া ও টেকনাফের স্থল ও নৌপথে সীমান্তের অন্তত ৩০টি পয়েন্ট দিয়ে এসব রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটছে বলেও খবরে উঠে এসেছে। সঙ্গত কারণেই সৃষ্ট পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগের এটা যেমন এড়ানো যাবে না, তেমনি পরিস্থিতি আমলে নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিশ্চিত করা জরুরি বলেই প্রতীয়মান হয়। আমরা বলতে চাই, যখন এটাও সামনে এসেছে যে, বিজিবি ও কোস্ট গার্ড বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এরই মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন। বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার জন্য রাখাইন রাজ্যের বিভিন্ন পয়েন্টে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা জড়ো হয়েছেন। আর রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য সহযোগিতা করছেন স্থানীয় ও রোহিঙ্গা দালালরা- তখন এটি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক হওয়া এবং কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের ৩০টি পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গারা কৌশলে অনুপ্রবেশ করছে আর এ কাজে দালালরা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে জনপ্রতি পাঁচ থেকে আট হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে তাদের এপারে আসতে সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে- ফলে, এই অভিযোগ আমলে নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বৃদ্ধির ঘটনা গুরুত্বসহকারে আমলে নিতে হবে। এর আগে এটাও জানা গিয়েছিল যে, রাখাইন রাজ্যে অস্থিতিশীলতার কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে- সেটিও এড়ানো যাবে না। ফলে, সামগ্রিকভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে যেমন উদ্যোগ জারি রাখতে হবে, তেমনি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল করতেও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। আর এই সংকটের সমাধান নিহিত রয়েছে মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের ওপর। কিন্তু এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইসু্যর কোনো গ্রহণযোগ্য বা দৃশ্যত সমাধান হয়নি- যা উদ্বেগের। ফলে, মিয়ানমারের অশান্ত পরিস্থিতি বা যে কোনো কারণেই হোক না কেন, আবার যখন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা সামনে আসছে, তখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি।