ভারতের সীমান্তে কাঁটাতারে ঝুলে থাকা ফেলানী খাতুনের লাশের সেই দৃশ্যের কথা মনে আছে নিশ্চয়। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ-এর গুলিতে বাংলাদেশের ফেলানীর লাশের দৃশ্য এখনো ভেসে বেড়ায় সোশ্যাল মিডিয়াসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমের পাতায় পাতায়। বাংলাদেশ-ভারতের সীমান্তকে যেভাবে জটিল ও কূটনৈতিক করে তোলা হয়েছে তাতে দুই প্রতিবেশী দেশ হিসেবে সহাবস্থান যেন অনেকটাই বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে।
কেবল ফেলানীর লাশই নয়, সেই ধারাবাহিকতায় আরও অসংখ্য মানুষের লাশ দেখেছে বাংলাদেশ। ২০১১ সালে ফেলানী খাতুন থেকে শুরু করে আজকের স্বর্ণা দাস পর্যন্ত সীমান্ত হত্যার সবটাই যেন আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের সুস্পষ্ট নজির। কিন্তু সবচেয়ে বেশি সীমানা ভাগ করা ভারত-বাংলাদেশ যখন বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত, তখন কেন চলছে এমন হত্যাকান্ড? কবে নাগাদ শেষ হবে, দুই দেশের এসব কূটনৈতিক জটিলতা?
বিশ্বের যেক'টি দেশ সবচেয়ে বেশি সীমানা ভাগাভাগি করে তার মধ্যে ভারত এবং বাংলাদেশ অন্যতম। প্রায় ৪১০০ কি.মি. সীমান্ত এলাকা নিয়ে বড় ধরনের সংকট আছে দু'দেশের। আন্তঃনদনদীসহ নানা বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে দুই দেশের। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে অনুপ্রবেশ, সীমান্তে চোরাচালানসহ নানা অবৈধ কাজে জড়িত দুই দেশের সীমান্তের মানুষ। ফলে, এসব চোরাচালান এবং অনুপ্রবেশ ঠেকাতে শুরু থেকেই কঠোর অবস্থানে ভারত।
বিশেষ করে সীমান্তে অবৈধ চোরাচালান এবং অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নির্দেশনা দেয়া আছে খোদ কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে। যেসব আলোচনা শুধু কূটনৈতিকভাবে টেবিলেই সমাধান করা যেত, সেসব দৃশ্যমান হচ্ছে সীমান্তে। ফলে, প্রশ্ন উঠছে, ভারতের সঙ্গে এত দহরম-মহরম সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও কেন সীমান্ত হত্যাকে বৈধতা দিচ্ছে দিলিস্ন প্রশাসন? পাশাপাশি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে কীভাবে দেখা হচ্ছে এসব হত্যাকান্ডকে? তা-ও এখন আলোচ্য বিষয় বটে।
সম্প্রতি ফেলানীর মতোই বাংলাদেশের আরেক কিশোরীকে সীমান্তে গুলি করে হত্যা করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। গত ১ সেপ্টেম্বর রাতে মায়ের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরায় থাকা ভাইকে দেখতে যাওয়ার সময় মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় ১৪ বছর বয়সি কিশোরী স্বর্ণা দাস। নিহত স্বর্ণা দাস মৌলভীবাজার জেলার জুড়ি উপজেলার পশ্চিম জুড়ি ইউনিয়নের কালনীগড় গ্রামের বাসিন্দা। পরেন্দ্র দাসের মেয়ে স্বর্ণা দাস। স্থানীয় নিরোদ বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণিতে পড়তো স্বর্ণা। মেয়েটার একটা ছবি পত্রিকাতে এসেছে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দেয়া। স্বর্ণার স্কুলের টিচার জানিয়েছেন, স্বর্ণা খুব ভালো ছাত্রী ছিল। খেলাধুলা আর ছবি আঁকাতেও সে খুব ভালো ছিল।
জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে কিছু লিখলে আপনার মন খারাপ হয়। কারণ এই গানে 'মা তোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়ন জলে ভাসি' লাইনটা আপনার প্রিয়।
এদিকে আপনার দেশের ১৪ বছরের একটা কিশোরী মেয়েকে ভারতীয় বিএসএফ গুলি করে হত্যা করেছে। লাশ নিয়ে গেছে। এর চেয়ে মলিন বদন একটা দেশের জন্য আর কিছু পারে? কিন্তু আপনার-আমার চোখে অশ্রম্নটা কই? নাকি আমাদের অশ্রম্ন এতটাই দামি যে, গ্রামের এক সাধারণ কিশোরী স্বর্ণা দাসের জন্য চোখের দুফোঁটা অশ্রম্ন খরচ করা যায় না?
দেশের প্রথম সারির জাতীয় গণমাধ্যম দৈনিক প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে ওঠে আসে, ১ সেপ্টেম্বর রাতে স্বর্ণা ও তার মা সঞ্চিতা রাণী দাস ত্রিপুরায় বসবাসরত স্বর্ণার ভাইকে দেখতে স্থানীয় দুই দালালের সহযোগিতায় লালারচক সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তাদের সঙ্গে আরও ছিলেন চট্টগ্রামের এক দম্পতি। রাত ৯টার দিকে তারা ভারতীয় সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে গেলে নির্বিচারে গুলি চালায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ সদস্যরা। এতে ঘটনাস্থলেই স্বর্ণা নিহত হয় এবং সঙ্গে থাকা দম্পতি আহত হয়।
এদিকে ১৫ বছর বয়সি কিশোরী ফেলানী খাতুনকে হত্যা করা হয় ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি ভোরে। আর ১৪ বছর বয়সি কিশোরী স্বর্ণা দাসকে হত্যা করা হয় এই ঘটনার ১৩ বছরের বেশি সময় পর। ২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাতে। ফেলানী কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্ত দিয়ে তার বাবার সঙ্গে ভারত থেকে বাংলাদেশে ফিরছিলেন। আর স্বর্ণা দাস মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া সীমান্ত দিয়ে তার মায়ের সঙ্গে ভারতের ত্রিপুরায় অভিবাসী ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। ফেলানী হত্যাকান্ডের পর তার লাশ দীর্ঘ সময় ঝুলে ছিল কাঁটাতারের বেড়ায়। কাঁটাতারে ঝুলে থাকা কিশোরী ফেলানী খাতুনের লাশ প্রবল আলোড়ন তুলেছিল দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে।
কিন্তু এরকম আলোড়নের পরেও শাস্তি হয়নি ফেলানীকে হত্যাকারী ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ সদস্যের। বিএসএফ-এর আদালত তাকে বেকসুর খালাস দেন। এরপর মামলা ভারতের সুপ্রিম কোর্টে গড়ালেও ফেলানী হত্যার বিচার হয়নি আজও। বিচার না পেয়ে ক্ষুব্ধ ও হতাশ ফেলানীর মা জাহানারা বেগম। ফেলানীর মা বলেছিলেন, এমনভাবে কেউ যেন তার সন্তান না হারায়। সীমান্তে একটি পাখিও যেন বিএসএফ-এর হাতে মারা না যায়। ?
কিন্তু ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ পাখির মতো গুলি করে সীমান্তে মানুষ হত্যা বন্ধ করেনি। কেবল কিশোরী ফেলানী বা স্বর্ণা নয়, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী নিয়মিত বাংলাদেশের মানুষকে সীমান্তে প্রকাশ্য গুলি করে বা নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করছে। দুই বৈরী প্রতিবেশী দেশের সীমান্তে গোলাগুলি কিংবা হত্যাকান্ডের ঘটনা বিরল নয়। কিন্তু পরস্পরকে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধু দাবি করে আসছে। এরকম দুই দেশের সীমান্তে একটি দেশ কর্তৃক নিয়মিত অন্য দেশের নাগরিককে গুলি করে হত্যার ঘটনা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে দাবি করা হয়।
চলতি বছরে ৯ এপ্রিল বেসরকারি টেলিভিশন ডিবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে ওঠে আসে, কোনো কারণ ছাড়াই সীমান্তে প্রবেশ করে দুই রাখালকে ভারতীয় বিএসএফের গুলি। এমন হৃদয়বিদারক শিরোনাম পড়তে কখনোই প্রস্তুত ছিলাম না। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তৎকালীন ফ্যাসিস্ট হাসিনা ব্যর্থতা অস্বীকারের দায় কোনোভাবে এড়াতে পারে না। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনায় তৎকালীন স্বৈরশাসক খুনি হাসিনা সরকারের নীরবতা নিঃসন্দেহে ধিক্কারজনক।
এছাড়া, মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) -এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২৩ সালে বাংলাদেশি সীমান্তে বিএসএফ-এর গুলিতে বা নির্যাতনে নিহত হয়েছেন ৩১ জন। এর আগে ২০২১-২২ সালে সীমান্তে নিহতের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ১৮ ও ২৩ জনের। আসকের হিসাবে এর আগেও ২০০৯-২০২০ সালে এই ১১ বছরে বিএসএফ-এর গুলিতে বা সীমান্ত হত্যা প্রসঙ্গে উঠলেই আত্মরক্ষার জন্য বাধ্য হয়ে গুলি চালানোর অজুহাত দাঁড় করায় ভারতীয় বিএসএফ। যেমন- ২০২২ সালের জুলাই মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সম্মেলন শেষে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতীয় বিএসএফ মহাপরিচালক পঙ্কজ কুমার সিং বিএসএফ -এর গুলিতে নিহত সব বাংলাদেশিকে অপরাধী বলে সাব্যস্ত করেছিলেন। যেন সাক্ষী-সাবুদ বিচার-আচার ছাড়াই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী চাইলেই ভিনদেশি কোনো নাগরিককে অপরাধী হিসেবে সীল মেরে দিতে পারে এবং তারপর সেই কথিত অপরাধীকে বিনা বিচারে হত্যা করবার অধিকার রাখে।
এ বিষয়ে ভিন্ন একটি তথ্য দিয়েছে ভারতের মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সচিব কিরীটী। তার বক্তব্যে তিনি সঠিকভাবে উলেস্নখ করেছেন, তার মতে এই সীমান্ত হত্যার পেছনে যে গল্প ফাঁদা হয় তা-ও ঠিক না। তারা বলে, সীমান্ত দিয়ে গরু চোরাচালান হয় এবং চোরাচালানিদের হত্যা করা হয়। মনে হয় যেন সীমান্তে গরু জন্ম নেয়। আর তা বাংলাদেশে পাচার করা হয়।
বাস্তবে সব গরু আনা হয় ভারতের অভ্যন্তরে দু-আড়াই হাজার কিমি দূরের হারিয়ানা ও পাঞ্জাব থেকে। গরুগুলো হাঁটিয়ে ট্রাক বা ট্রেনে করে আনা হয়। তখন কেউ দেখে না। তারা আটকায় না। কারণ তারা ভাতা পায়। এখানে আসল কথা হলো দুর্নীতি। ভাগবাটোয়ারার মাধ্যমেই সব করা হয়। যখন ভাগবাটোয়ারায় মেলে না তখন বিএসএফ হত্যা করে। এই প্রসঙ্গে বাংলাদেশকে চাপে রাখতে সীমান্ত হত্যা শিরোনামে ২৯ ডিসেম্বর, ২০২২ সালে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে।
ভারতের পেনাল কোর্ট কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো আইনে নিরস্ত্র নাগরিককে নির্যাতন করে বা গুলি করে হত্যা করার বিধান নেই। কেউ অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপার করলে তাকে গ্রেপ্তার করে বিচার করা যেতে পারে। কিন্তু ভারত সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে স্বীকৃত সব আন্তর্জাতিক ও দ্বিপক্ষীয় প্রটোকল অগ্রাহ্য করে সীমান্তে হত্যাকান্ড ঘটিয়ে চলেছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সাক্ষরিত এরকম দ্বিপক্ষীয় দুটি প্রটোকল হলো- ক) জয়েন্ট ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ গাইডলাইনস্ ফর বর্ডার অথোরিটিস্ অব দ্য টু কান্ট্রিস, ১৯৭৫ ও খ) দ্য ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ কো-অর্ডিনেটেড বর্ডার ম্যানেজমেন্ট পস্ন্যান, ২০১১।
জয়েন্ট ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ গাইডলাইনস্ ফর বর্ডার অথোরিটিস্ অব দ্য টু কান্ট্রিস -এর ধারা ৮(আই) অনুসারে, এক দেশের নাগরিক যদি বেআইনি ভাবে অন্য দেশে প্রবেশ করার চেষ্টা করে বা কোনো অপরাধে লিপ্ত হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী আত্মরক্ষায় যে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে। তবে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার না করাটাই বাঞ্ছনীয়। এছাড়া, আর্টিকেল ৮(এম) অনুসারে, সীমান্ত দিয়ে যদি গরু পাচার করা হয় তাহলে গরু ও গরু পাচারকারীদের সম্পর্কে তথ্য অপরপক্ষের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করতে হবে এবং নিকটস্থ থানা পুলিশের কাছে মামলা করে গরু উদ্ধারে পদক্ষেপ নিতে হবে। বাস্তবে দেখা যায়, ভারতীয় বিএসএফ এই প্রটোকলে উলেস্নখিত নিয়মকানুন না মেনে সন্দেহভাজনদের উপর সরাসরি গুলি চালায়। এমনকি বিএসএফ-এর আত্মরক্ষার অজুহাতগুলোও গ্রহণযোগ্য নয়।
কাঁটাতারে কাপড় আটকে যাওয়া এক নিরস্ত্র কিশোরী ফেলানী কিংবা মায়ের হাত ধরে সীমান্ত পাড়ি দিতে চাওয়া কিশোরী স্বর্ণা দাস কি করে অস্ত্রধারী বিএসএফ-এর জন্য হুমকি হতে পারে? এমন প্রশ্নগুলো দিনে দিনে ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে ভারত সরকারের একরোখা রাজনৈতিক আচরণে।
এর আগে, চলতি বছরের শুরুতে ২৮ জানুয়ারি ভোরে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা দহগ্রাম আঙ্গরপোতা সীমান্তে বিএসএফ-এর গুলিতে নিহত হয় বাংলাদেশি তরুণ রবিউল ইসলাম। ভারতীয় মানবাধিকার সংস্থা বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের মার্চ ২০২৪-এর মাসিক প্রতিবেদন অনুসারে বিএসএফ যখন রবিউলকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় তখন তার মাথায় ছিল একটি ৫০ কেজি ওজনের চিনির বস্তা। ৫০ কেজি ওজনের চিনির বস্তা মাথায় নিয়ে আর যা-ই হোক রবিউল যে বিএসএফ-এর জন্য কোনো হুমকি ছিল না, তা স্পষ্ট। এমন ব্যক্তিদের মোকাবিলায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী নিয়মিত প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার করে। যার জন্য ভারত সরকার তাদের দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তি নিশ্চিত করেছে এমন কোনো দৃষ্টান্ত নেই।
এসব ঘটনা থেকে স্পষ্ট যে, যত বন্ধুত্বের কথাই বলা হোক সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় ভারতের আচরণ বরাবরই আগ্রাসী প্রতিবেশীর। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশের সীমান্তে আধিপত্যবাদী আচরণ করা ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী কর্তৃক বৈরী প্রতিবেশী চীন বা পাকিস্তানের নাগরিকদের ক্ষেত্রে এভাবে ধারাবাহিকভাবে নির্বিচারে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটে না। সেখানে যুদ্ধাবস্থা থাকতে পারে কিংবা বিচ্ছিন্নভাবে গোলাগুলি ও হত্যাকান্ডের ঘটনাও ঘটতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের মতো একতরফা ধারাবাহিক সীমান্ত হত্যা নেই।
ফলে বাংলাদেশের সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ ধারাবাহিক হত্যাকান্ড ঘটিয়ে চললেও বাংলাদেশের বিগত সরকারের দিক থেকে তেমন কোনো প্রতিবাদ জানানো হতো না। তাই অনাগত দিনগুলোতে রাজনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা এবং সীমান্তে হত্যাকান্ডের অবসান ঘটানোই হবে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান এক চ্যালেঞ্জ। যেহেতু ভারত এবং বাংলাদেশ একই জলবায়ু প্রাণ-প্রকৃতির অংশ, একই সাথে বসবাস করে আসছে তাই এসব সাংস্কৃতিক সংযোগকে প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি বাংলাদেশের নিজস্ব স্বার্থ রক্ষা এবং সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে ভারতের সঙ্গে নতুন এক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। তা হলে, আগামীতে আরও অসংখ্য ফেলানী কিংবা স্বর্ণার লাশ পড়ে থাকবে সীমান্তের কাঁটাতারে।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে আর কত মায়ের বুক খালি হলে পরে ভারত সরকারের এমন বেপরোয়া আচরণের চূড়ান্ত সমাপ্তি ঘটবে?
এস এম রাহমান জিকু : নবীন কলাম লেখক