মালয়েশিয়ায় ২২২ বাংলাদেশি আটক প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিন

প্রকাশ | ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

অনলাইন ডেস্ক
বাংলাদেশ জনসংখ্যাবহুল দেশ। ফলে দেশের সামগ্রিক সমৃদ্ধি অর্জনে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রূপান্তর করার বিকল্প নেই। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশিরা সুনামের সঙ্গে কাজ করছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স দেশের অগ্রগতিতে রাখছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। কিন্তু বিদেশে অবৈধভাবে কাজ করায় বাংলাদেশি আটকের ঘটনা ঘটলে তা স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগজনক বলেই প্রতীয়মান হয়। এ প্রসঙ্গে উলেস্নখ্য যে, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, মালয়েশিয়ায় এক কোম্পানির ভিসা নিয়ে অন্য কোম্পানিতে কাজ করার অভিযোগে ২২২ বাংলাদেশিসহ ২২৮ অভিবাসীকে আটক করেছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। তথ্য মতে, আটককৃতদের মধ্যে বাংলাদেশি ছাড়াও পাঁচজন চীনা ও একজন ভারতীয় নাগরিক রয়েছেন বলে স্থানীয় গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করেছে। জানা যায়, দেশটির ইমিগ্রেশন অ্যাক্ট-১৯৫৯/৬৩, ইমিগ্রেশন রেগুলেশন ১৯৬৩, পাসপোর্ট অ্যাক্ট-১৯৬৬ এবং অ্যান্টি-ট্রাফিকিং ইন পার্সন্‌স অ্যান্ড অ্যান্টি-স্মাগলিং অব পার্সন্‌স অ্যাক্ট-২০০৭ এর অধীনে মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। আমরা মনে করি, মালয়েশিয়ায় এক কোম্পানির ভিসা নিয়ে অন্য কোম্পানিতে কাজ করার অভিযোগে যখন ২২২ বাংলাদেশি আটকের ঘটনা ঘটেছে তখন এটি আমলে নিতে হবে। একইসঙ্গে এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। বিশেষ করে এটি আমলে নেওয়া দরকার, কর্মসংস্থান সংস্থা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে বিদেশিরা যাতে আরও সতর্কতা অবলম্বন এবং জালিয়াতির বিষয়টি এড়াতে পারে সেজন্য মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নিবন্ধিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার আহ্বান জানায় বিভাগটি। ফলে, এটিকে সামনে রেখে প্রয়োজনীয় সচেতনতা ও উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জন্য বৃহৎ শ্রমবাজার। ফলে, সেখানে অবৈধভাবে কাজ করার দায়ে বাংলাদেশি আটক হলে বিষয়টি উদ্বেগের। এক্ষেত্রে এই ধরনের ঘটনা কেন ঘটছে এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে কাজ করতে হবে। অন্যদিকে, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, ভাগ্য ফেরানোর আশায় অনেকেই দালালদের খপ্পরে পড়ে অবৈধপথে বিদেশ গমন করে কিংবা অবৈধভাবে বিদেশ সফর করতে গিয়ে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। ফলে, মানব পাচারের বিষয়টিও এড়ানো যাবে না। সাম্প্রতিক সময়ে এই ধরনের আশঙ্কাও উঠে এসেছে যে, নানা ধরনের উদ্যোগ ও তৎপরতা সত্ত্বেও মানব পাচার কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। এর ফলে, সমাজে এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে সাগরপথে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মানব পাচার হচ্ছে। আরও উৎকণ্ঠার বিষয় হলো- মানব পাচারের প্রধান টার্গেটে পরিণত হয়েছে দেশের সাধারণ অসহায় মানুষ। কিছুদিন আগে এ খবর সামনে এসেছে, সমুদ্রপথে ইতালি যাওয়ার সময় লিবিয়ার ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে মাদারীপুরের দুই ভাইয়ের মৃতু্য হয়েছে। প্রায় ৪ মাস আগে মৃতু্য হলেও মঙ্গলবার ৩ সেপ্টেম্বর মৃতু্যর খবর বাড়িতে পৌঁছালে শোকের মাতম ওঠে। এ ঘটনায় দালালের কঠোর শাস্তি দাবি করেন স্বজন ও এলাকাবাসী। এটাও লক্ষণীয় যে, এ দেশের সাধারণ মানুষ যারা বিদেশে যেতে চায় ভাগ্য উন্নযনের আশায়। কিন্তু দালালদের খপ্পরে পড়ে বিদেশে পাড়ি জামাতে গিয়ে নৌকাডুবিতে প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ। উন্নত জীবনের আশায় তারা সাগর পাড়ি দেওয়ার মতো ঝুঁকি নিচ্ছেন। তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে ফাঁদে ফেলছে দালালরা। ফলে, মানব পাচার রোধ করা না গেলে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা থাকে যায়- যা এড়ানো যাবে না। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, বিশ্বে নতুন নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি করে জনশক্তি রপ্তানি বাড়াতে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। দক্ষ কর্মী তৈরি করতে হবে, প্রশিক্ষণের পরিধি বাড়াতে হবে। অন্যদিকে, মানব পাচার রোধে প্রয়োজনে কঠোর হতে হবে। কেউ যেন অবৈধ পথে বিদেশ যেতে উদ্যত না হয়, কর্মসংস্থান সংস্থা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রেও যেন আরও সতর্কতা অবলম্বন এবং জালিয়াতির বিষয়টি এড়াতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মালয়েশিয়ায় এক কোম্পানির ভিসা নিয়ে অন্য কোম্পানিতে কাজ করার অভিযোগে ২২২ বাংলাদেশি আটকের ঘটনাটি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টরা কার্যকর উদ্যোগসহ যে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে তৎপর থাকবে এমনটি কাম্য।