বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে রোহিঙ্গারা- এমন খবর জানা গেলে সেটি কতটা উদ্বেগের তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কেননা, এমনিতেই বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। এরপর প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি হয়নি। এমতাবস্থায় আবার যদি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটে তবে তা কোনোভাবেই এড়ানোর সুযোগ নেই। প্রসঙ্গত বলা দরকার, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপ এলাকায় সরকারি বাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘাত আরও তীব্র হয়েছে। তথ্য মতে, শুক্রবার রাত থেকে মংডুর বিভিন্ন এলাকা থেকে থেমে থেমে মর্টার শেল, গ্রেনেড-বোমার বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে মিয়ানমার সীমান্তবর্তী বাংলাদেশের টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায়। শনিবারও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
আমরা মনে করি, সৃষ্ট পরিস্থিতিতে যেমন টেকনাফের বাসিন্দাদের আতঙ্কের বিষয়টি আমলে নিতে হবে, তেমনি এটাও এড়ানো যাবে না যে, রাখাইনে চলমান সংঘাতের মধ্যে সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বাড়লেও রোহিঙ্গাদের অনেকেই পালিয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। সীমান্তের একাধিক সূত্র মতে, গত দুই সপ্তাহে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন প্রায় ১২ হাজার রোহিঙ্গা। অন্যদিকে, সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার চেষ্টায় রয়েছেন আরও প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা। এছাড়া জানা যায়, গত শনিবার একদিনেই বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ঢুকে পড়েছে প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গা।
আমরা বলতে চাই, যখন এটা সামনে আসছে যে, ছয় মাস ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘাত চলছে। আর এখন সংঘাত সবচেয়ে তীব্র আকার ধারণ করেছে, তখন সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে, কিন্তু এই চাপ কতদিন সইবে? এমন প্রশ্ন বারবার সামনে এসেছে। অন্যদিকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি হয়নি। ফলে এরই মধ্যে আবার যখন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়টি সামনে আসছে, তখন তা কতটা উৎকণ্ঠার সেটি এড়ানোর সুযোগ নেই।
উলেস্নখ্য, টেকনাফে আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার বলেছেন, কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ঢুকে পড়েছে। তাদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা যেন ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে আশ্রয়শিবিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। অনুপ্রবেশের সময় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নাফ নদী থেকে আবার মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে। উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জানিয়েছে, বিজিবি ও কোস্টগার্ড বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে এরই মধ্যে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে।
আমরা বলতে চাই, নতুন করে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের ঘটনা কতটা উদ্বেগের সেটি আমলে নেওয়ার পাশাপাশি সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। মিয়ানমানের ঘটনার দিকে বাংলাদেশ সংশ্লিষ্টদের নজর রাখতে হবে এবং সীমান্তে সতর্ক অবস্থান বজায় রাখাসহ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখারও বিকল্প নেই। গত দুই সপ্তাহে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছেন প্রায় ১২ হাজার রোহিঙ্গা। অন্যদিকে, সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার চেষ্টায় রয়েছেন আরও প্রায় ৫০ হাজার রোহিঙ্গা- এটিসহ সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে কার্যকর উদ্যোগ অব্যাহত রাখা অপরিহার্য বলেই প্রতীয়মান হয়।
সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা গুরুত্বসহকারে আমলে নিতে হবে। এর আগে এটাও জানা গিয়েছিল যে, রাখাইন রাজ্যে অস্থিতিশীলতার কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে- সেটিও এড়ানো যাবে না। ফলে সামগ্রিকভাবে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ সাপেক্ষে যেমন উদ্যোগ জারি রাখতে হবে, তেমনি প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সফল করতেও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। আর এই সংকটের সমাধান নিহিত রয়েছে মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবর্তনের ওপর। কিন্তু এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইসু্যর কোনো গ্রহণযোগ্য বা দৃশ্যত সমাধান হয়নি- যা উদ্বেগের। ফলে, মিয়ানমারের অশান্ত পরিস্থিতি বা যে কোনো কারণেই হোক না কেন, আবার যখন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা সামনে আসছে, তখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ অব্যাহত রাখা জরুরি।