প্রিয় স্বদেশ এখন জুলাই-আগস্ট ২০২৪ অতীত বনাম বর্তমান নিয়ে প্রবাহিত। একটি পালাবদল পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। ছাত্র-জনতা ও সেনা সমর্থিত নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্র্বতীকালীন সরকার একটি পুনর্গঠনকামী দেশ পরিচালনা করছেন। দেশ নানাভাবে সংকটাকুল! দেশের রাজনীতি, শাসনব্যবস্থা, কূটনৈতিক অবস্থান, অর্থনীতি ও বন্যা পরিস্থিতি সবই নাজুক।
এতসবের মধ্যেও আশার আলো আছে। রাজনীতি যদি দেশগড়ার মাধ্যমে জাতির মঙ্গলের জন্যে হয়,আর সরকার যদি দেশপ্রেমিক সৎ ও দক্ষ হয়,তবে ভয় কিসের।জাতীয় ঐক্য ও ঐকমত্য ভেতর বাইরের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে পারে।
জনআকাঙ্খার অনুকূলে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হলে দুর্নীতির করালগ্রাসে নিমজ্জিত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিকীকরণে সর্বসেক্টরে প্রশাসন ও পুলিশকে ঢেলে সাজাতে হবে। এ লক্ষ্যে সরকারের পদক্ষেপে অগ্রগতি আছে। বিচার বিভাগ ও ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে অব্যাহত পদক্ষেপ সুফল বয়ে আনবে। অর্থনৈতিক গতিশীলতায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি, গার্মেন্টসসহ কলকারখানার চাকা সচলকরণ জরুরি। পাচারকৃত অর্থ এবং আত্মস্মাতকৃত অর্থ সম্পদ উদ্ধারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। সেনা বিজিবি,র্ যাব, পুলিশ সমন্বিত বাহিনীর চিরুনি অভিযান চালিয়ে অবৈধ অর্থ সম্পদ ও অস্ত্র উদ্ধার অব্যাহত রাখতে হবে। মিডিয়াকে গঠনমূলক অবদান রাখতে সাহায্য করা দরকার। অসৎ অযোগ্য ও তল্পিবাহক অপেশাদারদের অপপ্রয়াস থেকে মিডিয়াকে মুক্তি না দিলে বস্তুনিষ্ঠ গণমাধ্যম চালু সম্ভব নয়।
আকস্মিক আরোপিত কৃত্রিম বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার সফল হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে নদী খালগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করা, নদী প্রবাহ বিঘ্নহীন করা এবং দেশের সার্বিক জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। তবে উজানের দেশ থেকে ভাটি বাংলাদেশের ওপর বর্ষায় জল চাপালে বন্যা পরিস্থিতি অন্তত খারাপ হবে না। বঙ্গোপসাগরের অবারিত জল ধারণ ক্ষমতার প্রমাণ আমরা প্রতিবেশীকে বুঝিয়ে দিতে পারি।এবারের আকস্মিক ভয়াবহ বন্যা জাতীয় চেতনার ঐক্য ও মানবসেবার প্রত্যয়কে সুদৃঢ় করেছে।
গণঅভু্যত্থান ও বন্যা পরিস্থিতি একটি স্থবির ও আশাহত জাতিকে জাগাতে সক্ষম হয়েছে। ১৫/১৬ বছরের পুঞ্জীভূত ক্লেদ ও আবর্জনা মুক্তির যে ঐতিহাসিক প্রেরণা; ঘুরে দাঁড়াবার যে সুপ্ত আত্মশক্তি, এ গণজাগরণ - এ রেনেসাঁ জাতি হিসেবে আমাদেরকে নিঃসন্দেহে মহীয়ান করে তুলবে। অতীত ফরাসী বিপস্নব, দক্ষিণ কোরিয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা সহ বিভিন্ন দেশের বিপস্নবের দৃষ্টান্তের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ পেয়েছে স্মরণীয় জুলাই-আগস্ট বিপস্নব ২০২৪। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি। শেখ মুজিব-জিয়াউর রহমান, এরশাদ খালেদা হাসিনা হয়ে ড. ইউনূস পর্যন্ত সোনালি ধূসর অধ্যায়পুঞ্জ। স্বাধীনতার মূলমন্ত্র মুজিব -জিয়া আর নোবেলজয়ী বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিত্ব ড. ইউনূস যেন বাংলাদেশের শুরু থেকে বর্তমানের সোনালি গল্প। ছোটগল্পের অতৃপ্তি নিয়েই আমাদের জাতির এ স্বপ্ন পথচলা। ড. ইউনূস দুর্নীতি ও বৈষম্যমুক্ত সুখসমৃদ্ধির গণতান্ত্রিক কল্যাণ রাষ্ট্র জাতিকে উপহার দিতে সক্ষম হবেন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে।
সর্বত্র সংস্কারের দাবি। ড. সলিমুলস্নাহ খানের যুগান্তর ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ সংখ্যায় প্রকাশিত সাক্ষাৎকার প্রণিধানযোগ্য। বর্তমান সরকারকে মাথার পচনরোগ দূর করার ব্যবস্থা করতে হবে। সত্যিকার মানুষ গড়ার জন্যে যে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা, তা অব্যাহত রাখতে হবে। যে জাতির জ্ঞানের ভান্ডার শুন্য, সে জাতির ধনের ভাঁড়ে ভবানী - প্রমথ চৌধুরীর এ মহাবাণী বর্তমান সরকারকে মূল্যায়ন করতে হবে। সংস্কার শুরু করুন শিক্ষা দিয়ে। জাতীয় আয়ের দুই শতাংশের নিচে শিক্ষা বাজেট রেখে জাতির সামগ্রিক উন্নতি সাধন স্বপ্নেও সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত জাতির নৈতিক ও সুস্থ সাংস্কৃতিক মান বৃদ্ধির প্রকল্প হাতে নিতে হবে। সাহিত্য সংস্কৃতি ও কুসংস্কারমুক্ত ধর্মীয় শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সুশিক্ষিত সুসংস্কৃতিবান জাতি গড়ে তুলতে হবে। উগ্র পুঁজিবাদী মানসিকতা, রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন এবং দুর্নীতি ও নিষ্ঠুরতার অবসানে সুশীল সুনাগরিক গোষ্ঠী গড়তে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতেই হবে।
সর্বস্তরে সুশৃঙ্খলা এবং আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ সাধনে শুদ্ধি বিপস্নবের সূচনা অনিবার্য।
নির্বাচন কমিশন, দূদক, জাতীয় সংসদকে আইন রচনাকারীদের সম্মানিত কেন্দ্র হিসেবে গড়তে যথাযোগ্য সাংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা ছাড়া গোষ্ঠীবদ্ধ জাতি ও রাষ্ট্র শোষণ থামানো যাবে না।
চীন ভারত ও রুশ মার্কিন দৈশিক কূটনীতি হবে ভারসাম্যপূর্ণ ও সাধারণ নিরপেক্ষ। সার্ক ও ওআইসিকে পুনরুজ্জীবিত, পুনর্গঠন ও সক্রিয় করণে ড. ইউনূস সরকার অবদান রাখতে পারে। এ জন্যে পররাষ্ট্র উইংকে আরও শক্তিশালী ও সুবিন্যস্ত করা যায়। দক্ষ অভিজ্ঞ ও দেশপ্রেমিক একাধিক সহ উপদেষ্টা যোগ করা যেতে পারে।
জাতীয় সংবিধান সংস্কার বা পুনর্লিখন এসব বিতর্ক দীর্ঘমেয়াদী বিষয়। অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারকে ২/৩ বছর সময় নিয়ে অন্তত ৬ মাসের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করার প্রস্তুতি থাকলে ভালো। বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়ও সরকারের হাতে রয়েছে। দেশে একটি রাজনৈতিক নব তৃতীয় শক্তির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। গণ আকাঙ্ক্ষার জনমুক্তির লক্ষ্য অভিসারী সত্যিকার জনসরকার জাতি আগামীতে দেখতে চায়।
গাজী গিয়াস উদ্দিন : কলাম লেখক